Iran Pakistan Terrorism

ট্রাম্প থেকে মোসাদের চর, গুপ্তহত্যার ছক কষছে ইরান? ভরসা করছে পাক জঙ্গিদের উপর?

আমেরিকান ও ইহুদিদের উপর হামলার জন্য এ বার পাক জঙ্গিদের ব্যবহার করছে ইরান। গোয়েন্দা রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলতেই পশ্চিম এশিয়ায় জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৭
Share:
০১ ১৮

ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতে রক্তাক্ত পশ্চিম এশিয়া। এই আবহে দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা সংঘর্ষের আগুনে ঘি ঢালবে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। পরিস্থিতি আঁচ করে পাল্টা ছক কষা শুরু করে দিয়েছে তেহরানও।

০২ ১৮

আমেরিকার গোয়েন্দাদের দাবি, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-সহ গুপ্তচর সংস্থা সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) একাধিক পদস্থ কর্তাকে গুপ্তহত্যার পরিকল্পনা রয়েছে পারস্য উপসাগরের তীরের শিয়া মুলুকটির। আর তার জন্য প্রতিবেশী পাকিস্তানের বাসিন্দাদের কাজে লাগাচ্ছে ইরান। যা তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

Advertisement
০৩ ১৮

একই ভাবে বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ইহুদিদের নিশানা করার পরিকল্পনা রয়েছে তেহরানের। যা নিয়ে তেল আভিভকে সতর্ক করেছে ওয়াশিংটন। এই পরিস্থিতিতে ইরানি জঙ্গি হামলা ঠেকাতে ইজ়রায়েলি গুপ্তচর সংস্থা ‘মোসাদ’-এর রাডারে পাক সন্ত্রাসবাদীরাও রয়েছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

০৪ ১৮

আমেরিকা ও ইজ়রায়েলি গোয়েন্দাদের এই দাবি যে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার নয়, তার প্রমাণ মেলে গত বছরের (পড়ুন ২০২৩) ফেব্রুয়ারিতে। ওই সময়ে গ্রিসের রাজধানী আথেন্সের একটি ইহুদি রেস্তরাঁয় জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ফাঁস করে মোসাদ। তাদের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে দু’জনকে গ্রেফতার করে গ্রিস পুলিশ। যাঁর এক জন পাক নাগরিক।

০৫ ১৮

ইজ়রায়েলি সংবাদ সংস্থাগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বড় সংখ্যায় ইহুদি হত্যার জন্য আথেন্সের ‘গোস্তিজো কোসের’ রেস্তরাঁয় হামলার ছক ছিল ইরানের। এই কাজে দুই পাক বাসিন্দাকে কাজে লাগায় তেহরান। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ায় হামলা ঠেকানো গিয়েছিল।

০৬ ১৮

মোসাদের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে সৈয়দ ইরতেজা হায়দার নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে গ্রিস পুলিশ। পাকিস্তান থেকে তিনি ইউরোপের দেশটিতে চাকরি করতে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে সৈয়দ ফকর আব্বাস নামের এক জঙ্গির যোগাযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

০৭ ১৮

তদন্তে সৈয়দ ইরতেজা ও সৈয়দ ফকরের মধ্যে হোয়াট্‌সঅ্যাপে কথোপকথনের প্রমাণ পায় গ্রিস পুলিশ। সেখান থেকে তাঁরা জানতে পারেন ইরানে বসেই ওই ইহুদি রেস্তরাঁয় হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সৈয়ক ফকর।

০৮ ১৮

গ্রিস পুলিশের দাবি, প্রাথমিক ভাবে গোস্তিজো কোসেরে হামলা চালাতে রাজি ছিলেন না ইরতেজা। পরে তাঁকে ৫০ হাজার ইউরোর টোপ দেওয়া হয়। হোয়াট্‌সঅ্যাপে ফকর বলেন, কাজ ঠিকঠাক মতো হয়ে গেলে টাকার অঙ্ক আরও বাড়তে পারে। সেই লোভ সংবরণ করতে না পেরে জঙ্গিদের পাতা ফাঁদে পা দেন এই পাক নাগরিক।

০৯ ১৮

কী ভাবে ইহুদি রেস্তরাঁয় হামলা হবে, তার নীল নকশাও ইরানে বসে তৈরি করেন ফকর। প্রথমে বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে রেস্তরাঁর সবাইকে খুনের পরিকল্পনা করেন তাঁরা। পরে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের ছক কষা হয়। শেষে সেটাও বাতিল করে একে-৪৭ হাতে ওই রেস্তরাঁয় ২৬/১১-র মুম্বই হামলার ধাঁচে হামলার করবেন বলে ঠিক করেন ফকর ও ইরতেজা।

