আশির দশকে শিশু অভিনেতা হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন বলি নায়ক নীল নিতিন মুকেশ। ২০০৭ সালে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিপাড়ায় যাত্রা শুরু করেন তিনি। কিন্তু হিন্দি ফিল্মজগতে নীলের কেরিয়ারের বুনন যেন ঠিক মতো হল না। বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, নীলের কেরিয়ারপতনের নেপথ্যে রয়েছেন শাহরুখ খান।
তারকায় ভরা এক অনুষ্ঠানে নীলকে শাহরুখ একটি প্রশ্ন করায় বলিউডের বাদশাকে সকলের সামনে চুপ করতে বলেন নীল। এই ঘটনার ভিডিয়োও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
শাহরুখের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ার পরেই নাকি নীলের কেরিয়ারের পতন শুরু হয়। হাতেগোনা কয়েকটি হিন্দি ছবিতে দেখা গেলেও জোরদার চরিত্রে অভিনয়ে সুযোগ পাননি নীল।
২০০৯ সালে বলিউডের এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নীলের কাছে শাহরুখ প্রশ্ন রেখেছিলেন যে, তাঁর পদবি কোথায়?
নীলের উদ্দেশে শাহরুখ বলেন, ‘‘তোমার নাম নীল নিতিন মুকেশ। তিনটিই তো তোমার নাম। তা হলে তোমার পদবি কোনটি?’’
কিন্তু শাহরুখের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে যান নীল। তারকাদের ভিড়ে তিনি অভিনেতার প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘দারুণ প্রশ্ন করেছেন, স্যর। কিন্তু আমি আপনাকে কিছু জানাতে চাই। আপনার এই প্রশ্নে আমি যথেষ্ট অপমানিত বোধ করেছি। এখানে আমার বাবাও বসে রয়েছেন। দয়া করে আপনারা চুপ করুন।’’
সকলের সামনে নীলের উত্তরে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন শাহরুখ। চটজলদি অন্য প্রসঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু নীলের এমন আচরণের পর থেকেই পেশাগত জীবনে প্রভাব পড়ে তাঁর।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, শাহরুখকে সকলের সামনে অসম্মান করেছেন বলেই নীলকে বলিউডের প্রথম সারির ছবি নির্মাতারা কেউ কাজ দিতে চাননি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখের সঙ্গে এমন আচরণের কারণ নিয়ে খোলসা করেছেন নীল। তাঁকে প্রশ্ন করা হয় দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্যই কি এই ঘটনাটি সাজানো হয়েছিল?
নীল বলেন, ‘‘আপনি যদি মনে করেন পুরোটাই স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী হয়েছে তা হলে তাই। আমি সজ্ঞানে শাহরুখকে কখনও অপমান করতে পারি না। ওঁকে আমি যেমন শ্রদ্ধা করি, তেমন ভালওবাসি।’’
নীলের দাবি, শাহরুখ যে তাঁর সঙ্গে কোনও বিষয়ে মজা করবেন সে বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন নীলকে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরুর আগের মুহূর্তে নীলের সঙ্গে দেখা করেন শাহরুখ। নীলকে তিনি বলেন, ‘‘আমি কিন্তু আজ তোমার পিছনে লাগব। তোমার যেমন ইচ্ছা হয়, তেমন উত্তর দিয়ো।’’
নীল পাল্টা শাহরুখকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, শাহরুখ ঠিক কী ধরনের মজা করবেন নীলের সঙ্গে। শাহরুখ তার উত্তরে বলেন, ‘‘তুমি কিছু চিন্তা কোরো না। তোমার যা মনে হবে তাই বলো। কোনও বাধা নেই।’’
নাম নিয়ে শাহরুখ যখন নীলকে প্রশ্ন করেছিলেন তখন নীলের যা মনে এসেছিল তিনি সে ভাবেই উত্তর দিয়েছেন। নীল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পুরোটাই মজা ছিল। সেটা শাহরুখও জানতেন। আমিও জানতাম।’’
কিন্তু এই ঘটনার পর নীলের কেরিয়ারের রেখচিত্রে হঠাৎ পতন লক্ষ করা গেল। এ কি সম্পূর্ণ কাকতালীয়? ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নিউ ইয়র্ক’ ছবিতে নীলের অভিনয় বেশ প্রশংসাযোগ্য ছিল।
২০০৯ সালের পর ‘জেল’, ‘লাফাঙ্গে পরিন্দে’, ‘৩জি’, ‘প্লেয়ার্স’, ‘ডেভিড’-এর মতো হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় নীলকে। কিন্তু কেরিয়ারে দাগ কাটার মতো ছিল না কোনও কিছুই।
হিন্দি ছবির পাশাপাশি তামিল এবং তেলুগু ভাষার ছবিতেও অভিনয় করেছেন নীল।
নীল সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি পেশাগত জীবনে সফল হতে পারেননি বলে তাঁর জীবন থেকে অনেক বন্ধুই চলে গিয়েছেন। বিশেষত কোভিড অতিমারির সময় একা হয়ে পড়েছিলেন নীল।
নীল বলেন, ‘‘আমি যখন পেশাগত জীবনে সে রকম কিছু করতে পারিনি তখন আমার পাশ থেকে বন্ধুরাও চলে গিয়েছিলেন। অনেকেই আমার সঙ্গে পথ চলেননি। অতিমারির পর আমি খুব কম লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। তাঁরা সত্যিই আমাকে ভালবাসেন।’’
নীলের দাবি, এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার পরেও তাঁকে প্রতিনিয়ত নিজের অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয়।
নীল বলেন, ‘‘বলিপাড়ার প্রথম সারির অভিনেতা এবং পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার পরিবর্তে আমাকে প্রতিটি ছবির জন্য নিজেকে প্রমাণ করে যেতে হয়, যা কষ্টদায়ক। আমার নিজের গুণের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে। আমি ভাল কাজ করতে চাই।’’
২০১৯ সালে প্রভাস এবং শ্রদ্ধা কপূর অভিনীত ‘সাহো’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় নীলকে। তার পর আর কোনও ছবিতে কাজ করেননি নীল।