নতুন কিছুর সন্ধান, আদেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট কাজ করা অথবা কারও সঙ্গে কথা বলা— আইফোন অথবা ম্যাক ব্যবহারকারীদের কাছে সিরি যেন ‘সবচেয়ে কাছের বন্ধু’। ‘হে সিরি’ বললেই জেগে ওঠে সে। বিনা পরিশ্রমে হাতের কাছেই সব জিনিস হাজির করার চেষ্টা করবে সিরি। কিন্তু এই সিরির কণ্ঠের নেপথ্যে কে?
অ্যাপলের ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ সিরির কণ্ঠের নেপথ্যে রয়েছেন সুজ়ান অ্যালিস বেনেট। ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে আইফোন ৪এস-এর মাধ্যমে সুজ়ানের কণ্ঠ প্রথম ব্যবহার করা হয়।
১৯৪৯ সালের ৩১ জুলাই আমেরিকার ভারমন্টের বারলিংটনে জন্ম সুজ়ানের। আমেরিকায় স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে স্নাতক হন সুজ়ান।
কলেজে পড়াকালীন থিয়েটারের দিকে ঝুঁকে পড়েন সুজ়ান। কলেজের একটি জ্যাজ় ব্যান্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। কলেজের নানা অনুষ্ঠানে গানও করেছেন তিনি।
কলেজের পড়াশোনা শেষ করার তিন বছর পর কণ্ঠশিল্পী হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেন সুজ়ান। ১৯৭৪ সালে ফার্স্ট ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অফ আটলান্টার এটিএম মেশিন ‘টিলি দ্য অল টাইম টেলার’-এ কণ্ঠ দেন তিনি।
আমেরিকার এক খ্যাতনামী বিমান সংস্থার হয়েও কাজ করেন সুজ়ান। বিশ্ব জুড়ে ২৫০টি বিমানবন্দরে ওই সংস্থার যতগুলি টার্মিনাল রয়েছে, সেখানে যাত্রীদের জন্য কোনও ঘোষণার সময়ে শোনা যেত সুজ়ানের কণ্ঠস্বর।
নানা রকম ই-লার্নিং সফ্টঅয়্যার, টেলিফোন সিস্টেম, জিপিএস নেভিগেশন সফ্টঅয়্যারের নেপথ্যে কণ্ঠ দিতে শোনা যায় সুজ়ানকে।
কোকা কোলা, ম্যাকডোনাল্ডস এবং কার্টুন নেটওয়ার্কের মতো একাধিক নামী সংস্থা টেলিভিশনে তাদের বিজ্ঞাপনী প্রচারের সময় সুজ়ানের কণ্ঠ ব্যবহার করে।
২০০৫ সালে স্ক্যানসফ্ট নামে একটি সফ্টঅয়্যার সংস্থা তাদের ডেটাবেস প্রজেক্টের জন্য কণ্ঠের সন্ধান করছিল। সেই সময় ভাগ্য সহায় হয় সুজ়ানের। প্রজেক্টের কণ্ঠ হিসাবে যাঁকে নির্বাচন করা হয়েছিল, তিনি অনুপস্থিত থাকায় সুজ়ানকে সেই কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
২০০৫ সালের জুলাই মাস থেকে হোম রেকর্ডিং বুথের ভিতর বসে কাজ শুরু করেন সুজ়ান। প্রতি দিন চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মাইকের সামনে বসে রেকর্ডিং করতেন তিনি। নানা ধরনের শব্দবন্ধ, বাক্য-সহ দীর্ঘ অনুচ্ছেদ পাঠ করতেন সুজ়ান।
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুজ়ান জানিয়েছিলেন যে, সিরির নেপথ্যে যে তাঁর কণ্ঠ ব্যবহার করা হয়েছে সেই বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। তাঁকে তাঁর বন্ধু ইমেল করে ঘটনাটি জানান।
২০১১ সালের অক্টোবর মাসে সুজ়ানের বন্ধু তাঁকে মেল করে লিখেছিলেন, ‘‘আমি আইফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম। সিরির কণ্ঠের সঙ্গে তোমার কণ্ঠের মিল খুঁজে পেলাম। এটা কি তুমি?’’
সাক্ষাৎকারে সুজ়ান জানিয়েছিলেন, সিরির কণ্ঠ হিসাবে যে তাঁর কণ্ঠ ব্যবহার করা হয়েছে তা জানতেন না তিনি। অ্যাপল সংস্থার তরফে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি বলে দাবি করেন সুজ়ান। এমনকি, কোনও পারিশ্রমিকও নাকি দেওয়া হয়নি সুজ়ানকে।
সিরির কণ্ঠের নেপথ্যে যে সুজ়ান রয়েছেন, তা এখনও পর্যন্ত স্বীকার করেনি অ্যাপল সংস্থা। তবে সিএনএন-এর কণ্ঠবিশারদেরা নিশ্চিত করেছেন যে, সুজ়ানই সিরির নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন।
২০১৫ সালের মার্চ মাসে অ্যাডাল্ট সুইমের শো ‘দ্য জ্যাক অ্যান্ড ট্রায়াম্ফ শো’-এ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সুজ়ান। সেই শোয়ে সুজ়ান স্বীকার করেছিলেন যে, সিরির নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী তিনিই।
কলেজে পড়ার সময় কার্ট বেনেট নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সুজ়ানের। আইস হকি খেলতেন কার্ট। কার্টের সঙ্গে বিয়ে করেছিলেন সুজ়ান। কিন্তু তাঁদের সংসারে ভাঙন ধরে।
কার্টের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর রিক হিঙ্কলের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় সুজ়ানের। পেশায় অডিয়ো ইঞ্জিনিয়ার তিনি। গিটার বাজাতেও ভালবাসেন রিক। রিকের সঙ্গে সুজ়ানের বন্ধুত্ব প্রেমে গড়ায়। পরে বিয়েও করেন দু’জনে। বর্তমানে জর্জিয়ার আটলান্টায় থাকেন সুজ়ান।