আর ঠিক কী চাই জওয়ানের? এই প্রশ্নের জবাবে শুধু একটি গান শুনতে চাইল সে। তার পরেই কানে ভেসে এল ‘রামাইয়া বস্তাবইয়া’ গানটি। সেই ছবির গান নয়। এ সুর অনেক বেশি চেনা, অনেক বেশি পুরনো। ছবির এক সপ্তাহ আগে মুক্তি পাওয়া ‘জওয়ান’-এর প্রথম ঝলক শেষ হল এ ভাবেই। কিন্তু এ গানের নেপথ্যকাহিনি জানেন কি?
‘জ়িন্দা বান্দা’ এবং ‘ছলেয়া’র পর মুক্তি পায় ‘জওয়ান’ ছবিটির তৃতীয় গান ‘নট রামাইয়া বস্তাবইয়া’। কিন্তু গানের বাণীতে বার বার ‘রামাইয়া বস্তাবইয়া’ শব্দবন্ধনীটি ফিরে এলেও ‘নট’ শব্দটি গেল কোথায়? তবে কি এই গান সত্যি ‘রামাইয়া বস্তাবইয়া’ নয়?
‘রামাইয়া বস্তাবইয়া’র নেপথ্যকাহিনি জানতে হলে বলিপাড়ার স্মৃতির পাতা ঘাঁটতে হয়। ‘রামাইয়া বস্তাবইয়া’ গানটি গেয়েছিলেন মহম্মদ রফি, লতা মঙ্গেশকর এবং মুকেশ।
১৯৫৫ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় রাজ কপূর এবং নার্গিস অভিনীত ‘শ্রী ৪২০’ ছবিটি। এই ছবির পরিচালনা এবং প্রযোজনার দায়িত্বেও ছিলেন রাজ।
‘শ্রী ৪২০’ ছবির একটি গান ‘রামাইয়া বস্তাবইয়া’। মহারাষ্ট্রের একটি দোকানের টেবিলে এই গানের সৃষ্টি হয়েছিল, তা জানেন কি?
‘শ্রী ৪২০’ ছবির শুটিংয়ের সময় মাঝেমধ্যেই দলবল নিয়ে মহারাষ্ট্রের খন্ডালা যেতেন রাজ। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন সূত্রে খবর, সঙ্গীত পরিচালনা দলের সদস্য ছিলেন শঙ্কর, জয়কিষণ, শৈলেন্দ্র এবং হজরত জয়পুরী। তাঁদের সঙ্গেই খন্ডালা যেতেন রাজ।
শোনা যায় খন্ডালা যাওয়ার পথে মাঝেমধ্যেই একটি দোকানে খাওয়াদাওয়া এবং বিশ্রামের জন্য থামতেন রাজরা। তেমনই এক বার দোকানে চা এবং খাবার খেতে গিয়েছিলেন সকলে।
কর্মসূত্রে বেশ কিছু দিন হায়দরাবাদে ছিলেন শঙ্কর। তেলুগু ভাষার সঙ্গেও পরিচিতি ছিল তাঁর। ওই দোকানে রামাইয়া নামে এক কর্মী ছিলেন। তিনিও তেলুগুভাষী ছিলেন। রামাইয়ার সঙ্গে তেলুগু ভাষাতেই কথা বলতেন শঙ্কর।
এক বার দোকানে গিয়ে রামাইয়াকে চা দিতে বলেন শঙ্কর। কিন্তু রামাইয়া সেই সময় ব্যস্ত ছিলেন। তার জবাবে শঙ্কর বলে ওঠেন, ‘‘রামাইয়া বস্তাবইয়া।’’ যার অর্থ ‘রামাইয়া, তাড়াতাড়ি’।
বার বার ‘রামাইয়া বস্তাবইয়া’ বলে ডাক দিয়ে উঠছিলেন শঙ্কর। তার পর মনে মনে এই দুই শব্দ ছন্দ মিলিয়ে বলে বার বার উচ্চারণ করতে থাকেন।
জয়কিষণ সঙ্গে সঙ্গে টেবিল বাজাতে শুরু করেন। ‘রামাইয়া বস্তাবইয়া’র সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক অদ্ভুত সুরের সৃষ্টি হয়। হজরত তখন শঙ্করকে জিজ্ঞাসা করেন এই সুরের সঙ্গে কিছু যোগ করা যাবে কি না। শৈলেন্দ্র পরের লাইনটি যোগ করেন, ‘ম্যায়নে দিল তুঝকো দিয়া’। তার পরেই তৈরি হয় ‘শ্রী ৪২০’ ছবির গান ‘রামাইয়া বস্তাবইয়া’।
১৯৫৫ সালের পর আবার ‘রামাইয়া বস্তাবইয়া’ শব্দ দু’টির উপর নির্ভর করে গানের সুর বাঁধা হয়। ‘জওয়ান’ ছবির গানটির নেপথ্যে রয়েছেন অনিরুদ্ধ রবিচন্দ্র, বিশাল ডাডলানি এবং শিল্পা রাও।
‘নট রামাইয়া বস্তাবইয়া’য় নাচের দৃশ্যে অভিনয় করেন শাহরুখ এবং নয়নতারা। এর নৃত্য পরিকল্পকের ভূমিকায় ছিলেন বৈভবী মার্চেন্ট।
যদিও এই শব্দ দু’টির ব্যবহার বলিউড আগেও দেখেছে। ২০১৩ সালে প্রভু দেবার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘রামাইয়া বস্তাবইয়া’ নামের একটি রোম্যান্টিক ড্রামা ঘরানার ছবি। এই ছবিতে অভিনয় করেন গিরীশ কুমার, শ্রুতি হাসন, সোনু সুদ, রণধীর কপূর, পুনম ধিলোঁর মতো তারকারা।