গত বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে যাত্রা শুরু করে চার মাসের মাথায় অবশেষে ইসরোর বিজ্ঞানীদের হাড়ভাঙা খাটুনির ফল পাওয়া যাবে হাতেনাতে। ভারতের মহাকাশবিজ্ঞান চর্চার মুকুটে যুক্ত হবে নতুন পালক, সৌজন্যে অবশ্যই আদিত্য এল১!
গত ২ সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টার থেকে সূর্যের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল আদিত্য-এল১। শনিবার বিকেলেই গন্তব্যে পৌছে যাবে এই সৌরযান, এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
বিকেলেই ভারতের প্রথম সৌরযান আদিত্য-এল১ তার কাঙ্ক্ষিত কক্ষপথে পৌঁছে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তার চার মাসের দীর্ঘ যাত্রা শেষ হয়েছে। এ বার তাকে পাঁচ বছরের স্থায়ী ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার পালা।
বিকেলে আদিত্য-এল১-এর চূড়ান্ত পর্যায়ের কক্ষপথ পরিবর্তন করানো হবে। বিকেল ৪টে নাগাদ ইসরোর বিজ্ঞানীরা ধাক্কা দিয়ে সৌরযানটিকে পৌঁছে দেবেন ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্ট বা এল১ পয়েন্টের নির্দিষ্ট কক্ষপথে।
সেখান থেকে সূর্য আরও কয়েক কোটি কিলোমিটার দূরে। সূর্য এবং পৃথিবীর দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। তার মাত্র এক শতাংশ পেরিয়েছে আদিত্য-এল১। পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব ১৫ লক্ষ কিলোমিটার।
বলাই বাহুল্য, ভারতের কোনও মহাকাশযান সূর্যের এত কাছে যায়নি। সূর্য সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য এর ফলে জানা যাবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
আদিত্য-এল১-কে ধাক্কা দিয়ে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে দেওয়াই এখন ইসরোর সামনে চ্যালেঞ্জ। কারণ অত্যন্ত সাবধানে ওই কাজ করতে হবে।
গোটা প্রক্রিয়ায় সামান্য ভুল হলেই এত দিনের পরিশ্রম বৃথা হয়ে যাবে মুহূর্তেই। যে চাপ দিয়ে সৌরযানটিকে এল১ পয়েন্টে পাঠানো হবে, তা কমবেশি হলে বিপদ ঘটতে পারে।
অধীর আগ্রহ আর উৎকণ্ঠায় তাই বিকেল ৪টে বাজার অপেক্ষায় রয়েছেন ইসরোর আধিকারিকেরা।
সৌরযানকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে দেওয়ার কাজ সফল হলে বছরের শুরুতে আরও এক সাফল্যের পালক জুড়বে ইসরোর মুকুটে। এল১ পয়েন্টে সূর্য এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে ঘুরতে থাকবে সৌরযান।
সৌরযানকে নিয়ন্ত্রণ করতে তখন আর খুব বেশি শক্তি খরচের প্রয়োজন হবে না। সূর্যকে ওই এলাকা থেকে বিনা বাধায় স্পষ্ট দেখতে পাবে আদিত্য-এল১।
কয়েক সপ্তাহ অন্তর অন্তর সামনে কোনও পাথর বা বাধা এলে ইসরোর বিজ্ঞানীরা কেবল তার মোড় ঘুরিয়ে দেবেন।
ওই এলাকায় নাসার পাঠানো আরও চারটি মহাকাশযান রয়েছে এই মুহূর্তে। তাদের সঙ্গেও যাতে সংঘর্ষ না হয়, তা নিশ্চিত করবেন বিজ্ঞানীরা।
প্রসঙ্গত, আদিত্য-এল১ সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝের এল১ পয়েন্টে পৌঁছে সূর্যকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করবে। পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব হবে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার।
সূর্য সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য এর ফলে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা জানতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই, গত বছর অক্টোবর মাসে আদিত্য এল১-এ থাকা এল১ অরবিটিং এক্স-রে স্পেকট্রোমিটারের মাধ্যমে ধরা পড়েছিল সূর্যের শিখার বিস্ফোরণের একটি পর্যায়। সূর্যের পৃষ্ঠে বিস্ফোরণে তৈরি হয় এই সৌর শিখা।
আবার, ডিসেম্বর মাসে মহাকাশ থেকে সূর্যের সম্পূর্ণ ছবি তুলেও পৃথিবীতে পাঠিয়েছিল ভারতের সৌরযান আদিত্য-এল১। একই সঙ্গে সূর্যের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার প্রমাণ দিয়েছিল এই যান।
ইসরোর সূত্রে জানা গিয়েছিল, আদিত্য-এল১ যানে থাকা ‘সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ’ (এসইউআইটি)-এর মাধ্যমে সূর্যের ছবিগুলি তোলা হয়েছে। আদিত্য-এল১-এর সূর্যের ছবি তোলার বিষয়টি ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানের অন্যতম নজির হিসাবে দেখছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
২৯ অক্টোবর প্রায় ১০ ঘণ্টার জন্য প্রথম বার পর্যবেক্ষণ চালিয়েছিল আদিত্য এল১। তখনই ধরা পড়েছিল এই সৌর শিখার একটি পর্যায়।