জেক ও হানা গ্রাফের পরিচয় নেটমাধ্যমে। দু’জনেই ব্রিটেনের বাসিন্দা। ফেসবুকে আলাপ-পরিচয়ের পর দু’জনে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ২০১৭ সালে তাঁরা বিয়েও করেন। তবে, জেক এবং হানার কাহিনি অন্য রকম।
তাঁরা দু’জনেই রূপান্তরকামী। ৪৪ বছর বয়সি জেক পেশায় অভিনেতা ও পরিচালক। ‘কোলেট’ এবং ‘দ্য ড্যানিশ গার্ল’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে জেককে।
অন্য দিকে, হানা ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে উচ্চপদস্থ আধিকারিকের পদে কর্মরত ছিলেন। ৩৫ বছর বয়সি হানা প্রায় ১০ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিলেন।
২০১৩ সালে তিনি অপারেশনের মাধ্যমে রূপান্তরকামী মহিলায় পরিণত হন হানা। হানার সহকর্মীরা তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সমর্থনও করেছিলেন।
পরিচয়ের প্রথম পর্বেই হানাকে জানিয়েছিলেন জেক যে, তিনি সন্তান চান। হানা এই বিষয়ে খুশি হলেও নানা প্রশ্ন তাঁকে চার দিক থেকে ঘিরে ধরেছিল।
জেক এবং হানা শারীরিক ও মানসিক ভাবে তাঁদের পরিবারে নতুন অতিথির আগমনের জন্য প্রস্তুত হলে সারোগেটের খোঁজ করতে শুরু করেন।
লরার সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হওয়ার আগে গ্রাফ দম্পতি চিন্তিত ছিলেন, সারোগেট মাদারের সঙ্গে তাঁদের মানসিকতার মিল থাকবে কি না। কিন্তু এখন লরা তাঁদের পরিবারেরই এক জন। তিনি আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা।
হানা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘লরা আমাদের ভীষণ ঘনিষ্ঠ। প্রতি বছর বড়দিনের সময় আমরা লরাকেও উপহার পাঠাই। যে মানুষটা আমাদের কাছে মিলিকে পাঠিয়েছে, সে অন্য ধরনের মানুষ।’’
এমনকি লরা নিজেই গ্রাফ দম্পতিকে অনুরোধ করেছিলেন দ্বিতীয় সন্তানের জন্য। দু’বছর আগে লরা যখন জেক ও হানার প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, তখন দম্পতিকে জানিয়েছিলেন, অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন তিনি যে সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তা উপভোগ করেছেন। দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিতে বললে লরা সব থেকে বেশি খুশি হবেন।
মিলিও (জেক ও হানার প্রথম কন্যাসন্তান) লরাকে ‘আন্ট লরা’ বলে ডাকে। এমনকি, লরা যখন দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তখন লরার বোন লিনসে দু’বছরের মিলিকে দেখাশোনার করার জন্য জেকের বাড়িতে এসেছিলেন।
জেক অভিভূত হয়ে বলেন, তিনি এখন দুই সন্তানের বাবা তা মাঝেমধ্যে বিশ্বাসই করতে পারেন না। কিন্তু পাশাপাশি হানাকে নিয়েও চিন্তিত তিনি।
হানা যখন হাসপাতালে তাঁদের সন্তানকে নিয়ে ভর্তি ছিলেন, তখন সেই মহিলা ওয়ার্ডে থাকা অনেকেই হানার দিকে তির্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। তাই তাঁর জন্য একটি প্রাইভেট ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়।
হানা সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁর কাছে আফগানিস্তানের হেলমন্ড প্রভিন্সের রাস্তাঘাটও লন্ডনের ক্ল্যাফাম হাই স্ট্রিটের থেকে নিরাপদ মনে হয়। তাঁকে দেখে অনেকেই কুমন্তব্য করেন, রূপান্তরকামী বলে কটু কথাও বলেন অনেকে।
হানা বলেন, ‘‘কেউ কেউ মনে করেন আমরা দু’জনেই রূপান্তরকামী বলে আমাদের দুই সন্তানকেই সেই চিন্তাধারা নিয়ে বড় করব। আবার কেউ এমনও মনে করেন যে আমরা আমাদের পুরো বাড়িটাই রামধনু পতাকা দিয়ে মুড়ে ফেলব।’’
জেক ও হানা জানান, তাঁরা তাঁদের সন্তানদের উপর কোনও কিছু চাপিয়ে দেবেন না। তারা নিজেরা নিজেদের মতো করে নিজেদের সত্তা উপলব্ধি করুক, তা-ই চান গ্রাফ দম্পতি।
তবে, তাঁদেরকে অনেকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। শুভেচ্ছাবার্তার সঙ্গে সঙ্গে জেক ও হানাকে পাঠিয়েছেন অনেক উপহারও। রূপান্তরকামী হিসাবে দেখে খারাপ মন্তব্য করেন না, বরং দুই ফুটফুটে সন্তানের অভিভাবক হিসাবেই তাঁদেরকে সম্মান করেন।