ভালবেসে এ দেশে এসেছিলেন। তার পর থেকে বেড়েই চলেছে ভালবাসা। থেকে গিয়েছেন এখানেই। এখন ভারতের নাগরিকত্ব চান ইটালীয় দম্পতি। হিন্দি শিখেছেন। এ বার তার পরীক্ষাও দিয়ে ফেললেন মোরো সারান্দ্রিয়া এবং মারিনা মাটিওয়োলি।
কোভালামে নিজেদের একটি হোটেল খুলেছিলেন মোরো আর মারিনা। গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য হিন্দির ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলেন। কাজ চালানোর মতো হিন্দি অনেক দিনই শিখে ফেলেছেন তাঁরা।
এ বার হিন্দিটাকে আরও আয়ত্ত করতে চান ইটালীয় দম্পতি। তাই কটন হিল স্কুলে হিন্দি লেখা এবং পড়াও শিখছেন। কতটা শিখেছেন, তারই পরীক্ষা দিলেন সম্প্রতি।
ইটালির বাসিন্দা। তাই স্বাভাবিক ভাবেই পাস্তা খেতে পছন্দ করতেন। কিন্তু এখন রোজের খাওয়ারে পাস্তার জায়গা নিয়েছে রুটি, ভাত, চাটনি। মোরো জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী নাকি দারুণ রাঁধেন এই পদগুলি।
মোরো জানিয়েছেন, ভারতের প্রাচীন এবং ধর্মীয় সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ থেকেই এ দেশকে ভালবেসেছেন তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে হয় এখানকার প্রাচীন এবং ধর্মীয় সাহিত্য অনেক ক্ষেত্রেই অবহেলিত।’’
মোরো এও জানিয়েছেন, তাঁর থেকে তাঁর স্ত্রী অনেক ভাল হিন্দি বোঝেন এবং বলতে পারেন। কারণ তিনি অতীতেও ভারতে ছিলেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত উত্তর ভারতের একটি আশ্রমে থাকতেন মারিনা। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৮ বছর।
সেই থেকে ভারতের প্রতি আগ্রহ মারিনার। এর পর দু’জনে এ দেশে আসার পর স্থির করেন, হিন্দিটা ভাল করে শিখবেন। বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। তাই পড়াশোনা শুরু করে দেন ৬৩ বছরের মোরো।
এ দেশের সাহিত্য, ভাষা, সংস্কৃতি, মানুষ, খাবার সবেরই প্রেমে পড়ে যান ইটালীয় দম্পতি। তাই ১৮ বছর আগে এ দেশে এসে থাকতে শুরু করেন। কৃষ্ণপ্রেমও এ দেশে বসবাস শুরুর অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
মোরো জানিয়েছেন, সাত বছর আগে এক বার ইটালি গিয়েছিলেন। পাঁচ দিন থেকেই হাঁফিয়ে উঠেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁচ দিন পর একে অপরকে বলেছিলাম, আমাদের এ বার ঘরে ফেরা উচিত।’’
কোভালামে নিজেদের একটি হোটেল রয়েছে মোরো এবং মারিনার। ঠিক করেন, নিজেদের ভালবাসার দেশেই থেকে যাবেন। মোরো জানান, ভারতকে ভাল না বাসাটাই তাঁদের কাছে অস্বাভাবিক।
তিরুঅনন্তপুরমে হিন্দি প্রচারসভার সম্পাদক মধু বি জানিয়েছেন, এর আগে ওই এলাকায় কোনও বিদেশি হিন্দি পরীক্ষা দিতে আগ্রহী হননি। মোরো আর মারিনাই প্রথম।
মধু জানিয়েছেন, প্রথমে উত্তর ভারতীয় গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলার জন্যই হিন্দি শিখতে শুরু করেছিলেন মোরো এবং মারিনা। ক্রমে ভাষাটা তাঁদের খুব প্রিয় হয়ে ওঠে। দু’জনে ঠিক করেন, পরীক্ষা দেবেন।
মধু বলেন, ‘‘সাড়ে তিন মাস প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ওই দম্পতি। পড়াশোনার প্রতি দারুণ মনোযোগী তাঁরা। এর আগে অন্য কোনও দেশের নাগরিক হিন্দি নিয়ে এতটা উৎসাহী হননি।’’
ইটালীয় দম্পতির দুই ছেলে রয়েছেন। ক্লড আর বিষ্ণুপাদ। ক্লড পেশায় চিকিৎসক। ইটালিতেই থাকেন।
তবে মোরো আর মারিনা ইটালিতে ফিরতে চান না বলে জানিয়েছেন। বাকি জীবন ভারতেই কাটাতে চান। তাঁদের ভালবাসার দেশকে ভালবেসে।