বীরভূমের জেলা সভাপতির মেয়ে। এটুকুই ছিল পরিচয়। কিন্তু এখন রাজ্য রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে সুকন্যা মণ্ডল।
রাজনীতির ময়দানে কখনও দেখা যায়নি তাঁকে। এমনকি স্কুলের দিদিমণি হলেও তাঁকে বাড়ি থেকে নাকি বিশেষ বার হতে দেখেননি বোলপুরের নিচুপট্টির বাসিন্দারা।
বুধবার দিনটা মোটেও ভাল যায়নি সুকন্যার। সকালে গরুপাচার মামলা সূত্রে সিবিআই পৌঁছয় সুকন্যার বাড়ির দরজায়। একই দিনে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকতা নিয়ে অনিয়মের নালিশ জমা পড়ে আদালতে।
বাবার পরিচয়েই নাকি বাড়ির একেবারে কাছের স্কুলে চাকরি পান। মেরেকেটে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার দূরে। তাঁর নিয়োগ হয় বোলপুর ওয়েস্ট সার্কেলের কালিকাপুর প্রাইমারি স্কুলে।
শুধু চাকরি নয়, একাধিক ব্যবসার সঙ্গেও সুকন্যা যুক্ত বলে সিবিআই আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন বলে সূত্রের খবর।
সুকন্যার ফেসবুক প্রোফাইল বলছে, তিনি একই সঙ্গে দু’টি চাকরি করেন। একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি। সুকন্যা নিজেই যে তথ্য দিয়েছেন তাতে দু’টি চাকরিই পেয়েছেন ২০১৬ সালে। যদিও সেই ফেসবুক প্রোফাইল অনুব্রত-কন্যার কি না, তা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করে দেখেনি।
ওই ফেসবুক প্রোফাইল বলছে, বোলপুর গার্লস হাই স্কুল থেকে তাঁর লেখাপড়া শেষ হয় ২০১০ সালে। আর ২০১৬ সালে তিনি প্রথমে যোগ দেন বীরভূমের ‘ভোলে বাবা রাইস মিল’ নামে এক সংস্থায়।
সেই বছরেই যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা দফতরে।
কলকাতা হাইকোর্টে বুধবার আইনজীবী ফিরদৌস শামিম অতিরিক্ত হলফনামা জমা দিয়ে সুকন্যার চাকরির বিষয়টি আদালতকে জানান। সেখানে অভিযোগ, সুকন্যা নাকি টেট পাশ না করেই চাকরি পেয়েছেন।
শুধু সুকন্যার বিরুদ্ধেই নয়, তিনি যে স্কুলের দিদিমণি সেই বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। হাই কোর্টে আইনজীবী বলেন, ‘‘স্কুলের রেজিস্টার খাতা অনুব্রতের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাঁর মেয়ের হাজিরা নিয়ে আসতেন এক জন।’’
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত চলছে। সেই মামলাতেই জড়িয়ে গিয়েছে সুকন্যার নাম।
গরুপাচার তদন্তে ইতিমধ্যেই সিবিআই হেফাজতে অনুব্রত মণ্ডল। বাবা কাছে নেই। এই পরিস্থিতিতেই বিতর্কে জড়িয়ে অনেকটাই একা সুকন্যা।
দু’বছর আগে মাকে হারিয়েছেন। ২০২০ সালের ২৪ জানুয়ারি মৃত্যু হয় মা ছবি মণ্ডলের। সেই থেকে বাবার সঙ্গে একাই থাকেন সুকন্যা। এখন বাবাও কাছে নেই।
বীরভূমে দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা হিসাবে পরিচিত অনুব্রত। তবে বাড়িতে মেয়ে সুকন্যার সঙ্গে নাকি সম্পর্ক একেবারে বন্ধুর মতো।
কিন্তু এখন সুখ নেই সুকন্যার। সিবিআই নাকি তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, সুকন্যার নামে একাধিক সংস্থা ছাড়াও স্থাবর, অস্থাবর অনেক সম্পত্তি বানিয়েছেন অনুব্রত।