সমাজমাধ্যমে অনুরাগীর সংখ্যা আকাশছোঁয়া। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তার অনুরাগীর সংখ্যা এক কোটির কাছাকাছি। অনুরাগীর সংখ্যার নিরিখে বহু খ্যাতনামীকে টেক্কা দিচ্ছে জিফ্পম।
সমাজমাধ্যমে যে সব পোষ্যের অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাদের মধ্যে উপার্জনের ক্ষেত্রে প্রথমে রয়েছে জিফ্পম।
বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকার প্রথম সারিতে রয়েছে ফেসবুক-কর্তা মার্ক জ়াকারবার্গের নাম। জিফ্পমের খ্যাতি নজরে পড়েছে জ়াকারবার্গেরও।
জিফ্পমের আয়ের একমাত্র উৎস সমাজমাধ্যম। ইনস্টাগ্রামের পাতায় এক একটি পোস্ট করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা উপার্জন করে সে।
২০১৩ সালে আমেরিকার জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কেটি পেরির ‘ডার্ক হাউস’ গানটির ভিডিয়োয় প্রথম দেখা যায় জিফ্পমকে। কয়েক সেকেন্ডের আবির্ভাবে সকলের মনে জায়গা করে নেয় সে।
জিফ্পম হল পোমেরিয়ান প্রজাতির একটি কুকুর। অনেকের মতে, জিফ্পম সাম্প্রতিক কালে নেটপাড়ায় সবচেয়ে মিষ্টি কুকুর।
কখনও জিফ্পমকে ক্যাফেতে বসে নিজের পছন্দের খাবার খেতে দেখা যায়, কখনও বা মোবাইল ফোনে নিজের প্রিয় ভিডিয়ো গেম খেলতে দেখা যায়। নিজের অনুরাগীদের কাছে নানা ভাবে ধরা দেয় সে।
একটি সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, বিশ্ব জুড়ে যে সকল পোষ্যের নামে সমাজমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাদের অনুরাগীর সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি হলে পোস্টপিছু ভাল আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
যদি সমাজমাধ্যমে কোনও পোষ্যের অনুরাগীর সংখ্যা দেড় লক্ষ থেকে আড়াই লক্ষের মধ্যে থাকে সে ক্ষেত্রে পোস্টপিছু আয়ের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। আয়ের অঙ্ক নজরে রেখে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী কুকুর হল জিফ্পম।
বর্তমানে জিফ্পমের অনুরাগীর সংখ্যা ৯২ লক্ষের গণ্ডি পার করেছে। এই সংখ্যা এক কোটির দরজা খুব তাড়াতাড়ি টপকে যাবে বলে সমাজমাধ্যম বিশেষজ্ঞদের অনুমান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজমাধ্যমে একটি ছবি অথবা ভিডিয়ো পোস্ট করলে সেখান থেকে ৯.৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে জিফ্পম।
জিফ্পমের সাফল্য উদ্যাপনের জন্য ২০১৭ সাল থেকে আমেরিকায় ২০ অগস্ট ‘জিফ ডে’ পালন করা হয়। লস অ্যাঞ্জেলস সিটি কাউন্সিলের তরফে এই উৎসব যাপনের ঘোষণা করা হয়।
২০১৮ সালে ইনস্টাগ্রামে নতুন ‘অগমেন্টেড রিয়্যালিটি ফিল্টার’ নামের একটি বৈশিষ্ট্য যোগ করার অনুষ্ঠানে জিফ্পমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মার্ক জ়াকারবার্গ।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তিন তিন বার নাম উঠেছে জিফ্পমের। সাধারণত সামনের দু’পায়ে ভর বেশি দিয়ে হাঁটে জিফ্পম। এ ভাবে যে কুকুরেরা হাঁটে তাদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বেগে ছুটে নজির গড়েছে জিফ্পম।
২০২২ সালের ