গ্রামের ধারে ছোট একটি রেলস্টেশন। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এই স্টেশনের দায়িত্ব পালন করেন না। রেলস্টেশনের সমস্ত কাজ সামলান সেই গ্রামের বাসিন্দারাই। কোথায় রয়েছে এই স্টেশন?
১৯২৩ সালে রাজস্থানের রশিদপুর খোরি গ্রামে একটি রেলস্টেশন তৈরি করা হয়। রেলপথে রাজস্থানের জয়পুর থেকে চুরু যাওয়ার পথে এই গ্রামটি পড়ে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য এই গ্রামেই স্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত নেন ব্রিটিশরা।
রশিদপুর খোরি গ্রামে স্টেশন নির্মাণের ফলে গ্রামবাসীদের যাতায়াতের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও সুবিধা হত। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে দেশভাগ, এমনকি ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধেরও সাক্ষী থেকেছে এই স্টেশন।
২০০৫ সালে রশিদপুর খোরি গ্রামের স্টেশনটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রেল। ওই স্টেশন থেকে যে পরিমাণ আয় হত সে তুলনায় রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেশি পড়ত। সব মিলিয়ে রেলের কাছে লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছিল স্টেশনটি।
রেলস্টেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা শুনে আপত্তি জানান রশিদপুর খোরি গ্রামের বাসিন্দারা। স্টেশনটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যায় পড়তেন তাঁরাই। তাই রেল প্রশাসনের কাছে স্টেশন চালু রাখার আবেদন জানান গ্রামবাসীরা। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয় না।
রশিদপুর খোরি গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, সেখানকার স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যমেরও নজর কাড়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু সাহায্য প্রার্থনা করলেও গ্রামবাসীদের পাশে এসে দাঁড়াননি কেউ।
কোনও উপায় না পেয়ে রশিদপুর খোরি গ্রামের কয়েক জন বাসিন্দা মিলে দল বেঁধে রেল আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করতে যান।
রশিদপুর খোরি গ্রামের স্টেশনটিকে যেন চালু রাখা হয় সেই আবেদন সরাসরি রেল প্রশাসনকে জানান গ্রামবাসীরা। অবশেষে রেল প্রশাসন স্টেশনটি চালু রাখার প্রস্তাবে রাজি হন। তবে তাদের তরফে একটি শর্ত দেওয়া হয়।
রেল প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, রশিদপুর খোরি গ্রামের বাসিন্দারা তাদের দেওয়া শর্ত মেনে না চললে স্টেশনটি সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে। রেল প্রশাসনের সেই শর্তেই রাজি হন গ্রামবাসীরা।
রশিদপুর খোরি গ্রামের বাসিন্দাদের শর্ত দেওয়া হয়, স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকতে হবে তাঁদেরই। এমনকি টিকিটও বিক্রি করতে হবে গ্রামবাসীদের।
প্রতি মাসে তিন লক্ষ টাকা মূল্যের টিকিট বিক্রির শর্ত দিয়েছিল রেল প্রশাসন। যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকিট বিক্রি না হয়, তা হলে রশিদপুর খোরি গ্রামের স্টেশনটি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে রেল প্রশাসনের সঙ্গে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন গ্রামবাসীরা।
রশিদপুর খোরি গ্রামে যে একটি রেলস্টেশন রয়েছে তার প্রচার করতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন গ্রামবাসীরা। কোন সময়, কোন ট্রেন ছাড়ে, টিকিটের ভাড়া কত— সে সব তথ্য অন্য গ্রামে গিয়েও জানাতে শুরু করেন তাঁরা। রেলস্টেশনটি পুরোদমে কার্যকরী করে তোলার জন্য সব রকম চেষ্টা করেন তাঁরা।
শর্ত মেনে রশিদপুর খোরি গ্রামের বাসিন্দারা নিজেরাই স্টেশনের সব রকম দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। স্টেশনমাস্টার, গার্ড-সহ অন্যান্য পদে গ্রামের বাসিন্দাদেরই নিযুক্ত করা হয়।
রশিদপুর খোরি গ্রামের স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের সমস্ত দায়দায়িত্ব নিয়ে নেন সেখানকার বাসিন্দারা। রেল প্রশাসনের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী তিন লক্ষ টাকা মূল্যের টিকিটও বিক্রি করেন তাঁরা।
বর্তমানে ভারতের উল্লেখযোগ্য রেলস্টেশনের তালিকায় নাম লিখিয়েছে রশিদপুর খোরি গ্রামের স্টেশন। তবে এখনও এই স্টেশনের দায়িত্বে রয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারাই।