নতুন উদ্যোগপতিদের মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছেন তিনি আমেরিকা এবং কানাডায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিশিষ্টদের মধ্যে অন্যতম। এত কম বয়সে তাঁর মতো সাফল্য কম জনই পেয়েছেন। কে এই অপূর্ব মেহতা?
আমেরিকা এবং কানাডায় মুদি বাজার ঘরের দোরে পৌঁছে দেয় ইনস্টাকার্ট। সেই জনপ্রিয় সংস্থার নেপথ্যে রয়েছেন অপূর্ব। এই জায়গায় পৌঁছনোর পথটা কিন্তু সহজ ছিল না।
অ্যামাজনের চাকরি ছেড়ে ঝুঁকি নিয়েছিলেন অপূর্ব। সেই ফলও পেয়েছেন। আজ তিনি সফল উদ্যোগপতি। তাঁর সংস্থার সদর দফতর আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোয়।
এ হেন অপূর্বর জন্ম জোধপুরে। ১৯৮৬ সালে। বাবা কাজ করতেন লিবিয়ায় একটি সংস্থায়।
জন্মের কয়েক মাস পর মায়ের সঙ্গে সেখানে চলে যান অপূর্ব। ২০০০ সালে তাঁর পরিবার কানাডার অন্টারিয়োর হ্যামিল্টনে চলে আসে। তখন তাঁর বয়স ১৪ বছর।
ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতক পাশ করেন অপূর্ব। ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ব্ল্যাকবেরিতে যোগ দেন তিনি।
ব্ল্যাকবেরি সংস্থায় চার মাস কারেছিলেন তিনি। এর পর কোয়ালকম সংস্থায় কাজ করেন। ২০০৮ সালে যোগ দেন অ্যামাজনে। সেখানে সাপ্লাই চেন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তিনি।
২০১০ সালে অ্যামাজন সংস্থার চাকরি ছেড়ে দেন অপূর্ব। ৯টা-৫টার চাকরি তাঁর ভাল লাগছিল না। চলে আসেন আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোয়। উদ্দেশ্য ছিল, উদ্যোগপতি হবেন।
২০১০ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত প্রায় ২০টি নতুন ব্যবসা শুরু করেন অপূর্ব। সব ক’টি ব্যর্থ হয়। তবু হাল ছাড়েননি।
ওই সময়ে আইনজীবীদের জন্য একটি যোগাযোগের প্লাটফর্ম তৈরি করেছিলেন অপূর্ব। গেমিংয়ের বিজ্ঞাপন সংস্থা খোলেন। সবই ব্যর্থ হয়। সে কথা নিজেই একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন অপূর্ব।
সে সময় তিনি লক্ষ্য করেন, মানুষ মুদির বাজার করতে কত সময় অপচয় করেন। কত ঝক্কি পোহাতে হয় তাঁদের। তিনি ভাবেন, এই বাজার যদি গ্রাহকদের দরজায় পৌঁছে দেওয়া যায়, তা হলে বেশ হয়। এর বাজারও হতে পারে অনেক বড়।
সে সব দিনে প্রায়ই নিজের খালি ফ্রিজের দিকে তাকাতেন অপূর্ব। আর মনে হত, যদি কেউ মুদির বাজার, সবজি ঘরেই পৌঁছে দিত! তা হলে আর কষ্ট করে বার হতে হত না। সেই ভাবনা থেকেই শুরু।
লিঙ্কডিনে একটি পোস্টে অপূর্ব লেখেন, ‘‘এক দশক আগে সান ফ্রান্সিসকোয় নিজের ঘরে বসেছিলাম। ফ্রিজ খুলে হতাশ হয়ে পড়ি। দেখি, সেখানে শুধুই একটা হট সস রয়েছে। ওই ফাঁকা ফ্রিজ ছিল রোজের সমস্যা আর আমার অনুপ্রেরণাও।’’
২০১২ সালে অপূর্ব শুরু করেন ইনস্টাকার্ট। তখন তাঁর বয়স ২৬ বছর। কয়েক মাসেই সাফল্যের মুখ দেখেন। ১১ বছর পর এখন আমেরিকার ১৪ হাজার শহরে পরিষেবা দেয় এই সংস্থা।
গত সেপ্টেম্বরে নিজেদের সংস্থার প্রথম শেয়ার বাজারে ছাড়ে ইনস্টাকার্ট। মোট ৩০ শতাংশ শেয়ার ছেড়েছিল তারা। সেই শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছিল ৪০ শতাংশ। দিনের শেষে তার দাম হয় ৩৩.৩৭ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২,৮০০ টাকা।
সংবাদ মাধ্যম সিএনবিসি বলছে, এখন ইনস্টাকার্টের মোট মূল্য ৯৯০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকারও বেশি।