কোন ছবি কত কম সময়ের মধ্যে কত বেশি ব্যবসা করতে পারছে সে দিকে ছবিনির্মাতা থেকে শুরু করে তারকা, দর্শক এবং ছবি বিশেষজ্ঞ-সহ আরও অনেকের নজর থাকে। তবে ছবি বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশের দাবি, বক্স অফিস থেকে উপার্জনের ক্ষেত্রে নাকি কোটি কোটি টাকার হিসাব ভুল দেখিয়ে ছবিগুলিকে সফল দেখানো হয়।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, কোভিড অতিমারির পর ছবিনির্মাতাদের মধ্যে নাকি প্রতিযোগিতার সুর আরও চড়েছে। নির্মাতাদের একাংশ ছবি মুক্তির আগে ছবির সাফল্যের মাপকাঠি নির্ধারণ করে ফেলেন। সাফল্যের সেই নম্বর ছোঁয়ার জন্য একাধিক পন্থা অবলম্বন করা হয়।
ছবি তৈরির পর ছবিনির্মাতাদের সঙ্গে ছবির পরিবেশকদের চুক্তি হয়। সেই অনুযায়ী এক্সহিবিটরদের সঙ্গে বক্স অফিসের উপার্জন নিয়েও নাকি অঙ্ক মেলানোর খেলা চলতে থাকে তাঁদের।
এক্সহিবিটরদের দায়িত্ব, নির্দিষ্ট কেন্দ্রের প্রেক্ষাগৃহে সময় নির্ধারণ করে ছবিটি চালানো। বড় মাপের এক্সহিবিটরদের সঙ্গে নাকি ছবিনির্মাতাদের একাংশ সুসম্পর্ক বজায় রাখেন নিজেদের লাভের কারণে। কারণ, প্রযোজকদের সঙ্গে চুক্তি করে ছবির ব্যবসা ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করেন এই এক্সহিবিটরেরাই।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, কোনও ছবি তেমন ব্যবসা করতে না পারলে সেখানে কারসাজি করতে শুরু করেন এক্সহিবিটরেরা। প্রেক্ষাগৃহে যে সময় সাধারণত দর্শকের ভিড় হয়, সে সময় ছাড়া খুব সকাল অথবা খুব রাতের দিকে (আর্লি মর্নিং এবং নাইট শো) শো টাইম রেখে দেন তাঁরা।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, সকাল এবং রাতের দিকে সাধারণত দর্শক সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়। সেই সময়গুলিতেও দর্শকের ভিড় প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়ছে এমনটাই দাবি করেন এক্সহিবিটরেরা। এমনকি অনলাইন মাধ্যমে হাউসফুল দেখিয়ে টিকিট বুকিং বন্ধ করে রাখার ব্যবস্থাও করে রাখেন তাঁরা।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ছবি মুক্তির পর সাধারণত প্রথম সাত থেকে দশ দিন বুকিং নিয়ে কারসাজি করেন এক্সহিবিটরেরা। বক্স অফিসের ব্যবসার গণনা নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের এই ‘কারসাজি’ করা তথ্যই দেন এক্সহিবিটরদের একাংশ। তার উপর নির্ভর করে তৈরি হয় বক্স অফিসের ‘কালেকশন রেকর্ড’।
কারচুপি করতে গিয়ে নাকি ধরাও পড়ে যান এক্সহিবিটরেরা। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, অন্ধ্রপ্রদেশের এক প্রেক্ষাগৃহ নাকি বহু বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়েছিল। পাঁচ থেকে ছ’বছর পর নাকি সেই তালা লেগে থাকা প্রেক্ষাগৃহেও ছবি ‘হাউসফুল’ থাকার দাবি করেছিলেন এক এক্সহিবিটর।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ছবির নির্ধারিত ব্যবসা দেখাতে কোনও বড় সংস্থার তরফে অধিকাংশ টিকিট কিনে ফেলা হয়। পরে সেই টিকিটই বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসাবে বিজয়ীদের পুরস্কার হিসাবে বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
ছবি মুক্তির আগে তার প্রচারের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেন প্রযোজকেরা। কিন্তু ছবির ব্যবসার কথা মাথায় রেখে নাকি সেখানেও নম্বর নিয়ে খেলা করেন প্রযোজকদের একাংশ।
প্রচারের খরচ কমিয়ে সেই পরিমাণ টাকাই নাকি বক্স অফিসের ব্যবসার খাতায় ঢেলে দেন প্রযোজকদের একাংশ। পরে সেই টাকার অঙ্ক অনেকটা বেড়ে গেলে তার প্রচার করতে শুরু করেন সমাজমাধ্যমের পাতায়।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ছবি সমালোচকেরাও নাকি অনেকে ছবির বিষয়ে সঠিক ভাবে সমালোচনা করেন না। সমালোচকদের একাংশ নাকি দর্শকদের ভুল ‘রিভিউ’ দিয়ে অন্য পথে চালিত করেন।
সঠিক ‘রিভিউ’ না দেখে দর্শকেরা প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে যান। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সেখান থেকে বক্স অফিসে টাকা উঠে আসে। এ ভাবেই কোটি কোটি টাকার সফল ছবি বক্স অফিসে জায়গা করে নেয় বলে বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি।