বলিউডে দুই নায়িকার মধ্যে নাকি বন্ধুত্ব হয় না। সেই দুই নায়িকা যদি সমসাময়িক হন, তা হলে তো কথাই নেই। কিন্তু এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছিলেন বলিপাড়ার এক সময়ের পয়লা নম্বর নায়িকা করিনা কপূর খান এবং এষা দেওল। করিনা-এষা একে অপরের সখী ছিলেন। তবে সেই নিবিড় বন্ধুত্ব বেশি দিন টেকেনি। দুই নায়িকার মধুর সম্পর্কের স্বাদ বদলে গিয়েছিল। কিন্তু কেন?
করিনা এবং এষা দু’জনেই তারকা পরিবারের কন্যা। করিনা বলিপাড়ার বিখ্যাত কপূর পরিবারের সদস্যা। আর এষার বাবা-মা তারকা জুটি ধর্মেন্দ্র এবং হেমা মালিনী। ফলে দু’জনেই কেরিয়ার হিসাবে অভিনয়কে বেছে নেন।
এষা এবং করিনার বলিউডে যাত্রাপথও প্রায় একই সঙ্গে শুরু হয়। ২০০২ সালে নায়িকা হিসেবে ‘কোই মেরে দিল সে পুছে’ ছবির হাত ধরে বি-টাউনে পা রেখেছিলেন হেমামালিনী-কন্যা। করিনা অবশ্য এর ২ বছর আগে বলিউডে পা রেখেছিলেন। ২০০০ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘রিফিউজি’। এই ছবির হাত ধরেই অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল করিনার।
বয়সের অঙ্কে করিনা এবং এষা পিঠোপিঠি। ১৯৮০ সালে জন্ম করিনার। এষার জন্ম ১৯৮১ সালে। একই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন তাঁরা। ফলে সিনে দুনিয়ায় আসার আগেই তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল।
শোনা যায়, সেই সময় একে অপরের ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ ছিলেন করিনা এবং এষা। করিনার সঙ্গে অভিনেতা শাহিদ কপূরের প্রেমের কথা তো সর্বজনবিদিত। সেই সময় করিনা-শাহিদের সম্পর্কের খুঁটিনাটি জানতেন এষা। এমনকি, এই সম্পর্কের কথা চাউর হওয়ার আগেই তা জানতেন এষা।
শুধু বন্ধুই নয়। এষাকে নাকি ছোট বোন হিসাবে দেখতেন করিনা। এক বার এক সাক্ষাৎকারে এষা প্রসঙ্গে করিনা বলেছিলেন, ‘‘ও আমার অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু... ছোট বোনের মতো করে দেখি ওকে। কী করা উচিত, কী করা উচিত নয়— এ সব বলি ওকে। আমাদের দুজনের পছন্দ-অপছন্দও এক।’’
বোঝাই যাচ্ছে, করিনা এবং এষার মধ্যে কতখানি গলায় গলায় ভাব ছিল। কিন্তু কী এমন ঘটল যে, এই বন্ধুত্ব ভেঙে গেল? বলিপাড়ায় কান পাতলে এই নিয়ে অনেক কথাই শোনা যায়।
২০০৩ সালে মুক্তি পেয়ছিল ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে’ ছবি। যেখানে অভিনয় করেছিলেন এষা এবং জায়েদ খান। এই ছবির সূত্রেই জায়েদ এবং এষার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। শোনা যায়, সেই সময় নাকি জায়েদের প্রেমে আচ্ছন্ন ছিলেন হেমা-কন্যা।
তবে জায়েদের সঙ্গে কন্যার এ হেন সম্পর্ক একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি হেমা। জায়েদের সঙ্গ ছাড়তে এষাকে বোঝানোর দায়িত্ব করিনাকে দেন তিনি। করিনা যে হেতু এষার ভাল বন্ধু, তাই হেমা ভেবেছিলেন করিনা এই নিয়ে তাঁর কন্যাকে বোঝালে তিনি বুঝবেন।
হেমার কথামতো এই নিয়ে এষাকে বোঝান করিনা। কিন্তু এষা তখন জায়েদের প্রেমে এতটাই মগ্ন যে করিনার কথা শোনেননি। সেই নিয়ে করিনা এবং এষার মধ্যে ঝামেলার সূত্রপাত ঘটে।
করিনা এবং এষার বন্ধুত্বে যখন সবে ঝামেলা শুরু হয়েছে, সেই সময় নাকি আগুনে ঘি ঢালতে আসরে নামেন অভিনেতা হৃতিক রোশনের স্ত্রী সুজ়ান খান। সুজ়ানের ভাই আবার জায়েদ।
শোনা যায়, করিনার বিরুদ্ধে এষার কান ভাঙান সুজ়ান। কারণ করিনাকে সেই সময় একেবারেই পছন্দ করতেন না হৃতিক-পত্নী।
সেই সময় হৃতিক রোশনের সঙ্গে করিনার সম্পর্কের গুঞ্জনে গমগম করছিল বলিপাড়া। আর তাই করিনাকে একেবারেই পছন্দ করতেন না সুজ়ান। তাই করিনার বিরুদ্ধে এষাকে নানা কথা বলেন হৃতিক-ঘরনি। যার জেরে ক্রমশ অবনতি ঘটতে থাকে করিনা এবং এষার বন্ধুত্বের।
করিনা, এষার বন্ধুত্ব জোড়া লাগাতে আসরে নেমেছিলেন মালাইকা অরোরার বোন অমৃতা অরোরা। কিন্তু ব্যর্থ হন। অমৃতার সঙ্গেও ঝামেলা বাধে এষার। অমৃতাকে নাকি চড় মারেন তিনি। সেই সময় করিনার পাশে দাঁড়ান অমৃতা। আর এর পরই এষার সঙ্গে বন্ধুত্বে ইতি টানেন করিনা।
এর পর করিনা এবং এষার কেরিয়ার দুই খাতে বয়েছে। বলিপাড়ার সম্রাজ্ঞীর আসন দখল করেছিলেন করিনা। কিন্তু কেরিয়ারে তেমন সফল হননি এষা।
একই বছরে দু’জন বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন। সাল ২০১২। তার পর আর সে ভাবে করিনা এবং এষাকে একসঙ্গে দেখা যায়নি।
তবে ২০১৯ সালে একটি ঘটনার পর গুঞ্জন ছড়ায় যে, করিনা এবং এষার বন্ধুত্ব নাকি জোড়া লেগেছে। সেই বছর এষার কন্যা রাধ্যা তখতানির জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিলেন করিনার পুত্র তৈমুর আলি খান। এই সূত্রেই খবর ছড়ায় যে, তিক্ততা ভুলে আবার নাকি কাছাকাছি এসেছেন করিনা এবং এষা।