বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ়ে ২-০ ব্যবধানে জয় পেয়েছে ভারত। রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে এই সিরিজ়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন লোকেশ রাহুল।
টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসাবে রাহুলের অভিষেক হয়েছে আগেই। চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ে ভারতকে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন তিনি।
তবে অধিনায়ক হিসাবে যে হাতেগোনা কয়েকটি সুযোগ পেয়েছেন, তাতে রাহুলের রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে একটি টেস্টে হারতে হয়েছে ভারতকে। এক দিনের ম্যাচের সিরিজ় হারতে হয়েছে ০-৩ ব্যবধানে।
বাংলাদেশ সিরিজ়ে শেষ ম্যাচটিতে জয়ও কিন্তু সহজে আসেনি। টেস্টের চতুর্থ দিনে পাল্লা ভারী ছিল শাকিব আল হাসানের দলের দিকেই। শেষ পর্যন্ত শ্রেয়স আইয়ার এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের চেষ্টায় বৈতরণী পার করেছে রাহুলের ভারত।
অধিনায়ক হিসাবে কী কী ভুল করছেন রাহুল? বিশ্লেষণে উঠে আসছে একাধিক কারণ। যা দেখে রাহুলকে আর কোনও ম্যাচে দেশের নেতৃত্বের ভার দেওয়া উচিত হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজ়ের দ্বিতীয় ম্যাচে কুলদীপ যাদবকে প্রথম একাদশে সুযোগ না দেওয়া নিয়ে বিতর্ক নিঃসন্দেহে রাহুলের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। প্রথম ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ৮টি উইকেট নিয়েছিলেন কুলদীপ। তা-ও কেন তাঁকে দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ দেওয়া হল না? অভিযোগ, এই প্রশ্নের জবাবও দায়সারা ভাবেই দিয়েছেন অধিনায়ক রাহুল।
তিনি জানিয়েছেন, এই ধরনের পিচের চরিত্র সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণা নেই। তাই তিনি বড়দের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন। কুলদীপের জায়গায় জোরে বোলার জয়দেব উনাদকাটকে সুযোগ দেন রাহুল। অনেকের মতে, গত ম্যাচে জয়ের অন্যতম মূল কাণ্ডারিকে বাদ দেওয়ার কারণে দ্বিতীয় টেস্টে ভুগতে হয়েছে ভারতকে।
প্রথম টেস্টেও কুলদীপকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অধিনায়ক রাহুলের কৌশলে ফাঁক খুঁজে পেয়েছেন কেউ কেউ। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৫টি উইকেট তুলে বাংলাদেশকে একাই দুরমুশ করে দিয়েছিলেন কানপুরের বাঁহাতি স্পিনার। কিন্তু তাঁকে দ্বিতীয় ইনিংসে সে ভাবে ব্যবহারই করেননি রাহুল। অনেক দেরি করে ডাক পান কুলদীপ। বাংলাদেশের ৩২৪ রানের নেপথ্যে যে বিষয়টিকে দায়ী করেছেন অনেকে।
রাহুলের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, অধিনায়ক হয়েও বড়দের ছত্রছায়া থেকে তিনি বেরিয়ে আসতে পারেননি। তার প্রমাণও হাতেনাতে মিলেছে বাংলাদেশ সিরিজ়ে।
দ্বিতীয় টেস্টে দেখা গিয়েছে, স্লিপে দাঁড়িয়ে পর পর ৫টি ক্যাচ ফেলে দেন বিরাট কোহলি। যার পর বাংলাদেশের রান বেড়ে যায় বেশ খানিকটা। কিন্তু ক্যাচ ধরতে না পারার পরেও বিরাটকে স্লিপ থেকে সরাননি নতুন অধিনায়ক।
দীর্ঘ দিন বিরাটের নেতৃত্বে খেলেছেন রাহুল। প্রাক্তন অধিনায়কের ভুলে তাঁর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে কি দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছিলেন তিনি? অনেকের মতে, তা যদি হয়ে থাকে, তবে এই দ্বিধা অধিনায়কোচিত নয় একেবারেই।
ভারতীয় দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটার রাহুল। ওপেনার হিসাবে ফর্মে থাকা রাহুলকে ভয় পান তাবড় বোলার। কিন্তু অনেকে মনে করছেন, অধিনায়কত্ব রাহুলের খেলায় প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশ সিরিজ়ে চার ইনিংসে এক বারও নজরকাড়া রান আসেনি রাহুলের ব্যাট থেকে। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রদর্শন আরও দুর্বল হয়েছে।
প্রথম টেস্টে রাহুল ওপেন করতে নেমে ৫৪ বল খেলে ২২ রান করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি খেলেন ৬২ বল। ২৩ রান করে আউট হন অধিনায়ক।
দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৫ বল খেলে ১০ রান করেন রাহুল। দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হয়ে যান মাত্র ৭ বল খেলার পরই। অধিনায়কের নামের পাশে ছিল ২ রান।
ব্যাটে রানের খরা। তার উপর একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত জয়ের পরেও সমর্থকদের মুখে খুব একটা হাসি ফোটাতে পারেনি। রোহিতের অনুপস্থিতিতে বিকল্প অধিনায়কের কথা নির্বাচকদের ভাবা উচিত, মত অধিকাংশের।
আইপিএলে লখনউ সুপার জায়ান্টস দলের নেতৃত্ব দেন রাহুল। নেতৃত্বে যে তিনি একেবারে অপটু তা নয়। বর্তমানে তিনি ভারতের সহ-অধিনায়ক। তবে দেশের জার্সিতে তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।