১০ ১৮

তদন্তকারীদের দাবি, চোরাই বাজার থেকে অ্যাসল্ট রাইফেল কেনার সময়ে ইরতেজা ধরা পড়ে যান। জেরায় তিনি অপরাধ কবুল করেন। পাকিস্তানে ফকরের উপর খুনের মামলা রয়েছে। ইসলামাবাদের গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি ইরান পালিয়ে আসেন। তার পর থেকেই তাঁকে ইহুদিদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে শুরু করে তেহরান।

১১ ১৮

আমেরিকান গোয়েন্দা সূত্র খবর, ২০২০ সাল থেকে ওয়াশিংটন ও তেল আভিভের পদস্থ কর্তা, সেনা অফিসার, গুপ্তচর সংস্থার এজেন্ট ও নাগরিকদের গণহত্যার অন্তত ৩৩টি পরিকল্পনা করেছে ইরান। যার অধিকাংশ ব্যর্থ করা গেলেও কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছে পারস্য উপসাগরের তীরের শিয়া মুলুকটি।

১২ ১৮

উদাহরণ হিসেবে ইরান বংশোদ্ভূত আমেরিকার সাংবাদিক রেজা ভ্যালিজাদের গায়েব হওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছে ওয়াশিংটন। এ বছরের অক্টোবর থেকে তাঁর কোনও খোঁজ মিলছে না। সিআইএ চর সন্দেহে শিয়া ফৌজ তথা ‘ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কোর’ (আইআরজিসি) তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁর উপর অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

১৩ ১৮

আমেরিকার সংবাদ সংস্থা ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘রেডিয়ো ফার্দা’য় কর্মরত ছিলেন রেজা। এ বছরের গোড়ার দিকে পরিবারের সদস্যদের আইআরজিসি আটক করেছে বলে খবর পান তিনি। তাঁদের ছাড়াতেই তেহরান রওনা হন রেজা।

১৪ ১৮

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট করেন ইরানি আমেরিকান সাংবাদিক। অগস্টে ফের সমাজমাধ্যমে সক্রিয় হন তিনি। রেজা তখন জানিয়েছিলেন, পরিবারের সদস্যদের আইআরজিসি ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে অক্টোবর থেকে বেপাত্তা হয়ে যান তিনি।

১৫ ১৮

তবে আমেরিকা ও ইজ়রায়েলের যাবতীয় অভিযোগ মানতে নারাজ ইরান। শিয়া দেশটির পাল্টা দাবি, ইহুদিরাই একের পর এক গুপ্তহত্যা করে চলেছেন। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর খুন হন পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ও পরমাণু গবেষক মোহসিন ফকরিজাদা। তেহরানের আণবিক হাতিয়ার তৈরির প্রকল্পে কাজ করছিলেন তিনি। এই হত্যার নেপথ্যে মোসাদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল ইরান।

১৬ ১৮

২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি আমেরিকার ড্রোন হামলায় ইরানের বাগদাদ বিমানবন্দরের বাইরে নিহত হন আইআরজিসির কুর্দ ফোর্সের কম্যান্ডার কাসেম সুলেমানি। তেহরানের দাবি, তাঁদের জনপ্রিয় সেনা অফিসারকে খতম করার যাবতীয় পরিকল্পনা করেছিল মোসাদ। তাদের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করেই ড্রোন হামলা চালায় ওয়াশিংটন।

১৭ ১৮

বর্তমানে ইহুদিদের সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে নেই ইরান। ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে মূলত লড়ছে তেহরানের তৈরি তিনটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। সেগুলি হল, হামাস, হিজ়বুল্লা ও হুথি। সেই তালিকায় পাকিস্তানের জঙ্গিরা যুক্ত হলে পরিস্থিতি যে ভয়াবহ হবে, তা বলাই বাহুল্য।

১৮ ১৮

প্রথম বার প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার ক্ষেত্রে কড়া মনোভাব দেখিয়েছিলেন ট্রাম্প। এ বারও তার অন্যথা হবে না বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। পাশাপাশি, আগের মতো এ বারও পাকিস্তানের উপর আর্থিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেন তিনি। যা জঙ্গি সরবরাহের ক্ষেত্রে তেহরান ও ইসলামাবাদকে পাশাপাশি আনার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করবে বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement