রবিবার রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের সাক্ষী থেকেছে আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম। আইপিএলের ১৩ নম্বর ম্যাচটিতে গুজরাতের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন নাইটরা। ৩ উইকেটে কেকেআরের এই জয় আইপিএলের ইতিহাসে বহু দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
রবিবারের ম্যাচের এক এবং অদ্বিতীয় নায়ক রিঙ্কু সিংহ। শেষ ওভারে গুজরাতের প্রায় জিতে যাওয়া ম্যাচের মোড় তিনি একাই ঘুরিয়ে দিয়েছেন। শেষ পাঁচ বলে হাঁকিয়েছেন পাঁচ পাঁচটি বিশাল ছক্কা। রশিদ খানদের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়া এই ম্যাচে নাইট সমর্থকদের উৎসাহ ছিল তুঙ্গে।
কিন্তু রিঙ্কু প্রথম নন, এর আগে আইপিএলে কলকাতার দলে এমন অনেক নামী, বেনামী খেলোয়াড় এক রাতের ক্যারিশ্মায় নায়কের তকমা পেয়েছেন। এমন অনেক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতেছে কেকেআর।
আইপিএলের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, নাইটদের স্মরণীয় একটি জয় এসেছিল ২০১০ সালে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শাহরুখের দল হারিয়েছিল হায়দরাবাদকে। সে সময় অবশ্য দলটির নাম ছিল ডেকান চার্জার্স।
আইপিএলের তৃতীয় পর্বে ইডেন গার্ডেন্সে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ডেকান চার্জার্সের মুখোমুখি হয়েছিল সৌরভের কলকাতা। ইডেন সে দিন ‘দাদাগিরি’ দেখেছিল। ৮৮ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেছিলেন অধিনায়ক সৌরভ। ম্যাচের শেষে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
কলকাতার ১৮১ রান তাড়া করতে নেমে ডেকান শুরুটা ভালই করেছিল। গিবস, সাইমন্ডসের মতো ব্যাটার বড় রান পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ ওভারে পর পর চারটি ডট বল করেন শেন বন্ড। তাতেই ডেকানের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়।
২০১৪ সালের আইপিএল ফাইনালের ম্যাচটির উল্লেখও আবশ্যিক। সেই ম্যাচেও শেষ ওভারে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন নাইটরা। পঞ্জাবের ১৯৯ রানের জবাবে মণীশ পাণ্ডে ৯৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু কলকাতা ২০০ রান সফল ভাবে তাড়া করতে পারবে, ভাবেননি সমর্থকেরাও।
ফাইনালে রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ১০ ওভারে ১০০, ১৫ ওভারে ১৫০ এবং ১৯.৩ ওভারে ৩ বল বাকি থাকতেই ২০০ রান তুলে দিয়েছিলেন নাইটরা। ম্যাচের রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তিতে ভূমিকা ছিল পীযূষ চাওলার। তিনি সে দিন ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে পাঁচ বলে ১৩ রান করেছিলেন। আইপিএল জয়ের শিরোপা উঠেছিল কলকাতার মাথায়।
২০২২ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধেও একটি স্মরণীয় জয় পায় কেকেআর। সেই ম্যাচে নায়ক হয়ে জ্বলে উঠেছিলেন বোলার প্যাট কামিন্স। এই অস্ট্রেলীয়র ব্যাটে ভর করে চার ওভার বাকি থাকতে থাকতেই রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন নাইটরা।
সেই ম্যাচে আইপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম অর্ধশতরান করেন কামিন্স। মাত্র ১৪ বলে ৫০ রান করেছিলেন, খেলা শেষে কামিন্সের নামের পাশে লেখা হয় ১৫ বলে ৫৬ রান। মুম্বইয়ের ১৬১ রান শ্রেয়সের কলকাতা তুলে দেয় ১৬ ওভারের আগেই।
গত বছর আইপিএলের শুরুতেই ধোনির চেন্নাইয়ের মুখোমুখি হয়েছিল কলকাতা। সেই ম্যাচে ১৩২ রান করেছিল সিএসকে। ধোনি একাই করেছিলেন অর্ধশতরান। কিন্তু টুর্নামেন্টের শুরুতে ধোনিদের মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নেন নাইট অজিঙ্ক রাহানে এবং অধিনায়ক শ্রেয়স।
২০২১ সালের নকআউট পর্বের ম্যাচে দিল্লিকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল কলকাতা। সেই ম্যাচের পরিস্থিতিও ছিল টানটান, রুদ্ধশ্বাস। ম্যাচে জয়ের জন্য ১৩৬ রান প্রয়োজন ছিল নাইটদের। ১ বল বাকি থাকতে জয় ছিনিয়ে নেন তাঁরা।
ম্যাচটির প্রথম ১০ ওভারে কলকাতার একটিও উইকেট পড়েনি। শুভমন গিল এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ার মিলে ৭৬ রান করেছিলেন ১০ ওভারে। কিন্তু তার পর মাত্র ৭ বলে পর পর ৬টি উইকেট হারিয়ে টালমাটাল হয়ে যায় নাইটদের ভিত।
শেষ ওভারে হাতে যখন আর মাত্র ২ উইকেট বাকি, রাহুল ত্রিপাঠী অশ্বিনের বলে ছয় মেরে কলকাতাকে জেতান। আইপিএলের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে দিল্লির বিরুদ্ধে কেকেআরের এই জয়।
কেকেআরের সর্বকালের সেরা জয়গুলির তালিকায় রাখতেই হবে গুজরাতের বিরুদ্ধে রবিবারের ম্যাচটিকে। যে ম্যাচে জেতার কথা কেউ কখনও ভাবতেই পারেননি, ‘অখ্যাত’ রিঙ্কুর ব্যাটে সেই অবিশ্বাস্য জয়ের স্বাদ পেয়েছে নাইট শিবির। চলতি বছর আইপিএলের দৌড়ে কেকেআরকে অক্সিজেন জোগাবে রবিবারের এই ম্যাচ।