১৮৮০ সালের ঘটনা। দক্ষিণ আফ্রিকার বাজারে গিয়ে একটি বেবুন হঠাৎ নজরে পড়ে জেমস এডউইন ওয়াইডের। সঙ্গে সঙ্গে তিনি কিনে ফেলেন সেই বেবুনটিকে।
হয়তো পুষবেন বলেই বেবুনটি কিনেছিলেন তিনি। বেবুনটির নাম রাখেন জ্যাক।
দক্ষিণ আফ্রিকার রেলকর্মী ছিলেন জেমস। কেপটাউন থেকে এলিজাবেথ পোর্টগামী লাইনে সিগন্যালম্যানের কাজ করতেন তিনি।
কাজ করার সময়ই দুর্ঘটনায় জেমসের দু'টি পা অকেজো হয়ে যায়। যার ফলে তিনি বাড়ির কাজটুকুও ঠিক মতো করতে পারতেন না।
তিনি যেখানে থাকতেন, সেখান থেকে রেলস্টেশনের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। এই রাস্তাটুকু পার হওয়াও তাঁর জন্য কষ্টসাধ্য ছিল।
জেমস ভাবলেন, জ্যাককে ঠিক মতো প্রশিক্ষণ দিলে সে জেমসের জীবন অনেকটাই সহজ করে দিতে পারবে।
তিনি জ্যাককে শিখিয়েছিলেন, কী ভাবে ঠেলাগাড়ি ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। তার পর বাড়ি থেকে স্টেশন যাওয়ার পথে জেমস একটি ঠেলাগাড়ির ভিতর বসতেন এবং জ্যাক তাঁকে ঠেলে নিয়ে যেত।
শুধু তা-ই নয়, জ্যাকের প্রভুভক্তি এমনই ছিল যে, জেমসের কষ্ট লাঘব করার জন্য সে বাড়ির সমস্ত কাজও করত।
ঘর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে বাড়ির আবর্জনা বাইরে ফেলা, সবই করত জ্যাক।
জেমসের সর্ব ক্ষণের সঙ্গী ছিল এই বেবুন। স্টেশনে যখন জেমস কাজ করতেন, জ্যাক তা ভাল করে লক্ষ করত।
জেমস সিগন্যাল দেওয়ার পদ্ধতিও শেখাতে শুরু করলেন জ্যাককে। কোন লিভার কত বার টানতে হয়, কত বার বাঁশির আওয়াজ হলে সিগন্যালম্যান রেললাইন বদলাবেন, সে সবও শিখিয়েছিলেন জ্যাককে।
জেমসের নির্দেশ মতোই কাজ করত জ্যাক। জ্যাকের কাজ এতটাই নিপুণ ছিল যে, জেমসকে আর কোনও চিন্তাই করতে হত না।
কিন্তু মানুষের পরিবর্তে একটা বেবুন এই কাজ করছে, তা নজরে পড়ে যায় এক রেলযাত্রীর। রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও জানান তিনি।
এই কথা জানার পর জেমসকে চাকরি থেকে বিতাড়িত করার পরিবর্তে রেল কর্তৃপক্ষ জ্যাকের কর্মক্ষমতা যাচাই করেন।
জ্যাক সমস্ত কাজে পারদর্শী হওয়ায় তাকে চাকরি দেওয়া হয়। বাকি রেলকর্মীদের জন্য যেমন একটা নির্দিষ্ট নম্বর থাকত, জ্যাককেও তা দেওয়া হল।
দিন পিছু ২০ সেন্ট (ভারতীয় মুদ্রায় আনুমানিক ১২ পয়সা) বেতনও দেওয়া হত জ্যাককে।
শুধু বেতনই নয়, সপ্তাহান্তে আধ বোতল বিয়ারও উপহার দেওয়া হত তাকে।
১৮৯০ সালে এক ব্যক্তি জ্যাকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তিনি রেলের সুপারিন্টেনডেন্ট জর্জ বি হোয়েকে চিঠি লিখে জানান, প্রভুর সঙ্গে জ্যাকের সম্পর্কের গভীরতা অন্য রকম। দু’জনকে দেখে নাকি তাঁর মন ভরে গিয়েছিল।
‘‘আমি যখন তাঁদের কাছে যাই, তখন দেখি জেমস ঠেলাগাড়িতে বসে। জ্যাক প্রভুর ঘাড়ে হাত দিয়ে রয়েছে এবং জেমস তার মাথার উপর হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন,’’ চিঠিতে লিখে জানিয়েছিলেন তিনি।
মানুষ মাত্রই ভুল হয়, কিন্তু ৯ বছরের কর্মজীবনে এক বারও ভুল করেনি জ্যাক। দুর্ভাগ্যবশত, যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে জ্যাক মারা যায়।