জাপানে শিল্পায়নের সময় কয়লাখনির জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল গানকানজিমা দ্বীপ। এটি হাশিমা দ্বীপ নামেও পরিচিত। নাগাসাকি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটি একসময়ে জনবহুল থাকলেও রাতারাতি তা ‘মৃত’ হয়ে যায়। সবুজহীন এই ‘ভূতুড়ে’ দ্বীপের উঁচু আবাসনগুলি দেখলে মনে হয়, সমুদ্রের মাঝে একটি সামরিক জাহাজ যেন নোঙর ফেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের পাঁচ শতাধিক জনমানবহীন দ্বীপের তালিকায় লেখা রয়েছে হাশিমা দ্বীপের নাম। জেমস বন্ডের ‘স্কাইফল’-সহ বেশ কয়েকটি ছবির শুটিংও হয়েছে এই দ্বীপে।
হাশিমা দ্বীপ যেখানে অবস্থিত, সেখানে উন্নত মানের কয়লার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল ১৮১০ সালে। ১৮৯০ সালে মিৎসুবিশি সংস্থা দ্বীপটি কিনে নেয়। তার পর সেখানে কয়লাখনি নির্মাণের পাশাপাশি বেশ কিছু বাড়ি বানায় তারা। এর মধ্যে ছিল ১০ তলার একটি বাড়িও।
১৯৫৯ সালের মধ্যে হাশিমা দ্বীপের জনসংখ্যা পাঁচ হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে যায়। প্রতি বছর এই দ্বীপের এক বর্গকিলোমিটার এলাকা থেকে ৪ লক্ষ টন কয়লা উৎপাদিত হত।
হাশিমা দ্বীপের উন্নয়নের জন্য সেখানে একের পর এক আবাসন তৈরি করা হতে থাকে। দ্বীপের বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য সেখানে হাসপাতাল, বিনোদনের জন্য সুইমিং পুল, ক্লাবঘর, এমনকি প্রেক্ষাগৃহও নির্মাণ করা হয়।
হাশিমা দ্বীপে বাড়িগুলি এমন ভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল, যাতে টাইফুনের হাত থেকে সেগুলি রক্ষা পেতে পারে। দূর থেকে এই দ্বীপটি দেখে মনে হয় যেন সমুদ্রে নোঙর করে রয়েছে বিশাল যুদ্ধজাহাজ।
কানাঘুষো শোনা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন চিন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বাসিন্দাদের হাশিমা দ্বীপে বন্দি করে রাখা হত। তাঁদের শাস্তি দিতে কয়লাখনিতে কঠিন পরিশ্রমের কাজ করানো হত।
কিন্তু ১৯৬০ সালে জাপানের শিল্পে কয়লার পরিবর্তে পেট্রোলিয়াম জায়গা করে নেয়। দেশ জুড়ে সমস্ত কয়লাখনি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৬ একর জুড়ে অবস্থিত হাশিমা দ্বীপের বাসিন্দাদের রাতারাতি সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়।
১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে হাশিমা দ্বীপটি বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই বছরেরই ২০ এপ্রিল সেখানকার বাসিন্দারা দ্বীপ ছেড়ে চলে যান।
২০০৯ সালে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল এই দ্বীপটি। তবে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরাই এই দ্বীপে বেড়াতে যেতে পারেন।
২০১৫ সালে হাশিমা দ্বীপকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে। টোকিয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তাকাফুমি নোগুচির নেতৃত্বে এই দ্বীপের বাড়িগুলি সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেও এখনও বেশ কিছু ধ্বংসাবশেষ রয়ে গিয়েছে পরিত্যক্ত দ্বীপে। ‘ডার্ক ট্যুরিস্ট’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ়ে এই ফাঁকা দ্বীপ নিয়ে একটি শো করেন ডেভিড ফেরিয়ার নামে নিউ জ়িল্যান্ডের এক সাংবাদিক। বর্তমানে এই ‘ভূতুড়ে’ দ্বীপটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে।