রবিবার থেকে শুরু হয়েছে আইপিএলের নিলাম। চলবে সোমবার পর্যন্ত। সৌদি আরবের জেড্ডায় আয়োজন করা হয়েছে নিলামের অনুষ্ঠান। রবিবার খেলোয়াড়দের দর হেঁকে ক্রিকেটপ্রেমীদের নজর কেড়েছেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা। কে এই সুন্দরী?
আইপিএলের নিলামে প্রথম মহিলা সঞ্চালক হিসাবে নজির গড়েছেন মল্লিকা সাগর। গত বছরেও নিলামের অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
২০১৮ সালে রিচার্ড ম্যাডলির পরিবর্তে আইপিএলের নিলামের অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হিউ এডমিডেসকে। ২০২২ সালেও নিলামের সঞ্চালনা করছিলেন তিনি। কিন্তু মঞ্চেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
তড়িঘড়ি চারু শর্মাকে নিয়ে আসা হয়েছিল নিলামের জন্য। তিনি নিলামের বাকি পর্ব সামলেছিলেন। ২০২৩ সালে আর এডমিডেসকে দায়িত্ব দিতে রাজি ছিল না বিসিসিআই। তাঁর পরিবর্তে সঞ্চালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় মল্লিকা সাগরকে।
১৯৭৫ সালের ৩ অগস্ট মুম্বইয়ে জন্ম মল্লিকার। বাবা-মা, দুই ভাই এবং এক বোন রয়েছে তাঁর। মল্লিকার বাবা এবং দুই ভাই পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তবে পরিবারের পদাঙ্ক অনুসরণ করেননি মল্লিকা।
দশম শ্রেণি পর্যন্ত মুম্বইয়ে পড়াশোনা করেছেন মল্লিকা। তার পর আমেরিকার কানেক্টিকাটে চলে যান তিনি। সেখান থেকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন মল্লিকা।
তরুণী বয়সে নিলাম সংক্রান্ত একটি বই পড়েছিলেন মল্লিকা। এক মহিলা সঞ্চালককে ঘিরে গল্পটি আবর্তিত হয়েছিল। তার পর থেকে নিলামের অনুষ্ঠান সঞ্চালনার প্রতি আগ্রহ জন্মায় মল্লিকার।
বলিপাড়ার নামকরা পোশাক পরিকল্পক সুরিলি গোয়েল। কানাঘুষো শোনা যায়, সুরিলির ভাই আশিস গোয়েলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন মল্লিকা। কিন্তু সেই সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি।
‘ব্লু স্টার’ সংস্থার অধিকর্তা বীর আডবাণীকে বিয়ে করেছিলেন মল্লিকা। বিয়ের পর এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। তবে ২০১৭ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের।
আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার একটি কলেজ থেকে শিল্পকলা নিয়ে পড়াশোনা করেন মল্লিকা। পড়াশোনা শেষ করার পর খ্যাতনামী নিলামঘর ক্রিস্টিজ়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ পান তিনি। প্রথমে মুম্বই তার পর নিউ ইয়র্কে কাজ করেন মল্লিকা।
সেই সময় ক্রিস্টিজ়ে ভারতীয় প্রতিনিধি কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার ফলে সুযোগ আসে মল্লিকার সামনে। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাকা করে ফেলেন তিনি।
২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কে প্রথম নিলামের অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন মল্লিকা। সেই নিলামে বেসবল সংক্রান্ত নানা ধরনের স্মারক বিক্রি করা হয়েছিল।
২০০১ সালে ক্রিস্টির ভারতীয় বংশোদ্ভুত মহিলা সঞ্চালক হিসাবে পরিচিতি পান মল্লিকা। বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় চিত্রের নিলামের সঞ্চালনা করে দারুণ সাফল্য পান তিনি।
২০০৪ সালে মল্লিকার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। মায়ের সঙ্গে থাকবেন বলে সেই বছর ক্রিস্টিজ়ে চাকরি ছেড়ে দেন মল্লিকা। এক বছর কোনও চাকরি করেননি তিনি। পরে পেশাদার শিল্প বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি।
২০১১ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম বার নিজের উদ্যোগে শিল্পসামগ্রীর নিলাম করেন মল্লিকা। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একাধিক বেসরকারি সংস্থার শীর্ষপদে ছিলেন তিনি।
২০২১ সালে প্রথম খেলাধুলা সংক্রান্ত নিলামের সঙ্গে যুক্ত হন মল্লিকা। প্রো কবাডি লিগের নিলামের অনুষ্ঠানে প্রথম মহিলা সঞ্চালক হিসাবে প্রকাশ্যে আসেন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে মল্লিকা জানিয়েছিলেন যে, তাঁকে খেলার নিলামের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন হিউ এডমিডেস। ২০২১ সালে আইপিএলের নিলামের সঞ্চালনা করেছিলেন এডমিডেস। মল্লিকাকে পরিবর্ত সঞ্চালক হিসাবে দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন তিনি।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মহিলাদের আইপিএলের নিলামের অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন মল্লিকা।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আইপিএলের নিলামের অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের ভূমিকায় প্রথম দেখা যায় মহিলামুখ। আইপিএল নিলামের প্রথম মহিলা সঞ্চালক হিসাবে খ্যাতি পান মল্লিকা।
২০২৩ সালের পর চলতি বছরেও আইপিএল নিলামের সঞ্চালনার দায়িত্ব নিপুণ হাতে সামলাচ্ছেন মল্লিকা। রবি এবং সোমবার— দু’দিনের অনুষ্ঠানেই খেলোয়াড়দের দর হাঁকান তিনি।