এক সপ্তাহ যুদ্ধবিরতির পর শুক্রবার থেকে আবার হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইজ়রায়েল। প্রায় দু’মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মারণাস্ত্র প্রয়োগ করেছে।
তবে এ বার ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ব্যবহারের অভিযোগ উঠল। গাজ়ায় হামাসের শক্ত ঘাঁটিগুলিকে গুঁড়িয়ে দিতে এই বোমা ব্যবহার করছে বলে দাবি হামাসের।
বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই যুদ্ধে ইজ়রায়েলকে নানা রকম সামরিক অস্ত্র সরবরাহ করে সাহায্য করছে আমেরিকা। হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সম্প্রতি ইজ়রায়েলকে ১৫ হাজার বোমা, ৫৭ হাজার গোলা সরবরাহ করেছে আমেরিকা। এ ছাড়া একশোটি বিএলইউ-১০৯ বাঙ্কার বাস্টার বোমাও দিয়েছে তারা।
বাঙ্কার বাস্টার বম্ব (বিএলইউ)-এর কয়েকটি ধরন রয়েছে। সেগুলি হল বিএলইউ-১০৯ এ/বি, বিএলইউ-১০৯/বি, বিএলইউ-৮২বি/সি। ইট, পাথর, সিমেন্ট এবং লোহার কাঠামো যতই শক্তিশালী হোক না তা ভেদ করে একেবারে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই বোমার।
বিএলইউ-এর পুরো কথা হল বম্ব লাইভ ইউনিট। আমেরিকার বায়ুসেনা এই ধরনের বোমা ব্যবহার করে।
আমেরিকা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, ব্রিটেনের অস্ত্রভান্ডারেও এই বোমা রয়েছে।
বিএলইউ-১০৯/বি বোমা এক ইঞ্চি পুরু ইস্পাতের পাত দিয়ে মোড়ানো থাকে। বোমার ভিতরে থাকে ২৪০ কেজি ট্রিটোনাল (৮০ শতাংশ টিএনটি এবং ২০ শতাংশ অ্যালুমিনিয়াম গুঁড়োর মিশ্রণ)।
১৯৮৫ সাল থেকে বিএলইউ-১০৯/বি বোমার ব্যবহার শুরু হয়েছে। কংক্রিটের কাঠামোর ৪-৬ ফুট গভীরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায় এই মারণ বোমা।
বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু বিএলইউ গোত্রের বোমাই নয়, ৫ হাজার আনগাইডেড এমকে৮২ বোমা, সাড়ে ৫ হাজার এমকে৮৪ বোমা, এক হাজার গাইডেড বম্ব ইউনিট (জিবিইউ) এবং ৩ হাজার জেডিএএ ব্যবহার করেছে ইজ়রায়েল।
শুধু বিএলইউ বোমাই নয়, ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে এর আগে ফসফরাস বোমা ব্যবহারেরও অভিযোগও উঠেছিল। যে বোমা সামরিক দুনিয়ায় ‘সাদা বিষ’ নামেও পরিচিত।
এই ধরনের বোমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল বহু বছর আগেই। কিন্তু হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে তাদের ঘন জনবসতি এলাকায় এই ধরনের বোমা ফেলার গুরুতর অভিযোগ তুলেছে প্যালেস্তাইন।
মোমের মতো এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এই সাদা ফসফরাস। অনেক সময় এর রং হলুদও হয়। ঝাঁঝালো এবং পচা রসুনের মতো সেই গন্ধ। এই রাসায়নিক পদার্থটি অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলেই আগুন ধরে যায়। জল দিয়েও সেই আগুন নেভানো যায় না। আর এটাই এই রাসায়নিকের অন্যতম ভয়ানক বৈশিষ্ট্য।
ফসফরাস বোমা ছাড়াও এই যুদ্ধে স্পঞ্জ বোমা ব্যবহারেরও অভিযোগ উঠেছে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে। গাজ়ার নীচে হামাসের তৈরি সুড়ঙ্গের জালগুলিকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে এই ধরনের বোমা ব্যবহার করছে ইজ়রায়েল।
ইজ়রায়েলের স্পঞ্জ বোমা আসলে কী? কী-ই বা এর বিশেষত্ব? কতটা ভয়ানক? এই স্পঞ্জ বোমা অনেকটা ফেনার মতো দেখতে হয়।
প্রাথমিক ভাবে কোনও রাসায়নিকের ফেনা বলে মনে হলেও, ব্যবহারের পর পরই সেই ফেনা কঠিন পদার্থে বদলে যায়। ২০২১ সালে গাজ়া সীমান্তে বেশ কিছু সুড়ঙ্গমুখ বন্ধ করতে এই ধরনের গ্রেনেড পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহার করেছিল ইজ়রায়েল।