প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসাবে দেখতে চেয়েছেন। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল অবশ্য বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি। তীব্র কটাক্ষ করেছে। আর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিজে কী বলেছেন? তিনি কি আদৌ কখনও রাজনীতিতে আসার কথা ভেবেছেন বা বলেছেন?
শনিবার সকালে মুর্শিদাবাদ জেলা সফরে গিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বহরমপুরে অধীরের সাংবাদিক বৈঠকে বিচারপতির সফর প্রসঙ্গ উত্থাপিত হতেই তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘‘আমি চাইব, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মুখ করে একটা নির্বাচন হোক। সেই নির্বাচন হলে আমি কায়মনোবাক্যে ওই মানুষটিকে ভোট দিতে লাইনের সবচেয়ে আগে দাঁড়াব। বাংলার মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করছে। ভরসা করছে।’’
এখানেই থামেননি অধীর। তিনি আরও জানান, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো মানুষেরা রাজনীতিতে এলে নতুন দিগন্ত তৈরি হবে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি চান, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো কারও হাতে রাজ্য পরিচালনার রাশ থাকুক।
বিষয়টিকে ভাল ভাবে নেয়নি তৃণমূল। মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, ‘‘যদি অভিজিৎবাবু বিজেপির হয়ে দাঁড়ান? অধীরবাবুও বিজেপিকে ভোট দেবেন?’’ তৃণমূলের আরও কটাক্ষ যে, লোকসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁত করতে চাইছেন অধীর।
এই প্রসঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কী বলেন? তিনি জানিয়েছেন, মানুষের ভালবাসায় তিনি অভিভূত।
মুর্শিদাবাদ সফরে এসে বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি কখনও ভাবিনি যে, বহরমপুরের মানুষ আমাকে এত ভালবাসবেন। সকাল থেকে কত মানুষ দেখছি! সেই ট্রেন থেকে নামার পর দেখছি যে, স্রোতের মতো মানুষ আসছেন। অভিনন্দন জানাচ্ছেন।’’
নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় রায়দানের পর থেকে অবশ্য বিচারপতি যেখানেই গিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে মানুষের উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। তাঁর এজলাস পর্যন্ত ছুটে গিয়েছেন প্রবীণা। তাঁকে ‘ঈশ্বর’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। বইমেলায় গিয়েছিলেন বছরের শুরুতে। সেখানেও এ ভাবেই তাঁকে ঘিরে ধরেছেন বহু মানুষ।
বিচারপতি অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি ভগবান নন। বিচারব্যবস্থা থেকেই তিনি তৈরি হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যদি সত্যি অভিনন্দন কারও প্রাপ্য হয়, তবে সেটা ভারতীয় বিচারব্যবস্থা এবং ভারতীয় সংবিধানের।’’
তবে রাজনীতির বিষয়টি তিনি বরাবরই এড়িয়ে গিয়েছেন। পরিচিত থেকে অপরিচিত জন, বার বার তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, তিনি কি কখনও রাজনীতিতে আসবেন? এই প্রশ্নের মুখোমুখি যে তাঁকে হতে হয়েছে, নিজেই জানিয়েছেন ঘনিষ্ঠ মহলে।
প্রশ্নের উত্তর কী দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়? জবাবে পরিচিত মহলে জানিয়েছেন, না, এই মূহূর্তে কোনও ইচ্ছা নেই। অবসর জীবন বই পড়ে কাটাতে চান তিনি। জানিয়ে দিয়েছেন সে কথা।
ভবিষ্যতে কি কখনও রাজনীতিতে আসার কথা ভাবেননি? এই প্রশ্নেরও মুখে পড়তে হয়েছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে ইচ্ছা নেই। ভবিষ্যতে কী হবে জানেন না।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে যাঁরা চেনেন, তাঁদের অনেকেই বলেন, তিনি রাজনৈতিক ভাবে সচেতন। তাঁকে এ-ও বলতে শোনা গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গ সমৃদ্ধশালী রাজ্য। গুছিয়ে কিছু করা গেলে এই রাজ্যে উন্নয়ন সম্ভব। চাষবাসে জোর দিলেও অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। তিনি এ-ও মনে করেন, বৈজ্ঞানিক ভাবে চাষবাস হলে আমরা এগিয়ে যেতাম।
তবে বিভিন্ন মামলার শুনানিতে তাঁর মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা শোনা গিয়েছেন। গত জুলাই মাসে একটি শুনানিতে তিনি জানান, কিছু রাজনৈতিক নেতা আদালতের নামে উল্টোপাল্টা বলেন। তাঁদের তিনি শ্রদ্ধা করেন না।
তবে সরাসরি নাম না করে মমতার প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি বলেন, ‘‘সুপ্রিমো এমন কথা বলেন না। তাঁকে দেখেছি, বিচারপতিদের সম্মান করেন। খুবই সহজ-সরল মানুষ। দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদ। অনেক নেতা-মন্ত্রীও আদালত সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেন না।’’
তার আগে গত বছর ডিসেম্বরে একটি মামলার শুনানিতে তিনি জানান, শিক্ষক নিয়োগ মামলার শুনানিতে তিনি বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। তবে তার কোনওটাই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে নয়। রাজ্যের আইনজীবী ভাস্করপ্রসাদ বৈশ্যকে তিনি ওই শুনানিতে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভাল কাজ করছেন। আমি কেন খারাপ কথা বলব? আমাকে বলতে বাধ্য করা হচ্ছে।’’
ঘনিষ্ঠ মহলে বিচারপতিকে বলতে শোনা গিয়েছে, মানুষের কাছে যে ভাবে মমতা সহজ ভাবে পৌঁছে যান, অন্য কোনও নেতার মধ্যে তা তিনি দেখেননি। তবে এ-ও জানিয়েছেন যে, এখনও রাজনীতিতে নামা নিয়ে কিছু ভাবছেন না তিনি। শনিবারও অধীরের কথার প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না।