পরিচয় গোপন রেখে কম দামে বাড়ি কিনেছেন বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি! আর সেই তথ্য ফাঁস হতে রাগে মামলাই করে ফেলেছেন একদা বাড়ির মালিক তথা ব্রাজিলের এক ধনকুবের।
নিজের প্রাসাদোপম বাড়ি বিক্রি করেছিলেন ব্রাজিলিয়ান খেলনা এবং বৈদ্যুতিন পণ্য প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘টেকটো’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা লিয়ো ক্রিস। কিন্তু সেই বাড়ির ক্রেতা কে, তা টের পাননি তিনি। রিয়্যাল এস্টেট সংস্থা ডগলাস এলিম্যান এই বিক্রিবাটার মধ্যস্থতা করেছিল।
পরে তিনি জানতে পারেন তাঁর ‘মিয়ামি বিচ ম্যানসনের’ ক্রেতা আর কেউ নয়, অ্যামাজ়নের প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং জেফ বেজোস। ৬৬২ কোটি টাকায় লিয়ো ক্রিসের সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন প্রাসাদটি কেনেন জেফ। আর ক্রেতার নাম জানতে পেরেই বেধেছে গোল।
কম দামে বাড়ি বিক্রি করানো হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে বাড়ির পূর্বতন মালিক ক্রিস রিয়্যাল এস্টেট সংস্থা ডগলাস এলিম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
ক্রেতার সম্পর্কে তথ্য গোপন করে তাঁর সম্পত্তির অবমূল্যায়ন করা হয়েছে, এই যুক্তিতে তিনি আরও ৫০ কোটি টাকার দাবি জানিয়েছেন। ডগলাস এলিম্যানের বিরুদ্ধে ফ্লরিডার আদালতে এই মামলা দায়ের করেছেন ক্রিস।
ক্রিস অভিযোগ করেছেন, ডগলাস এলিম্যানের কর্তারা তাঁকে ক্রেতার পরিচয় সম্পর্কে বিভ্রান্ত করেছিলেন। সংস্থার সিইও জে পার্কার নাকি ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, বেজোস তাঁর প্রাসাদের ক্রেতা নন।
এই মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়েছে, পার্কার ক্রিসকে বলেছিলেন যে সম্পত্তিটি ক্লেপাচ পরিবারের জন্য কেনা হচ্ছে।
২০২১ সালের মে মাসে ক্রিস তাঁর মিয়ামি বিচ ম্যানসনটি বিক্রির জন্য ৭১৩ কোটি টাকা দর হেঁকেছিলেন। বাড়িটির জন্য ৬৬২ কোটি দর পাওয়ার পর তিনি ডগলাস এলিম্যানের কাছে জানতে চান অ্যামাজ়নের প্রাক্তন প্রধান বেজোসই এর ক্রেতা কি না।
পার্কার নাকি তাঁকে আশ্বস্ত করার পর ক্রিস তাঁর বাড়ির দর ৭.১ শতাংশ কম করতে সম্মত হন। পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে ক্রেতা প্রকৃতপক্ষে বেজোসই।
ক্রিসের আইনজীবীর বক্তব্য, ডগলাস এলিম্যান নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। কারণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুল ভাবে উপস্থাপন করার ফলে কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাঁর মক্কেলকে।
বেজোসকে ক্রেতা বলে জানলে তিনি দাম কমাতে রাজি হতেন না, এমনটাই মত ক্রিসের আইনজীবীর।
শখ মেটাতে অনেকেই নানা জিনিস কেনেন। কিন্তু বাড়ি কেনার নেশা পেয়ে বসেছে জেফকে। এর আগেও কোটি কোটি টাকা খরচ করে একাধিক বাড়ি কিনে নজিরও গড়েছেন তিনি।
তার পরেও বাড়ি ভাড়া নিতে হয় বেজ়োসকে। আর মাসে মাসে সে জন্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ভাড়া গুনতে হয় অ্যামাজ়ন কর্তাকে।
কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভাঙা জিনিস কিনতে ভালবাসেন তিনি। প্রায় পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে সে সব কিনেছেন আমেরিকান ধনকুবের।
গত বছরের মার্চ থেকে গায়ক ও বাদক কেনির থেকে একটি বাড়ি ভাড়া করে সঙ্গী লরেন স্যাঞ্চোজ়কে নিয়ে থাকছেন বেজোস।
২০২০ সালে বেজোস আমেরিকার শিল্পপতি তথা স্টুডিয়োর মালিক ডেভিড গেফেনের একটি বাড়ি কিনেছিলেন।
২০২১ সালে অ্যামাজ়নের চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও)-র পদ ছাড়েন বেজোস। যদিও সংস্থার চেয়ারম্যান থাকবেন তিনি। সংস্থার সব থেকে বেশি শেয়ারও রয়েছে তাঁরই নামে।
বিশ্বের অন্যতম বড় ই-কমার্স সংস্থা অ্যামাজ়নের প্রাক্তন সিইও নিজের জীবদ্দশাতেই সম্পত্তির অধিকাংশ বিলিয়ে দিতে চান। তবে কতটা অংশ তিনি দান-খয়রাতি করতে চান তা জানা যায়নি।
মহাকাশযাত্রা-সহ গবেষণাকারী সংস্থা ‘ব্লু অরিজিন’-এরও মালিক তিনি। টেস্লা-কর্তা ইলন মাস্কের আগে বিশ্বের ধনীতমও ছিলেন বেজোস।