খাদ্যমন্ত্রীর পদে বসে থেকে চালকল মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত ‘কাটমানি’ নিতেন তিনি। রেশন বণ্টন মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (রাজনৈতিক মহলে যিনি ‘বালু’ নামেই সমধিক পরিচিত)-এর গ্রেফতারির পরেই জানা গিয়েছিল এই রকম খবর। আদালতের শুনানিতেও এই দাবিই রাখল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বালুর ঘুষের হিসেব-নিকেশ, সবই জানা গিয়েছে সম্প্রতি।
প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী কতটা ঘুষ নিতেন, তার খতিয়ানও তুলে ধরেছে ইডি। খাদ্যমন্ত্রী হিসাবে পদাধিকার বলে ওই দফতরেরই অধীনস্ত ‘পশ্চিমবঙ্গ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ সংস্থা’র চেয়ারম্যান ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়।
ইডির দাবি, ওই সংস্থার চেয়ারম্যান থাকার সময়ে চালকল মালিকদের থেকে নিয়মিত ‘কাটমানি’ নিতেন তিনি। প্রতি কুইন্টালে ২০ টাকা করে ‘কাটমানি’ নেওয়া হত বলে ইডির দাবি।
এর আগে তদন্তে নেমে একটি ‘মেরুন ডায়েরি’ উদ্ধার করেছিলেন তদন্তকারীরা। সেই ডায়েরিতে জ্যোতিপ্রিয় মিল মালিকদের কাছ থেকে মাসে মাসে টাকা নেন বলে ইঙ্গিত ছিল বলে দাবি করে ইডি।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ‘বালু-ঘনিষ্ঠ’ মিল মালিক বাকিবুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে নেন বলে দাবি করেছে ইডি।
তা ছাড়া, এনপিজি রাইস মিল নামের একটি চালকলের অন্যতম পদাধিকারী গত ৮ ডিসেম্বর ইডির কাছে কাটমানির বিষয়ে একই বয়ান দেন বলে তদন্তকারী সংস্থাটির দাবি।
ইডির তদন্তে উঠে আসে যে, একটি আটাকলের সঙ্গে যুক্ত জনৈক কালিদাস সাহা জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর সহযোগীদের নগদে টাকা দিয়েছিলেন।
কুইন্টাল পিছু খাদ্যশস্যে এই ‘কাটমানি’ জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর সঙ্গীরা নিয়মিত নগদে নিতেন বলেও আদালতে দাবি করেছে ইডি।
সম্প্রতি বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য ওরফে ডাকু রেশন মামলাতেই গ্রেফতার হওয়ার পরে ইডি আদালতে জানিয়েছিল, একাধিক ফরেক্স সংস্থা বা বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থার মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে লেনদেন করেছেন শঙ্কর।
ওই টাকা প্রথমে বিদেশি মুদ্রায় (মূলত আমেরিকান ডলার) পরিবর্তন করে তার পর পাঠানো হয়েছে দুবাইয়ে। তার মধ্যে অন্তত ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা জ্যোতিপ্রিয়ের বলে দাবি করে ইডি।
একই সঙ্গে সন্দেশখালিতে শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে ইডির আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে এসেছে বালুর কাজের পদ্ধতি নিয়ে আরও অনেক তথ্য।
ইডিরই একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, শাহজাহানের বিরুদ্ধে মন্ত্রী বালুর টাকা ‘পার্ক অ্যান্ড লন্ডার’ (কোথাও টাকা গচ্ছিত রাখা এবং তা নয়ছয় করা)-এর অভিযোগ রয়েছে। অর্থাৎ, মন্ত্রীর টাকা উপযুক্ত ঠিকানায় পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে হাজার হাজার কোটির কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা করেছেন।
এই কাজের জন্য শাহজাহানকে শঙ্করের মতো আটটি সংস্থা তৈরি করতে হয়নি। তার কারণ, বাংলাদেশের সঙ্গে শাহজাহানের ‘যোগাযোগ’ বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। সীমান্ত এলাকায় বাড়ি তাঁর। এখান থেকেই আকছার নানা বেআইনি কার্যকলাপ হয়।
বালুর টাকার সন্ধানে নেমে যখন বাংলাদেশেও টাকা যাওয়ার তথ্য হাতে আসে ইডির, তখন ইডি আধিকারকেরা সীমান্ত এলাকায় এসে রেইকি করেছিলেন। টাকা জলপথে যায়, না স্থলপথে, সেই তথ্যও সংগ্রহ করেছিলেন তাঁরা। তবে শাহজাহানের নাম তাঁরা নিশ্চিত ভাবে জানতে পারেন বালুর সূত্রেই।
‘মেয়েকে লেখা’ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিঠি থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছিল ইডি। সেই চিঠিতে শঙ্করের নাম ছিল বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন শঙ্করের স্ত্রী।
তিনি জানান, ইডির কাছ থেকেই এ কথা জেনেছিলেন তিনি। সম্প্রতি একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই চিঠিতেই নাম ছিল সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহানেরও।