তিনি যেন বাস্তবের ‘মর্দানি’। চোখেমুখে সেই প্রতাপ। কাউকেই ডরান না। সে যতই ক্ষমতাবান নেতাই হোক না কেন। অন্যায় দেখলেই গর্জে ওঠেন। আবার সেই তিনিই শিষ্টের পালনকর্ত্রীর ভূমিকাতে। দেশের মাটিতে এমন অনেক মহিলা আইপিএসই রয়েছেন। তবে হাল আমলে ভারতীয় মহিলা আইপিএসদের মধ্যে চর্চা বাড়িয়েছেন অঙ্কিতা শর্মা।
অঙ্কিতাকে এক ঝলক দেখলেই বহু পুরুষের হৃদয়েই ধুকপুকানি হতে পারে। সালোয়ার-কামিজ ছেড়ে সেই সুন্দরীই যখন খাকি উর্দি পরেন, তখন তাঁর সেই অবতার দেখলে অনেকেই চমকে উঠবেন। সে কারণেই সমাজমাধ্যমে অঙ্কিতার অনুরাগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়।
ইনস্টাগ্রাম হোক কিংবা ইউটিউব— একাধিক সমাজমাধ্যমে অঙ্কিতার কাহিনি চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এমনকি, রিলস ভিডিয়োতেও আইপিএস অঙ্কিতার গতিবিধি উঠে এসেছে। ইনস্টাগ্রামে অঙ্কিতার ফলোয়ারের সংখ্যা ৫ লক্ষেরও বেশি। আবার তাঁর নামে একাধিক ফ্যান পেজও রয়েছে। ইউটিউবে অঙ্কিতার অনেক ভক্তই তাঁকে নিয়ে ভিডিয়ো বানিয়েছেন। এক কথায় সমাজমাধ্যমে সাড়া ফেলে দিয়েছেন এই অঙ্কিতা।
অঙ্কিতার মতো তো আরও অনেক মহিলা আইপিএস অফিসারই রয়েছেন দেশে। তা হলে অঙ্কিতাকে নিয়ে কেন এত উন্মাদনা? এই প্রশ্ন জাগতেই পারে যে কারও মনে। এর নেপথ্যে রয়েছে অঙ্কিতার আইপিএস হয়ে ওঠার এক সংগ্রামী কাহিনি।
১৯৯২ সালের ২৫ এপ্রিল ছত্তীসগঢ়ে জন্ম অঙ্কিতার। ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন, এক দিন আইপিএস অফিসার হবেন। ছোটবেলায় এমন অনেকেই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু, কত জন আর সেই স্বপ্নপূরণ করতে পারেন! এ ক্ষেত্রে অবশ্য অঙ্কিতা কিন্তু ব্যতিক্রমী।
আইপিএস হওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ছোটবেলায়, সেই স্বপ্নপূরণ করতে চেষ্টার কম কসুর করেননি অঙ্কিতা। স্বপ্নপূরণের যাত্রাপথ অবশ্য একেবারেই মসৃণ ছিল না। কী ভাবে সেই লক্ষ্যভেদ হল, সে কাহিনিই তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।
অঙ্কিতার বাবা রাকেশ শর্মা এবং মা সবিতা শর্মা। আর ৪-৫ জন বাবা-মায়ের মতোই শর্মা দম্পতিও তাঁদের কন্যার পড়াশোনার প্রতি সর্বদা খেয়াল রাখতেন। শোনা যায়, ছোটবেলায় অঙ্কিতাকে দেশের প্রথম মহিলা আইপিএস অফিসার কিরণ বেদীর কথা বলতেন তাঁর মা। যা অনুপ্রাণিত করত ছোট্ট অঙ্কিতাকে।
ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল অঙ্কিতার। ছাত্রী হিসাবে মেধাবী ছিলেন তিনি। ছত্তীসগঢ়ের দুর্গ শহরে তাঁর বেড়ে ওঠা। সেখানেই স্কুলের পাঠ শেষ করেন অঙ্কিতা।
স্কুলের পাঠ শেষের পর এমবিএ নিয়ে পড়াশোনা করেন অঙ্কিতা। তবে স্নাতকোত্তর পাশ করার পর কোনও সংস্থায় যোগ দেননি। সেই সময় ছোটবেলার স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
