Kerala

রাতে নিজে থেকে বেজে ওঠে পিয়ানো, গা ছমছম করে দিনেও! কেরলে বেড়ে চলেছে ‘ভূতের বাড়ি’

ভাঙাচোরা গেট। দরজা আর জানলা আঁকড়ে রেখেছে মাকড়সার জাল। কোচির এক গ্রামে ২০ নম্বর বাড়িতে গত ২৩ বছর কারও পা পড়েনি।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৩ ১২:১২
Share:
০১ ১৫

ভাঙাচোরা গেট। দরজা আর জানলা আঁকড়ে রেখেছে মাকড়সার জাল। কেরলের কোচির এক গ্রামে ২০ নম্বর বাড়িতে গত ২৩ বছর ধরে কারও পা পড়ে না। তবে প্রতিবেশীরা মানতে নারাজ। জানিয়েছেন, ওই বাড়িতে রাতের অন্ধকারে ‘তেনাদের’ আনাগোনা বেড়ে যায়। কেউ নাকি আবার পিয়ানোতে সুরও ভাজে। রাতে ওই ২০ নম্বর বাড়ির আশপাশে পারতপক্ষে স্থানীয়রা যাতায়াত করেন না। কেরলে এ রকম ‘ভূতুড়ে বাড়ি’র সংখ্যা নেহাত কম নয়। এর জন্য অনেকেই সরকারকেই দায়ী করেন।

০২ ১৫

কোচির ২০ নম্বর বাড়ির ভূত-রহস্য খুব শিগগিরই প্রকাশ্যে এসেছিল। জানা গিয়েছে, ভূত বা পেত্নী নয়, বরং ইঁদুরেরা পিয়ানো বাজায়! দীর্ঘ দিন বাড়িতে কেউ থাকতেন না। কলিং বেলের বিদ্যুৎ সংযোগ দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। রাতে ইঁদুরেরা তারের উপর দিয়ে হাঁটাচলা করত। তখনই টুং টাং করে বেজে উঠত কলিং বেল।

Advertisement
০৩ ১৫

তবে শুধু ২০ নম্বর নয়, কেরলে এ ধরনের ভূতুড়ে তথা পরিত্যক্ত বাড়ির সংখ্যা ১১ লক্ষ ৯০ হাজার। সমস্যা হল, এই লাখ লাখ পরিত্যক্ত বাড়ির ভবিষ্যৎ কী? কেনই বা এই রাজ্যে পরিত্যক্ত বাড়ির সংখ্যা এত বেশি?

০৪ ১৫

পূর্বপুরুষের ভেঙে পড়া ভিটে থেকে হাল আমলে তৈরি ঝাঁ চকচকে বাংলো— কেরলে পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকায় রয়েছে সবই। বাড়ির মালিকদের বেশির ভাগই থাকেন প্রবাসে। এ সব বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ, জল— সবই রয়েছে। ২০১১ সালের জনগণনার পরিসংখ্যান বলছে, কেরলে মোট এক কোটি বাড়ির মধ্যে ১১ শতাংশই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যেখানে গোটা দেশে যত বাড়ি রয়েছে, তার মধ্যে ৭.৪৫ শতাংশ পরিত্যক্ত। গড় বিচার করলে গোটা দেশের থেকে পরিত্যক্ত বাড়ির নিরিখে এগিয়ে কেরল।

০৫ ১৫

২০২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করে কেরল সরকার। তখন একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, পরিত্যক্ত বাড়ির উপর অতিরিক্ত করা চাপানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। বিশেষত যে পরিত্যক্ত বাড়ির মালিক বিদেশে থাকেন বা যাঁদের একাধিক বাড়ি রয়েছে, তাঁদের থেকে অতিরিক্ত সম্পত্তি কর আদায় করা হবে। যদিও সেই প্রস্তাব খারিজ হয়। কারণ তাতে প্রভাবিত হতে পারে রাজ্যের অর্থনীতি।

০৬ ১৫

এই বিপুল সংখ্যক পরিত্যক্ত বাড়ির জন্য কেরল সরকার এবং তাদের নীতিকেই দায়ী করছে ব্যবসায়ী মহল। ৬৮ বছরের ব্যবসায়ী সজীবন জানিয়েছেন, কোচির এক অভিজাত গ্রামে ৪০টি বাংলো মধ্যে মাত্র ২৮টিতে মানুষ বসবাস করেন। বাকিগুলিতে ইঁদুর-বাদুড়ের বাস। রাজ্যের বাকি অভিজাত আবাসনগুলিরও একই অবস্থা।

০৭ ১৫

কেরলে পরিত্যক্ত বাড়ির সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক। তার অন্যতম কারণ, এ রাজ্যে প্রবাসীর সংখ্যা বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, ৩০ লক্ষ মালয়ালি বিদেশে থাকেন। শুধু যে প্রবাসীর সংখ্যা এ রাজ্যে বেশি তা-ই নয়, বাসিন্দাদের গড় বয়সও বেশি। বহু পরিত্যক্ত বাড়ির বাসিন্দা আর বেঁচেও নেই।

০৮ ১৫

দেখা গিয়েছে, বাড়ির মালিক মারা গিয়েছেন। সন্তানেরা বিদেশে থাকেন। কেউ দেশে ফিরে পৈতৃক বাড়ি মেরামতের চেষ্টা করেন না। কিছু কিছু বাড়ি নিয়ে আবার শরিকি ঝামেলা রয়েছে। মামলা চলছে। ফলে বছরের পর বছর পরিত্যক্ত হয়ে সেগুলি পড়ে রয়েছে। স্থানীয়রা ‘ভূতুড়ে’ বলে দাগিয়ে দিয়েছেন।

০৯ ১৫

এই পরিত্যক্ত বাড়ি তৈরি নিয়ে কেন কড়া কোনও পদক্ষেপ করতে চায় না কেরল সরকার? কেন বাজেট অধিবেশনের সময় প্রস্তাব এনেও খারিজ করে দিতে হয়? উত্তর হল, এই নিয়ে কড়াকড়ি করলে রাজ্যের অর্থনীতি ধাক্কা খাবে।

১০ ১৫

প্রবাসে গিয়ে টাকা রোজগার করে মালয়ালিরা দেশে পাঠান। সেই টাকায় প্রথমেই বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেন তাঁদের আত্মীয়স্বজন। মালয়ালিদের কাছে দেখনদারির অন্যতম উপায় হল এক বা একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি বা ক্রয়। কেরল রীতি মেনে ঢালু চালের বাড়ি, সামনে বাগান, সুইমিং পুল, বিশাল বারান্দা— কেরলের প্রায় সব শহরে, গ্রামে এ ধরনের বাড়ি আকছাড় দেখা যায়। সেগুলির বেশির ভাগই বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে।

১১ ১৫

অনেক প্রবাসী আবার বিনিয়োগের জন্য একের পর এক বাড়ি, ফ্ল্যাট কিনে চলেন। বছরে হয়তো এক বার দেশে এসে সে সব বাড়িতে থাকেন। তাতে কী? রিয়েল এস্টেটে তাঁরা বিনিয়োগ করেই চলেন। এতে রাজস্ব ঢোকে কেরল সরকারের ঘরে।

১২ ১৫

অনেক ক্ষেত্রে আবার যৌথ পরিবার ভেঙে যায়। পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে ভাইয়েরা নিজেদের বাড়ি কিনে চলে যান। তখন সেই পৈতৃক বাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই ‘ভূতুড়ে’ হয়ে যায়।

১৩ ১৫

মালয়ালিদের রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের প্রবণতা এত বেশি বলে কেরলে প্রতি বছর প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক নির্মাণের কাজ করতে যান। এতে যেমন কর্মসংস্থান হয়, তেমনই সরকারের ঘরে আরও বেশি পরিমাণ রাজস্ব আসে। এ বার পরিত্যক্ত বাড়ির উপর অতিরিক্ত কর বসালে আখেরে সরকারেরই লোকসান।

১৪ ১৫

প্রাক্তন সাংবাদিক কেএসআর মেনন মনে করেন, সম্পত্তির উপর অতিরিক্ত কর বসানোর পরিবর্তে অর্থনীতির বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া উচিত সরকারের। প্রবাসীরাও একই কথা মনে করেন। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা এমনিতেই সম্পত্তি কর দিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত কর চাপালে বাড়ি বিক্রি করে দেবেন। আর সে রকম হলে চাপে পড়বে কেরল সরকারই।

১৫ ১৫

কেরলের অর্থমন্ত্রী বালগোপাল অতিরিক্ত কর চাপানোর কথা খারিজ করে জানিয়েছেন, এই নিয়ে শুধু ভাবনাচিন্তা চলছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রবাসীদের খুশি রাখতে যে এই পদক্ষেপ এখনই করবে না কেরল সরকার, ঘনিষ্ঠ মহলে সে ইঙ্গিতও দিয়েছেন। ফলে এখনই কেরলে ‘ভূতুড়ে’ বাড়ির সংখ্যা কমছে না। কমলে তাতে আখেরে ক্ষতি রাজ্য এবং রাজ্যবাসীরই।

সব ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement