ভারতের পর জাপান। গন্তব্য সেই চাঁদ। মাঝে ব্যবধান মাত্র তিন দিনের। সব ঠিকঠাক চললে ২৬ অগস্ট চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিতে পারে জাপানের ‘চন্দ্রযান’। গবেষণা চালাবে পৃথিবীর উপগ্রহের বুকে। তার জন্ম, বিবর্তন নিয়ে তুলে আনবে অনেক নতুন তথ্য।
২৩ অগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রেখেছে ভারতের ‘চন্দ্রযান ৩’। তার তিন দিন পর ২৬ অগস্ট, চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেবে জাপানের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র জাপানিস এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জাক্সা)-এর তৈরি চন্দ্রযান।
জাপানের তৈরি সেই ল্যান্ডারের নাম স্মার্ট ল্যান্ডার ফর ইনভেস্টিগেশন মুন (এসএলআইএম)। চাঁদের বুকে নেমে খোঁজখবর নেবে সে।
স্লিম ল্যান্ডার থেকে যে রোভার নামবে চাঁদের বুকে, তা এক্স-রে ছবি তুলবে। সে কারণে এই অভিযানের নাম এক্স-রে ইমেজিং অ্যান্ড স্পেকট্রোস্কোপি মিশন (এক্সরিজ়ম)।
এই অভিযানে জাক্সার সঙ্গে সহযোগিতা করবে আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা। পরবর্তী কালে কৃষ্ণগহ্বর, নিউট্রন স্টার, সুপারনোভার বিষয়েও গবেষণা চালানো হবে। প্রসঙ্গত, একটি নক্ষত্র ধ্বংস হওয়ার মুখে যে তিনটি ভাগে ভেঙে যায় সেগুলি নিয়েও গবেষণা চালানো হবে। এর মধ্যে অন্যতম কৃষ্ণগহ্বর।
এক্সরিজ়ম -এর উদ্দেশ্য হল কৃষ্ণগহ্বর, নিউট্রন স্টার এবং সুপারনোভার উচ্চ মানের এক্স-রে তুলে জাপানের মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রে পাঠানো। এর ফলে সেগুলির গঠন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা হবে।
জাপানের মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, চাঁদে কেমন করে অবতরণ করে ল্যান্ডার, তা বোঝাই হল তাদের চন্দ্রাভিযানের মূল লক্ষ্য। এর ফলে ভবিষ্যতে চাঁদের আরও কঠিন জায়গায় সহজেই অবতরণ করতে পারবে তাদের ল্যান্ডার বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
অবতরণের সময় জাপানের ল্যান্ডারের ওজন থাকবে ৫৯০ কেজি। চাঁদের পৃষ্ঠ স্পর্শ করার সময় এর ওজন হবে ২১০ কেজি।
জাক্সার ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে, ‘‘চাঁদের ভিতরের গঠন নিয়ে গবেষণা করবে লুনার-এ। এর ফলে চাঁদের জন্ম, তার বিবর্তন নিয়ে অনেক তথ্য মিলবে।’’
জাক্সার তরফে জানানো হয়েছে, তাদের ল্যান্ডারের উচ্চতা ৯ ফুট (প্রায় ২.৪ মিটার), প্রস্থ ৮.৮ মিটার (২.৭ মিটার), গভীরতা ৫.৬ মিটার (১.৭ মিটার)।
লক্ষ্যবিন্দুর ৩২৮ ফুট (১০০ মিটার) দূরত্বের মধ্যে অবতরণ করাই আপাতত লক্ষ্য ওই ল্যান্ডারের। সূত্রের খবর, এই ল্যান্ডারের একটি র্যাডার রয়েছে, যা নির্দিষ্ট স্থানে অবতরণে সাহায্য করবে।
অবতরণের পথে কোনও বাধা থাকলে তা আগে থেকেই আঁচ করতে পারবে এই ল্যান্ডার। সেই মতো পদক্ষেপ করতে পারবে। জাক্সা সূত্রের খবর, চাঁদের যে জায়গায় অবতরণ করতে হবে, তার ছবি আগে থেকেই ধরা থাকবে ল্যান্ডারের। সেই ছবি মিলিয়েই সঠিক জায়গায় অবতরণ করতে পারবে সে।
জাক্সার তরফে জানানো হয়েছে, এই এসএলআইএম ল্যান্ডারের গঠন এমন যে, তার ফলে অবতরণের খরচ অনেক কম পড়বে। আরও কম দূরত্বের অভিযানেও অনায়াসে যেতে পারবে সে।
চাঁদের ঠিক কোথায় অবতরণ করতে পারে তাদের ল্যান্ডার, তা-ও জানিয়েছে জাক্সা। ভারতের ল্যান্ডার নেমেছে দক্ষিণ মেরুতে, যে পিঠ পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। জাপানের ল্যান্ডার নামবে সেই পৃষ্ঠে, যা পৃথিবী থেকে দেখা যায়। জাক্সার তরফে জানানো হয়েছে, তুলনামূলক ভাবে নতুন তৈরি হওয়া শিওলি গহ্বরে অবতরণ করবে সে।
পৃথিবী থেকে চাঁদের যে দিক দেখা যায়, সেখানে রয়েছে এক শূন্য সমুদ্র (মেয়ার নেকটারিস)। তার মধ্যেই রয়েছে সেই শিওলি গহ্বর। যার বিস্তৃতি প্রায় ৯৮৪ ফুট (৩০০ মিটার)। সেই শিওলি গহ্বরে নামবে জাপানের ল্যান্ডার।
প্রসঙ্গত, ভারতের চন্দ্রাভিযানেও এ বার সঙ্গী হতে চলেছে জাপান। জাক্সার সঙ্গে ইতিমধ্যে চুক্তি হয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র ইসরোর। ভারত এবং জাপান যৌথ ভাবে ‘চন্দ্রযান-৪’ অভিযানে কাজ করবে। এই অভিযানের আসল নাম লুপেক্স (লুনার পোলার এক্সপ্লোরেশন মিশন)।
লুপেক্সে মূলত চাঁদের মেরুকেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ চালাবে ভারত এবং জাপান। খুঁজবে সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্নটির জবাব— চাঁদে কী অবস্থায় রয়েছে জল? ছবি: সংগৃহীত