চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) থেকে বেরিয়ে গেল আরও এক দেশ। এ বার ইউরোপের শক্তিশালী সদস্য হারাল চিন। বিআরআই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ইটালি।
গত ৪ ডিসেম্বর ইটালি সরকারের তরফে চিনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে, তারা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ থেকে বেরিয়ে আসছে।
উন্নত প্রধান অর্থনীতির গোষ্ঠীভুক্ত একমাত্র দেশ হিসাবে চিনের এই প্রকল্পে এত দিন ছিল ইটালি। তারা সরে যাওয়ায় বিআরআই-তে উন্নত অর্থনীতির আর একটি দেশও রইল না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ইটালি। ২০১৯ সালে তারা শি জিনপিংয়ের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল।
বেজিংয়ের সঙ্গে রোমের পাঁচ বছরের চুক্তি হয়েছিল। ২০২৪ সালে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষের আগেই বিআরআই থেকে সরে গেল ইটালি।
চুক্তি অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের অন্তত তিন মাস আগে ইটালিকে তাদের ইচ্ছার কথা জানাতে হত চিনকে। না জানালে চুক্তির মেয়াদ নিজে থেকেই আরও পাঁচ বছরের জন্য বৃদ্ধি পেত। তাই আগেভাগেই ইটালি সরকার বেজিংয়ে নোটিস পাঠিয়ে দিয়েছে।
ইটালির এই পদক্ষেপে চিন যে খুব একটা স্বস্তি পায়নি, তা সহজেই অনুমেয়। দুই দেশের কোনও সরকারের তরফেই আনুষ্ঠানিক ভাবে এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে কিছু বলা হয়নি।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া থেকে এ বিষয়ে জিনপিংয়ের অস্বস্তির কিছুটা আভাস পাওয়া গিয়েছে। তিনি অবশ্য ইটালির নাম করেননি। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে কোনও রকম বিভাজন তৈরির চেষ্টা চিন বরদাস্ত করবে না। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি।’’
চিনের এই প্রকল্পটিতে এই মুহূর্তে ১৫০টিরও বেশি দেশ শামিল। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক দেশ প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। ইটালি সেই তালিকায় নতুন সংযোজন।
নভেম্বর মাসে চিনেরই এক পড়শি দেশ বিআরআই থেকে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেছিল। ফিলিপিন্স সরকারের তরফে জানানো হয়, তারা এই প্রকল্পের সঙ্গে আর যুক্ত থাকতে চায় না।
বিআরআই ছাড়ার কারণও জানিয়েছিল ফিলিপিন্স। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চিনকে আর তারা বিশ্বাস করে না।
ইটালির ক্ষেত্রে কী হয়েছিল? ২০১৯ সালে ইটালি যখন চিনের প্রকল্পে নাম লেখায়, তখন তারা অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ছিল। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির আশায় চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল ইটালি।
চুক্তি অনুযায়ী, বন্দর, কৃষি, বাণিজ্য, উপগ্রহ প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে ইটালিতে বিআরআইয়ের মাধ্যমে দু’হাজার কোটি ইউরো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
সে সময়ে ইটালির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন গুইসেপ কন্টে। তিনি বলেছিলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে যেন চিন এবং ইটালি উভয় দেশের উন্নতি হয়। প্রকল্প যেন কোনও ভাবেই একতরফা না হয়ে যায়।
পরে ইটালির সরকার বদলেছে। প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন জর্জিয়া মেলোনি। তিনি ২০২২ সালেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, চিনের প্রকল্পে শামিল হওয়া ছিল ইটালির ‘বড় ভুল’।
অভিযোগ, বিআরআইতে যোগ দেওয়ার পর থেকে ইটালিতে চিনের রফতানি হু হু করে বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় ইটালির পণ্য চিনে রফতানি বৃদ্ধি পায়নি।
২০১৯ সালে ইটালি থেকে চিনে মোট রফতানিকৃত পণ্যের পরিমাণ ছিল ১,৩৪০ কোটি ইউরো। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১,৬০০ কোটি ইউরো।
অন্য দিকে, চিন থেকে ইটালিতে মোট রফতানির পরিমাণ ২০১৯ সালে ছিল ৩,২৮০ কোটি ইউরো। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫,৬০০ কোটি ইউরো।
শুধু এই পরিসংখ্যানই নয়, চিন বিআরআই-এর মাধ্যমে যত বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি ইটালিকে দিয়েছিল, তা আসেনি বলে অভিযোগ। বরং বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আরও কমে গিয়েছে।
বিআরআইয়ের বিরুদ্ধে ইটালির যা অভিযোগ, অন্য একাধিক সদস্য দেশেরও অভিযোগ প্রায় একই রকম। তাই অনেকেই এই প্রকল্প ছাড়ার কথা ভাবছে। চিনের জন্য যা নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।