শুরু হয় ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি। তবে প্রথম চেষ্টাতে সফল হননি অঙ্কিতা। ব্যর্থতায় হাল ছাড়েননি। বরং যত বার ব্যর্থ হয়েছেন, ততই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির মধ্যেই ব্যক্তিজীবনে নতুন ইনিংস শুরু করেন অঙ্কিতা। বিয়ে করেন ভারতীয় সেনার ক্যাপ্টেন বিবেকানন্দ শুক্লাকে। তবে বিয়ের পরও পড়াশোনা চালিয়ে যান।
তৃতীয় বারের চেষ্টায় ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হন অঙ্কিতা। সেটা ২০১৮ সাল। ২০৩ র্যাঙ্ক করে তিনি। তাঁর এই সাফল্যের নেপথ্যে ছিলেন তাঁর স্বামী। কথায় আছে না, প্রত্যেক পুরুষের সাফল্যের নেপথ্যে এক জন নারী থাকেন। অঙ্কিতার জীবনে এ ক্ষেত্রে উল্টোটা হয়েছে।
এর পর শুরু হয় আইপিএস অফিসার হওয়ার প্রশিক্ষণ। যোগ দেন ছত্তীসগঢ় ক্যাডারে। ছত্তীসগঢ়ের প্রথম মহিলা আইপিএস অফিসার হিসাবে এর পর নিজের কর্মজীবন শুরু করেন অঙ্কিতা। তার পরই এই মহিলা আইপিএসকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
রাইপুরে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছিল অঙ্কিতাকে। সে রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম মহিলা অফিসার হিসাবে প্যারেডে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যা ছিল নজরকাড়া। এর পর থেকে অঙ্কিতাকে নিয়ে চর্চা শুরু হতে থাকে। তবে শুধু পুলিশ মহলেই নয়, জনমানসেও অঙ্কিতাকে নিয়ে শুরু হয় উন্মাদনা।
এক বার এক মহিলা বিধায়কের সঙ্গে বিতণ্ডা বেধেছিল অঙ্কিতার। যা নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছিল সমাজমাধ্যমে। সেই সময় অঙ্কিতার তারিফ করেছিলেন অনেকেই।
বর্তমানে পুলিশ অফিসার হিসাবে কাজ করছেন অঙ্কিতা। আবার সেই সঙ্গেই আগামী প্রজন্মের দায়িত্বও পালন করছেন। আগামী দিনে যাঁরা ইউপিএসসি পরীক্ষা দিতে চান, তাঁদের স্বপ্নপূরণের জন্য উদ্যোগী হয়েছেন অঙ্কিতা। নিজের পেশার ব্যস্ততার ফাঁকে প্রতি রবিবার ক্লাস নেন তিনি। যেখানে ইউপিএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন।
সমাজমাধ্যমে অত্যন্ত পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন এই মহিলা আইপিএস অফিসার। ব্যাডমিন্টনেও তাঁর ঝোঁক রয়েছে। সে কারণে কাজের ফাঁকে ব্যাডমিন্টন খেলতে ভোলেন না তিনি। আবার ঘোড়সওয়ারির প্রতিও নেশা রয়েছে। ঘোড়সওয়ারির বেশ কিছু ছবিও তিনি ভাগ করে নিয়েছেন সমাজমাধ্যমে।
কথায় আছে, সুন্দরী আবার একই সঙ্গে বুদ্ধিমতী— এক জন নারীর মধ্যে এই দুইয়ের মিশেল খুব বিরল। যা রয়েছে অঙ্কিতার মধ্যে। এক দিকে, সুন্দরী। আবার অন্য দিকে, দুঁদে আইপিএস। আর সে কারণেই আম আদমির মনে জায়গা করে নিয়েছেন অঙ্কিতা।