মধ্য তিরিশে পৌঁছননি। তার আগেই বলিউডে নিজের ঘর গুছিয়ে নিয়েছেন। তবে তা করতে গিয়ে অন্য নায়িকাদের মতো ইঁদুর দৌড়ে নাম লেখাননি। অনুষ্কা শর্মা সম্পর্কে বলিউডের অন্দরে নাকি এমন সব কথাই আনাগোনা করে।
বলিউডের অন্দরের শোনা কথা বিশ্বাস করতে পারেন। ৩৩ বছরের অনুষ্কাকে তো অন্য নায়িকাদের মতো ঝুড়ি ঝুড়ি ফিল্মে দেখা যায় না। বরং ফি বছরে খুব বেশি হলে দু’তিনটির বেশি ফিল্ম করেন না। কিন্তু যে ফিল্মই করেছেন, তাতে নায়িকাকে শুধুমাত্র আসবাবের মতো ব্যবহার করা হয়নি।
অনুষ্কার পেশাদার জীবনের বয়স এখনও পুরোপুরি ১৪ হয়নি। তবে এর মধ্যেই নায়িকার ভূমিকায় অভিনয়ের পাশাপাশি ‘এনএইচ-১০’, ‘পরি’, ‘বুলবুল’-সহ একাধিক ফিল্মে প্রযোজকের চেয়ারে বসেছেন। তাতেও এসেছে সাফল্য!
পেশাদার জীবনের ফাঁকে নিজের সংসারও পেতে নিয়েছেন অনুষ্কা। কখন যে টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলীর সঙ্গে তাঁর মন দেওয়ানেওয়া শুরু হল, তা টের পাননি অনেকে। তবে এক বার তাঁদের সম্পর্কের আঁচ পেতেই হামলে পড়েছিল তাবড় সংবাদমাধ্যম। বিরাট-অনুষ্কার জুটির নামকরণও করে ফেলে তারা— ‘বিরুষ্কা’!
প্রেম পর্বের মাঝে পরিণয়ের পথেও হেঁটে ফেলেছেন অনুষ্কা। এক সময় ইটালির সাজানোগোছানো ছাদনাতলায় ‘বিরুষ্কা’র ছবি তো অনেকের বিচারে বছরের সেরা ঘটনার মধ্যে একটি ছিল।
বলিউডে যে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে অনুষ্কার বেড়ে উঠেছেন, তা নাকি কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন পরিচালক কর্ণ জোহর। এক অনুষ্ঠানে ফিল্ম সমালোচক রাজীব মসন্দের কাছে সাক্ষাৎকারে তেমনই স্বীকারোক্তি ছিল কর্ণের।
কর্ণ জানিয়েছেন, গোড়ায় অনুষ্কাকে দেখে বেশ হতাশই হয়েছিলেন তিনি। সেটা ২০০৮ সালের আদিত্য চোপড়ার ফিল্ম ‘রব দে বনা দি জোড়ি’-র নায়িকা বাছাই পর্বের কথা।
আদিত্য চোপড়ার ফিল্ম ‘রব দে বনা দি জোড়ি’-তে নায়িকা হিসেবে বলিউডে প্রবেশ অনুষ্কার। তবে শ্যুটিংয়ের আগেই অনুষ্কার অভিষেকে বাধা দিয়েছিলেন কর্ণ। প্রযোজক যশ জোহরের ছেলে কর্ণ নিজেই সে কথা স্বীকার করেছেন।
শাহরুখ খানের বিপরীতে ফিল্মে অভিষেক বহু অভিনেতার কাছেই স্বপ্নের মতো। তবে অনুষ্কার সে স্বপ্ন নাকি ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন কর্ণ। তিনি জানিয়েছিলেন, অনুষ্কাকে ফিল্ম থেকে বাদ দিতে আদিত্যের কাছে দরবার করেছিলেন।
রাজীবের কাছে ওই সাক্ষাৎকারে কর্ণ বলেছেন, ‘‘অনুষ্কাকে আটকাতে খুব চেষ্টা করেছিলাম। আদিত্যকে বলেছিলাম, এই ফিল্মে অনুষ্কাকে নিয়ে কাজ কোরো না। আদিত্য আমাকে অনুষ্কার ছবি দেখিয়েছিল। তা দেখে বলেছিলাম, ‘তোমার কি মাথাখারাপ হয়ে গিয়েছে? এই নায়িকাকে নেওয়ার কথা ভাবছ?’ ’’
কর্ণের কথায় বিশেষ কর্ণপাত করেননি আদিত্য। শাহরুখের বিপরীতে আনকোরা অনুষ্কাকে নায়িকা করেছিলেন। সেই ফিল্মের শ্যুটিংয়ের সময়ও কী হয়েছিল, তা-ও জানিয়েছেন কর্ণ।
কর্ণ জানিয়েছেন, ‘রব দে বনা দি জোড়ি’-র প্রথম শ্যুটিংয়ের সময় বিয়ের সাজে বসেছিলেন অনুষ্কা। কর্ণের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘বিয়ের সাজে অনুষ্কাকে দেখে আমার মায়ের খুবই খারাপ লেগেছিল। মা আমাকে বলেছিল, ‘বেচারা যেন খাপ খাওয়াতে পারছে না!’ আমি ভাবছিলাম, এই ফিল্মের পর বলিউডে এ মেয়েটির কেরিয়ার বলতে আর কিছুই থাকবে না।’’
কর্ণের সমালোচনা সত্ত্বেও অনুষ্কার উপর আস্থা রেখে যে ভুল করেননি আদিত্য, তা প্রমাণিত হয়ে যায় ‘রব দে বনা দি জোড়ি’ মুক্তির পর। শাহরুখের পাশে পাল্লা দিয়ে নজরকাড়া অভিনয় করেন অনুষ্কা। সে বছর একটি ফিল্ম পত্রিকার বিচারে সেরা অভিনেতা ও সেরা অভিষেককারী হিসেবে মনোনীতও হন তিনি।
আদিত্যর ওই ফিল্মের বছর দুয়েকের মধ্যে অনুষ্কার সম্পর্কে নিজের মত বদলাতে বাধ্য হয়েছিলেন কর্ণ। মণীশ শর্মার ফিল্ম ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’-এ ঠোঁটকাটা শ্রুতি কক্করের ভূমিকায় অনুষ্কার অভিনয় দেখে মাত হয়ে যান তিনি। কর্ণের কথায়, ‘‘অনুষ্কার যে ফিল্ম দেখে আমার মাথা ঘুরে গিয়েছিল, তা হল ফিল্ম ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’!’’
গোড়ায় অনুষ্কার ‘কট্টর সমালোচক’ হলেও পরে তাঁর অভিনয়ের ভক্ত হয়ে যান কর্ণ। অনুষ্কাকে নিজের ফিল্মে অভিনয়ের প্রস্তাবও দেন। আর অনুষ্কা তাতে রাজিও হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে কর্ণের ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এ রণবীর কপূর, ঐশ্বর্যা রাই, ফাওয়াদ খানের মাঝে নিজের যোগ্যতা ফের এক বার প্রমাণ করেন অনুষ্কা!