রাজস্থানের অখ্যাত গ্রাম থেকে দেশীয় রাজনীতির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদাধিকারীর আসনের পদপ্রার্থী। রাজনৈতিক জীবনে নিঃসন্দেহে চড়াইয়ের পথে জগদীপ ধনখড়। কোন পথে এগিয়েছে ধনখড়ের রাজনৈতিক জীবন?
শনিবার রাতে দেশের উপরাষ্ট্রপতি পদে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ধনখড়ের নাম ঘোষণা করেছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন শাসকদল এনডিএ। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সাংবিধানিক অঙ্কের বিচারে তাঁর নির্বাচন প্রায় নিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে।
সংসদের ৭৮০টি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র বিজেপির সাংসদ রয়েছেন ৩৯৪ জন। ফলে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে নয়াদিল্লির মৌলানা আজাদ রোডে উপরাষ্ট্রপতির সচিবালয়ে ধনখড়ের প্রবেশ প্রায় অনিবার্য বলেই মনে করছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১০ অগস্ট। তার আগেই উপরাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তার শেষ দিন আগামী ১৯ জুলাই। এবং এই পদে নির্বাচন হবে আগামী ৬ অগস্ট। সে দিনই দেশের ১৬তম উপরাষ্ট্রপতির নাম ঘোষিত হবে।
আইনজীবী হিসাবে পেশাদার জীবন শুরু করলেও এক কালে তা ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছিলেন ধনখড়। এর পর একে একে বিধায়ক থেকে সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছেন। ৭১ বছরের ধনখড়কে নানা ভূমিকায় দেখা গিয়েছে।
উপরাষ্ট্রপতি পদে তাঁর নাম ঘোষণা পর ধনখড়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সংসদীয় বিষয়ে ধনখড়ের প্রজ্ঞাকে তারিফ করেছেন। সংবিধান নিয়ে তিনি যে অত্যন্ত ওয়াকিবহাল, তা-ও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
জন্ম, ১৯৫১ সালের ১৮ মে। রাজস্থানের এক জাঠ কৃষকের পরিবারে জন্ম হয়েছিল ধনখড়ের। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে আইনকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন কিঠানা গ্রামের এই ছেলেটি।
চিত্তৌরগড়ের সৈনিক স্কুলের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাও করেছেন নিজের রাজ্যে। রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকস্তরের পড়াশোনা শেষ করেন ধনখড়। এককালে রাজস্থান হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এ বাংলার রাজ্যপালের দায়িত্বভার সামলানোর আগে একাধিক পদে ছিলেন ধনখড়। জনতা দল থেকে বিজেপিতে যোগদানের আগেই অবশ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
বিধায়ক হওয়ার আগেই সাংসদ হয়েছিলেন ধনখড়। তবে তাঁর প্রথম রাজনৈতিক দল ছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের জনতা দল।
১৯৮৯ থেকে ’৯১ পর্যন্ত জনতা দলের টিকিটেই নবম লোকসভায় প্রবেশ ধনখড়ের। সে বার রাজস্থানের ঝুনঝুনু লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন তিনি। লোকসভার পর রাজস্থানের কিসানগড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে বিধায়ক হন ধনখড়। সময়টা ছিল ১৯৯৩-’৯৮।
রাজস্থানের দশম বিধানসভার মেয়াদ শেষে আবারও সংসদের পথে এগিয়েছিলেন ধনখড়। ১৯৯০ থেকে ’৯১ সালে চন্দ্রশেখর সরকারের সংসদীয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে পাঁচ বছরের নির্ধারিত মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই কেন্দ্রের চন্দ্রশেখর সরকার পড়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই সে সময় মন্ত্রিত্বেও ইতি পড়ে ধনখড়ের।
জনতা দল ছেড়ে এক সময় বিজেপিতে নাম লিখিয়েছিলেন ধনখড়। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
এ রাজ্যের রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে বহু বারই শিরোনামে উঠে এসেছেন ধনখড়। রাজ্য সরকারের সঙ্গে বার বারই বিরোধে জড়িয়েছেন তিনি। তবে আসন্ন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হলে সে পর্ব অচিরেই অতীত হতে পারে।