আয়তনে ব্রিটেনের রাজপরিবারের সরকারি বাসভবন ‘বাকিংহাম প্যালেসের’ প্রায় চার গুণ। শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর বাসভবন ‘আন্টিলিয়া’র চেয়েও বড়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাসভবন হিসাবেই পরিচিত ‘লক্ষ্মী বিলাস প্যালেস’। কোথায় রয়েছে এই ভবন? এই বাসভবনের মালকিনের পরিচয় কী?
বরোদার গায়কোয়াড়ের মালিকানাধীন লক্ষ্মী বিলাস প্যালেস বিশ্বের বৃহত্তম ব্যক্তিগত ভবন। তিন কোটি বর্গফুটেরও বেশি এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে এই প্রাসাদ।
বর্তমানে লক্ষ্মী বিলাস প্যালেসের মালিক রাজা সমরজিৎ সিংহ গায়কোয়াড় এবং তাঁর স্ত্রী রাধিকারাজে গায়কোয়াড়। ওয়াঙ্কানের রাজপরিবারের সদস্য রাধিকারাজে।
১৯৭৮ সালে ১৯ জুলাই গুজরাতের ওয়াঙ্কানের জেলায় জন্ম রাধিকারাজের। তাঁর বাবা রঞ্জিত সিংহ ঝালা পেশায় এক জন আইএএস আধিকারিক ছিলেন। পাশাপাশি রাজপরিবারের সদস্যও ছিলেন তিনি।
পড়াশোনা ছাড়াও লেখালেখির দিকে ঝোঁক ছিল রাধিকারাজের। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত একটি কলেজ থেকে ভারতীয় ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করার পর সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন রাধিকারাজে।
২০০২ সালে রাধিকারাজের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন সমরজিৎ। দম্পতির দুই কন্যা রয়েছে। তাঁরা চার জনই লক্ষ্মী বিলাস প্রাসাদে বসবাস করেন।
বরোদার প্রাক্তন রাজা রঞ্জিত সিংহ প্রতাপ সিংহ গায়কোয়াড় এবং রানি শুভাঙ্গিনীরাজের একমাত্র পুত্র সমরজিৎ। ১৯৬৭ সালের ২৫ এপ্রিলে তাঁর জন্ম।
রঞ্জিত সিংহের মৃত্যুর পর বরোদার রাজা হিসাবে অভিষেক হয় সমরজিতের। ২০১২ সালের মে মাসে রাজার মুকুট পান তিনি। সমরজিতের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে সে বছরেরই জুন মাসে বিশাল আয়োজন হয়।
তবে সমরজিৎ রাজা হওয়ার আগে থেকেই তাঁর বাবা এবং কাকার মধ্যে লক্ষ্মী বিলাস প্যালেসের মালিকানা এবং সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বিবাদ চলছিল। রঞ্জিত সিংহের মৃত্যুর পর সেই আইনি বিবাদ শুরু হয় কাকা-ভাইপোর মধ্যে। ২০১৩ সালে দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা মামলায় জিতে পাকাপাকি ভাবে লক্ষ্মী বিলাস প্যালেসের একমাত্র মালিক হন সমরজিৎ।
ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ছিল সমরজিতের। পড়াশোনার পাশাপাশি তাই ক্রিকেটেরও প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন তিনি। দেহরাদূনের দূন স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে ক্রিকেট নিয়েই নিজের কেরিয়ার গড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সমরজিৎ।
রঞ্জি ট্রফিতেও খেলেছেন ব্যাটার সমরজিৎ। টপ অর্ডার ব্যাটার হিসাবে ছ’টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে খেলেছেন তিনি। খেলা শেষে সমরজিৎ বরোদা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির পদে বসেন।
ক্রিকেট ছাড়াও গল্ফ খেলায় পটু ছিলেন সমরজিৎ। গল্ফ খেলার প্রতি ঝোঁক থাকায় লক্ষ্মী বিলাস প্যালেসের মধ্যে একটি গল্ফ কোর্স এবং ক্লাব তৈরি করিয়েছিলেন তিনি।
লক্ষ্মী বিলাস প্যালেসের মধ্যে গল্ফ কোর্ট থেকে শুরু করে রয়েছে বিশাল বাগান। ১৭০টিরও বেশি ঘর রয়েছে এই প্রাসাদের অন্দরমহলে। ১৪।
১৮৯০ সালে ১ লক্ষ ৮০ হাজার পাউন্ড খরচ করে লক্ষ্মী বিলাস প্যালেসটি নির্মাণ করেছিলেন মহারাজ তৃতীয় সায়াজিরাও গায়কোয়াড়।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, বাকিংহাম প্যালেসের আয়তন ৮ লক্ষ ২৮ হাজার ৮২১ বর্গফুট। বাকিংহাম প্যালেসের চেয়ে আয়তনে চার গুণ বড় লক্ষ্মী বিলাস প্যালেসের আয়তন ৩ কোটি ৪ লক্ষ ৯২ হাজার বর্গফুট।
মুকেশ অম্বানীর বাসভবন আন্টিলিয়া ভারতের বিলাসবহুল বাসভবনের মধ্যে অন্যতম। আয়তনে আন্টিলিয়া এই প্রাসাদের কাছে শিশু!
৪৮ হাজার ৭৮০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে আন্টিলিয়া। এই বাসভবন নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা।
লক্ষ্মী বিলাস প্যালেসের মালিকানা ছাড়াও মোতিবাগ স্টেডিয়াম, মহারাজা ফতেহ সিংহ মিউজিয়াম-সহ প্রাসাদের কাছাকাছি ৬০০ একর জমি এবং রাজা রবি বর্মার আঁকা বেশ কয়েকটি ছবির মালিকানা রয়েছে সমরজিতের কাছে। বহু কোটি টাকার সোনা এবং রুপোও রয়েছে তাঁর কাছে।
গুজরাত এবং উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে মোট ১৭টি মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন সমরজিৎ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমরজিৎ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার মালিক। ২০১৪ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সমরজিৎ। তবে ২০১৭ সাল থেকে তিনি রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় নন।