Security Breach in Parliament

১৩ ডিসেম্বর সংসদের ‘ভিত’ নাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি আগে থেকেই ছিল! আমেরিকায় বসে ছক কষেন ‘অন্য চক্রী’?

বুধবার সংসদের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। উঠেছে বিভিন্ন প্রশ্ন। কেন এই হানা? কী উদ্দেশ্য ছিল অভিযুক্তদের, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে সাংসদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৮
Share:
০১ ২৫

বুধবার দুপুর ১টা। লোকসভায় শীতকালীন অধিবেশনের কার্যক্রম চলছিল। কিছু পরে জ়িরো আওয়ারে হঠাৎই দর্শক আসন থেকে নীচে, সাংসদদের বসার জায়গায় ঝাঁপ মারেন দুই যুবক। একের পর এক রংবোমা ছুড়তে থাকেন এ দিকে-ও দিকে। ঘন হলুদ ধোঁয়ায় ঢেকে যায় লোকসভার মূল অধিবেশন কক্ষের একাংশ। সাংসদদের চোখেমুখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

০২ ২৫

প্রায় একই সময়ে সংসদ ভবনের বাইরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ঢুকে ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান তোলেন অন্য এক যুবক এবং এক মহিলা। তাঁদের হাতেও ছিল ‘স্মোক গ্রেনেড’।

Advertisement
০৩ ২৫

সেই ঘটনায় ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। উঠেছে বিভিন্ন প্রশ্ন। কেন এই হানা? কী উদ্দেশ্য ছিল অভিযুক্তদের? একাধিক প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে সাংসদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও।

০৪ ২৫

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তদন্তকারীদের অনুমান, লোকসভায় নিরাপত্তা টপকে ভিতরে ঢুকে ‘রংবাজি’ নিয়ে তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় মোট ছ’জন জড়িত ছিলেন। যার মধ্যে ইতিমধ্যেই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন, সাগর শর্মা, মনোরঞ্জন ডি, অমল শিন্ডে, নীলম আজাদ এবং বিশাল শর্মা। তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। তবে এখনও ষষ্ঠ জনকে গ্রেফতার করা যায়নি। তাঁর খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।

০৫ ২৫

পুরো ঘটনার মূলচক্রী কে, তা নিয়েও তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। আর সেই তদন্তের সময়ই উঠে আসছে এক পরিচিত নাম। যিনি ১৩ ডিসেম্বর, অর্থাৎ বুধবার দিনটিতেই নতুন সংসদ ভবনে হামলা চালানোর হুমকি আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিলেন।

০৬ ২৫

তিনি আর কেউ নন, খলিস্তানি নেতা গুরুপতবন্ত সিংহ পান্নুন। কয়েক দিন আগেই ১৩ ডিসেম্বর সংসদ ভবনে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।

০৭ ২৫

ঘটনাচক্রে ১৩ ডিসেম্বরই সংসদ ভবনে জঙ্গি হামলার কালো ইতিহাস রয়েছে। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় ১৩ ডিসেম্বর সংসদ ভবনে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হামলায় ন’জন নিহত হয়েছিলেন। বুধবারই ছিল সেই হামলার ২২ বছর পূর্তি।

০৮ ২৫

সম্প্রতি পান্নুনের নতুন একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে একটি পোস্টার। পোস্টারের এক দিকে ২০০১ সালে সংসদ ভবনে হামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আফজল গুরুর ছবি। অন্য দিকে পান্নুনের ছবি। তার নীচে লেখা ছিল, ‘কাশ্মীর থেকে খলিস্তান’।

০৯ ২৫

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী সেই ভিডিয়োতে পান্নুনকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘১৩ ডিসেম্বর বা তার আগে সংসদের ভিত নাড়িয়ে দেব।’’ যদিও সেই ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

১০ ২৫

পান্নুনের হুমকির মুখে সংসদ ভবনের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার চেষ্টা করা হয়। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি ছিল, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর ‘কে২’ (কাশ্মীর-খলিস্তান) ডেস্ক সক্রিয় রয়েছে পান্নুনের পিছনে।

১১ ২৫

পান্নুনের হুমকিতে থাকা সেই ১৩ তারিখেই সংসদের নতুন ভবনের অন্দরে এবং বাইরে ঘটে গেল রং নিয়ে চার জনের তাণ্ডব চালানোর ঘটনা। তাই পুরো বিষয়টি পান্নুনের হাত রয়েছে কি না, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। যদিও এখনও পর্যন্ত বুধবারের ওই ঘটনায় পান্নুনের জড়িত থাকার বিষয়ে কোনও তথ্য তদন্তকারীদের হাতে উঠে আসেনি।

১২ ২৫

কে এই পান্নুন? পঞ্জাবের অমৃতসরের খানকোট গ্রামে পান্নুনের জন্ম এবং বড় হওয়া। পরবর্তী কালে তিনি খলিস্তানি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি ভারতে নিষিদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)-এর প্রধান উপদেষ্টা এবং মুখপাত্র।

১৩ ২৫

পান্নুন সক্রিয় ভাবে বার বার খলিস্তানের পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন। পঞ্জাবের মধ্যে ‘স্বাধীন এবং সার্বভৌম’ রাষ্ট্র গড়ার দাবিও জানিয়েছেন। আমেরিকা, কানাডা এবং ব্রিটেন-সহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে খলিস্তানপন্থীদের একজোট করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গত, সেই দেশগুলিতে সক্রিয়ও রয়েছে এসএফজে।

১৪ ২৫

২০১৯ সালের ১০ জুলাই এসএফজেকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্র। ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতার জন্য এই সংগঠন বড়সড় হুমকি বলেও কেন্দ্র জানিয়েছিল।

১৫ ২৫

২০২০ সালে পান্নুনকে জঙ্গি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ইন্টারপোলকে ‘রেড কর্নার নোটিস’ জারি করার অনুরোধও জানায়। যদিও এ বিষয়ে আরও তথ্য চেয়ে সেই আবেদন ফেরত পাঠায় ইন্টারপোল।

১৬ ২৫

পান্নুন আমেরিকা এবং কানাডার দ্বৈত নাগরিক। কানাডায় বসে পান্নুনের সংগঠন ভারত-বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রচার করে চলেছে বলে জানিয়েছে এনআইএ। ভারত সরকার পান্নুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কানাডা সরকারকে অনুরোধও জানালেও তাতে ফল মেলেনি। বরং তা নিয়ে দু’দেশের সম্পর্কের জটিলতা বেড়েছে।

১৭ ২৫

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকারের মদতে সে দেশে বসে পান্নুন ধারাবাহিক ভাবে ভারত বিদ্বেষী প্রচার চালাচ্ছেন বলে নয়াদিল্লির অভিযোগ।

১৮ ২৫

কানাডায় আশ্রয় নেওয়া ওই খলিস্তানি নেতা গত সেপ্টেম্বরে সে দেশে বসবাসকারী হিন্দুদের উপরও হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এর পর তাঁর চণ্ডীগড়ের বাড়ি এবং অমৃতসরের জমি বাজেয়াপ্ত করেছিল এনআইএ।

১৯ ২৫

পঞ্জাবে পান্নুনের বিরুদ্ধে ২২টি অপরাধের মামলা রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি দেশদ্রোহিতার। এসএফজের বিরুদ্ধে কানাডার পাশাপাশি, আমেরিকা এবং ব্রিটেনে ভারতীয় দূতাবাসে হামলার অভিযোগ রয়েছে।

২০ ২৫

এর আগে বহু বার ভারতে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন পান্নুন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালের দিন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে নাশকতার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি, আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসেও নয়াদিল্লিতে হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এমনকি, সম্ভাব্য হামলাস্থল হিসাবে দিল্লির লালকেল্লা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

২১ ২৫

একটি ভিডিয়োবার্তায় (আনন্দবাজার অনলাইন তার সত্যতা যাচাই করেনি) তিনি জানান, ২০২৪ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন হবে ‘ডি ডে’ (বিজয় দিবস) এবং লালকেল্লা ‘গ্রাউন্ড জ়িরো’ (সাধারণত বিস্ফোরণস্থল চিহ্নিত করতে এই পরিভাষা ব্যবহৃত হয়) হয়ে যেতে পারে!

২২ ২৫

সম্প্রতি, আমেরিকার একটি রিপোর্টে পান্নুনের উপর প্রাণঘাতী হামলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে ওই প্রতিক্রিয়া দেন তিনি। অন্য ওই ভিডিয়োয় (আনন্দবাজার অনলাইন সেই ভিডিয়োর সত্যতাও যাচাই করে দেখেনি) ‘দিল্লি বনেগা খলিস্তান’ (দিল্লি খলিস্তান হবে) বলেও আওয়াজ তুলতে দেখা গিয়েছিল পান্নুনকে।

২৩ ২৫

প্যালেস্তেনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আল কাশিম ব্রিগেড যে ভাবে ২০ মিনিটে ৫,০০০ রকেটহানায় ইজ়রায়েলের বিস্তীর্ণ অংশকে বিধ্বস্ত করেছিল, ভারতেও সেই ধাঁচে হামলা চালানো হবে বলে হুমকিও দিতে শোনা গিয়েছিল পান্নুনকে।

২৪ ২৫

অক্টোবর মাসে প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়োবার্তায় (সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ইজ়রায়েলের পরিণতি থেকে ‘শিক্ষা নেওয়ার’ বার্তা দিয়ে পান্নুন বলেছিলেন, ‘‘ভারত যদি পঞ্জাবে দখলদারি কায়েম রাখতে চায়, তবে এমনই প্রতিক্রিয়া হবে।’’

২৫ ২৫

একই ভাবে ১৩ ডিসেম্বরও ‘সাংসদের ভিত নাড়িয়ে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিলেন পান্নুন। বুধবারের সংসদের ঘটনার নেপথ্যে তাঁরই হাত রয়েছে কি না, তা তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন বলে সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement