Bloody Island

বেআইনি কাজের আঁতুড়ঘর! খুন, লড়াইয়ের জন্য কুখ্যাত ‘রক্তাক্ত দ্বীপে’ ছিল না আইনের শাসন

মিসৌরির সেন্ট লুই শহর পার করে গেলেই দেখা যায় মিসিসিপি নদীর মাঝখানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে একটি ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জ। ধীরে ধীরে আমেরিকার এই দ্বীপপুঞ্জই হয়ে উঠেছিল বেআইনি কাজকর্মের আঁতুড়ঘর।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৪২
Share:
০১ ১৬

এক দিকে মিসৌরি, অন্য দিকে ইলিনয়। দুই রাজ্যের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে মিসিসিপি নদী। মিসৌরির সেন্ট লুই শহর পার করে গেলেই দেখা যায় মিসিসিপি নদীর মাঝখানে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা ছোট্ট দ্বীপ। ধীরে ধীরে আমেরিকার এই দ্বীপই হয়ে উঠেছিল বেআইনি কাজকর্মের আঁতুড়ঘর।

০২ ১৬

বহু বছর ধরে মিসিসিপি নদীর পলি জমে তৈরি হয়েছিল এই দ্বীপ। তবে এই দ্বীপ মিসৌরি অথবা ইলিনয় কোনও রাজ্যেরই অন্তর্ভুক্ত ছিল না। দুশো বছর আগে দ্বীপটি ছিল আইনের শাসনমুক্ত একটি জায়গা। ফলে বেআইনি যত ধরনের কাজকর্ম হত, দুই রাজ্যের অধিবাসীরা তার জন্য এই দ্বীপটিকেই বেছে নিতেন।

Advertisement
০৩ ১৬

মোরগ লড়াই থেকে শুরু করে কুস্তির লড়াই, চোরাকারবারি থেকে বেআইনি কাজের জন্য কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে মিসিসিপি নদীর বুকে গড়ে ওঠা এই দ্বীপের। এই দ্বীপের নাম রাখা হয় ‘ব্লাডি আইল্যান্ড’ বা রক্তাক্ত দ্বীপ।

০৪ ১৬

অন্য একটি কারণেও কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকার দ্বীপের। দ্বৈত লড়াই (ডুয়েল)-এর আয়োজন করা হত এই দ্বীপে। মিসৌরি এবং ইলিনয়, দুই রাজ্যেই দ্বৈত লড়াই ছিল বেআইনি।

০৫ ১৬

দুই রাজ্যে বেআইনি ঘোষণা হলেও ডুয়েলের জন্য মিসৌরি এবং ইলিনয় রাজ্যের মধ্যবর্তী আইন-শাসনবর্জিত দ্বীপকেই বেছে নিয়েছিলেন দুই রাজ্যের বাসিন্দারা।

০৬ ১৬

সম্মান রক্ষার্থে বা কোনও বিষয়ে মদভেদ হলে সে কালে দ্বৈত লড়াইয়ে আহ্বান জানানো ছিল সাধারণ ঘটনা। লড়াইয়ের নিয়মানুযায়ী কোন জায়গায় লড়াই করা হবে, কোন অস্ত্র ব্যবহার করা হবে, এমনকি কোন দূরত্ব থেকে অস্ত্রের ব্যবহার করা হবে, সব কিছুই পূর্বনির্ধারিত থাকত।

০৭ ১৬

নির্দিষ্ট সময়ে দুই পক্ষ হাজির হয়ে যেতেন ব্লাডি আইল্যান্ডে। সাক্ষী হিসাবে সেখানে উপস্থিত থাকতেন দর্শকবৃন্দ। এমনকি এক জন চিকিৎসকেরও লড়াইয়ের স্থানে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক ছিল।

০৮ ১৬

নিয়মানুযায়ী দুই পক্ষের যে কোনও এক পক্ষ অথবা দুই পক্ষই মারা না গেলে ডুয়েল থামানো যেত না। আবার দুই পক্ষই যদি দ্বৈত লড়াই করে সন্তুষ্ট হয়ে যেতেন তবে সেই মুহূর্তে লড়াই থেমে যেত।

০৯ ১৬

১৮১০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম দ্বৈত লড়াই হয়েছিল ব্লাডি আইল্যান্ডে। বার্নার্ড জি ফারার নামে এক চিকিৎসক মিসিসিপি গিয়ে অ্যাটর্নি জেমস গ্রাহামের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন।

১০ ১৬

বার্নার্ডের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাস খেলার সময় প্রতারণা করেন বলে অভিযোগ করেন জেমস। বন্ধুর সম্মান রক্ষার্থে জেমসকে দ্বৈত লড়াইয়ের আহ্বান করেন বার্নার্ড। দু’জনের লড়াইয়ে জেমস মারা যান।

১১ ১৬

১৮১৭ সালের ১২ অগস্ট সেন্ট লুই শহরের দুই অ্যাটর্নি টমাস হার্ট বেনটন এবং চার্লস লুকাসের মধ্যে দ্বৈত লড়াই হয়েছিল এই দ্বীপে। জমি সংক্রান্ত বিবাদকে ঘিরে টমাসকে ডুয়েলের আহ্বান দেন চার্লস। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই দু’জনের লড়াই শুরু হয়।

১২ ১৬

চার্লসের গলা লক্ষ্য করে প্রথম গুলি ছোড়েন টমাস। চার্লসও তার জবাবে টমাসের হাঁটু লক্ষ্য করে গুলি চালান। গুরুতর আঘাত পাওয়ার কারণে ডুয়েলের দ্বিতীয় পর্বের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না চার্লস। কয়েক সপ্তাহ পর চার্লসের ক্ষত সেরে গেলে আবার ডুয়েলের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়।

১৩ ১৬

২৭ সেপ্টেম্বর চার্লস এবং টমাসের মধ্যে দ্বিতীয় বার ডুয়েল হলে চার্লসের বুকে গুলি চালান টমাস। সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন চার্লস। ডুয়েলে বিজয়ী হিসাবে ঘোষণা করা হয় টমাসকে। ১৮২১ থেকে ১৮৫১ সাল পর্যন্ত মিসৌরির সেনেটর পদে নিযুক্ত ছিলেন টমাস।

১৪ ১৬

বহু বার দ্বৈত লড়াই হয়েছে মিসিসিপির দ্বীপে। কিন্তু মিসৌরি রাজ্যের দিকে মিসিসিপি নদী পলি জমিয়ে দ্বীপের আয়তন বৃদ্ধি পেলেও ইলিনয় রাজ্যের দিকে দ্বীপপুঞ্জ ধীরে ধীরে ডুবে যেতে থাকে। ১৮৩৭ সালে রবার্ট ইলি নামে এক ইঞ্জিনিয়ার দ্বীপে দু’টি আল কাটানোর ব্যবস্থা করেন। ইলিনয় রাজ্যের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দ্বীপের একটি অংশ যুক্ত করা হয়।

১৫ ১৬

মূল ভূখণ্ডের অংশ হয়ে যাওয়ার পরেও ব্লাডি আইল্যান্ডে দ্বৈত লড়াই থামেনি। ১৮৫৬ সালের ২৬ অগস্ট শেষ ডুয়েল হয় দ্বীপপুঞ্জে। এই লড়াই ‘ডুয়েল অফ দ্য গভর্নরস’ নামে পরিচিত। দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা রাজনীতি সংক্রান্ত বিবাদের মীমাংসা করতেই ডুয়েলের আয়োজন করা হয়।

১৬ ১৬

মিসৌরির গভর্নর বেঞ্জামিন গ্রাটজ় ব্রাউনের পায়ে গুলি লাগার কারণে তিনি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। বেঞ্জামিনের বিপক্ষে ছিলেন টমাস কাউট রেনল্ডস। ডুয়েলে সম্পূর্ণ অক্ষত ছিলেন টমাস। ১৮৬২ সালে মিসৌরির কনফেডারেট গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত হন টমাস। তার পর ব্লাডি আইল্যান্ডে আর কোনও ডুয়েল হয়নি।

সকল ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement