কেরলে নরবলি-কাণ্ডে তদন্ত যত এগোচ্ছে, উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুই মহিলাকে বলি দিয়ে তাঁদের মাংস খাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা শুনে শিউরে উঠেছে গোটা দেশ।
ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মহম্মদ শফীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, কেরলের দম্পতিকে ধনসম্পত্তি বৃদ্ধির লোভ দেখিয়েছিলেন তিনি। নরবলি দিলে ধনসম্পত্তি বাড়বে, এই টোপ দিয়ে তাঁদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে শামিল করেছিলেন।
নরহত্যা এবং নরমাংস খাওয়ার অভিযোগ আগেও প্রকাশ্যে এসেছে। ভারতেই এমন অপরাধ ও নৃশংসতার নজির রয়েছে। ক্যানিবালিজম বা নরমাংস খাওয়ার ঘটনায় প্রথমেই উঠে আসে রাজা কোলন্দরের নাম।
ইলাহাবাদের বাসিন্দা কোলন্দরের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে একাধিক খুনের অভিযোগ ওঠে। ২০০১ সালে এক সাংবাদিক খুনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার পর একে একে প্রকাশ্যে আসে আরও খুনের ঘটনা।
অভিযোগ, শুধু খুন নয়, মানুষ মেরে তাঁদের মাংস খেত কোলন্দর। খুন করার পর মৃতদের শরীরের একাধিক অঙ্গ, এমনকি ঘিলুও নাকি খেয়েছে।
২০০১ সালের ১৪ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের এক স্থানীয় সাংবাদিক ধীরেন্দ্র সিংহ হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। ঘটনার সূত্রপাত সেখান থেকেই। সাংবাদিককে খুনের অভিযোগে কোলন্দরকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, তার বিরুদ্ধে এর আগে একাধিক গাড়ি চুরির অভিযোগ ছিল। মূলত, গাড়ির চালকদের গুলি করে খুন করত কোলন্দর। তার পর গাড়ি লুঠ করে নিত।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়, পুলিশ জানতে পারে, খুন করার পর মৃতদেহগুলি টুকরো টুকরো করে কাটত কোলন্দর। কিছু কিছু টুকরো রান্নাও করত বলে অভিযোগ। এই ঘটনার সঙ্গে কেরল-কাণ্ডের ছায়া পাচ্ছেন?
কোলন্দরের খামারবাড়ি থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করে পুলিশ। সেখানে তার প্রতি খুনের বিবরণ ছিল। ১৫টির বেশি খুনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পুলিশের দাবি, খুনের পর মৃত ব্যক্তির ঘিলু রান্না করে খেত কোলন্দর। আর খুলিগুলি জমিয়ে রাখত কৃতকর্মের স্মারক হিসাবে। মৃতদেহের বাকি অংশ নিকটবর্তী জলাধারে ফেলে দিত সে।
অভিযোগ, কোলন্দরের বিশ্বাস ছিল মৃত ব্যক্তির ঘিলু খেলে তার বুদ্ধি বাড়বে। প্রথম যে খুনটি সে করেছিল, সেই ব্যক্তি ছিলেন কায়স্থ। কায়স্থদের ঘিলুতে অনেক বুদ্ধি থাকে বলে ধারণা ছিল তার। তাই তাঁকে বেছে নিয়েছিল।
কোলন্দরের কাজে সাহায্য করতেন তার স্ত্রী ফুলন দেবী। তবে কোলন্দর বা ফুলন দেবী কোনওটাই আসল নাম নয়। পুলিশ জানতে পারে, কোলন্দরের আসল নাম রাম নিরঞ্জন এবং তাঁর স্ত্রীর আসল নাম গোমতী।
খুন এবং নরমাংস খাওয়ার পর কোলন্দর জমানো মাথার খুলিগুলি নিয়ে ‘তন্ত্রসাধনা’য় বসত বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রেও কেরল-কাণ্ডের ছায়া রয়েছে। খুলিগুলির সঙ্গে নাকি সে কথাও বলত। তার পর দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখত সেগুলি।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিটি মাথার খুলির পিছনে মৃত ব্যক্তির পদবি লিখে রাখত কোলন্দর। ধর্ম, বর্ণ, জাতি তাঁর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
জানা যায়, সাংবাদিক ধীরেন্দ্র কোলন্দরের কীর্তি জানতে পেরে গিয়েছিলেন। তাই তাঁকেও মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ২০১২ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয় কোলন্দরের। বর্তমানে উন্নাওয়ের একটি জেলে রাখা হয়েছে তাকে।
সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়ান প্রিডেটর: দ্য ডায়েরি অফ এ সিরিয়াল কিলার’ নামে নেটফ্লিক্সে একটি ওয়েব সিরিজ় মুক্তি পেয়েছে। সেখানে কোলন্দরের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।