দেশের অন্যতম দামি বাজার। এখানে যাঁরা কেনাকাটা করতে আসেন তাঁরা কেউই হেঁটে আসেন না। সকলেই মার্সিডিজ় বা বিএমডব্লিউ, পোর্শে চড়ে এসে কেনাকাটার পর্ব সেরে ফিরে যান।
মূলত ভারত ভাগের পর উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের উদ্বাস্তুদের জন্য জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল এখানে। এখন সেটিই দিল্লির একটি আভিজাত্যপূর্ণ ও জনপ্রিয় বাজারে পরিণত হয়েছে।
বেশ কিছু দিন আগে পর্যন্ত এখানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গান্ধীর। দেশি-বিদেশি পণ্যের পাশাপাশি মরসুমি সব্জি কিনতে প্রায়ই আসতেন তিনি। এমনটাই দাবি সেখানকার ব্যবসায়ীদের।
আজহারউদ্দিনের মতো ক্রিকেট তারকা থেকে রানি মুখোপাধ্যায়ের মতো বলি নায়িকারাও প্রায়ই আসতেন এই খান মার্কেটে।
শহরের কেন্দ্রস্থলে, ইন্ডিয়া গেটের কাছে অবস্থিত খান মার্কেট হল দিল্লির অধিবাসীদের একটি অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। একই সঙ্গে কেনাকাটা ও পেটপুজোর বন্দোবস্ত রয়েছে এই বাজারটিতে।
১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইউ আকৃতির দ্বিতল এই মার্কেট কমপ্লেক্সে মূলত ১৫৪টি দোকান এবং ৭৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ‘সীমান্ত গান্ধী’ খান আবদুল গফ্ফর খানের স্মৃতির উদ্দেশে খান মার্কেটের নামকরণ করা হয়েছে।
সাড়ে ১৫ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা বর্তমানে রাজধানীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল বাণিজ্যিক রিয়্যাল এস্টেটে পরিণত হয়েছে খান মার্কেট।
এখানে রয়েছে নামীদামি ডিজ়াইনার বুটিক, সুপরিচিত ব্র্যান্ডের আধুনিক বিপণি, অলঙ্কার বিপণি, বইয়ের দোকান, রেস্তরাঁ, আসবাবপত্রের দোকান। রয়েছে রং এবং হার্ডঅয়্যারের দোকান। ইলেকট্রনিক্স, রান্নাঘরের জিনিসপত্রের নানা সম্ভারও বিক্রি হয় এখানে।
নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত প্রথম তলা জুড়ে থাকতেন বাসিন্দারা। তার পর ধীরে ধীরে দখলদার ও বহুতল ব্যবসায়ীদের আগ্রাসনের কারণে বাসিন্দারা নিজেদের অংশ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এ ভাবেই বসতবাড়ি পাল্টে গড়ে ওঠে আস্ত একটা বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ডের বার্ষিক ‘মেন স্ট্রিটস অ্যাক্রোস দ্য ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট’ অনুসারে খান মার্কেট ভারতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল খুচরো বাজার হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, খান মার্কেটের মাসিক ভাড়া ১২৫০ টাকা প্রতি বর্গফুট।
নিউ ইয়র্কের ফিফ্থ অ্যাভিনিউ বিশ্বের সবচেয়ে দামি খুচরো বাজার হিসাবে শীর্ষস্থানে রয়েছে। মিলানের ভায়া মন্টেনাপোলিওন একটি স্থান লাফিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে হংকংয়ের সিম শা সুই বাজারকে সরিয়ে।
কিন্তু এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন খান মার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জীব মেহরা। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কালে ৪৬৪ বর্গফুট জায়গার জন্য খান মার্কেটের একটি দোকানের মাসিক ভাড়া পৌনে নয় লক্ষ টাকা।
খান মার্কেটের দোকানগুলির প্রত্যেকটি বিপণি আলাদা থিম দিয়ে সাজানো। সেই অনুযায়ী রয়েছে অন্দরসজ্জাও।
ফ্যাশনপ্রেমী এবং ট্রেন্ডসেটারদের জন্য খান মার্কেটের ডিজ়াইনার বুটিক, বিলাসবহুল ব্র্যান্ড এবং স্টাইলিশ বিপণি যেন স্বর্গ।
তবে এখানকার দোকানগুলির বেশির ভাগ ক্রেতাই মূলত উচ্চবিত্ত শ্রেণির। তারকা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাই এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। তাই বেশির ভাগ পণ্যের দামই চড়া।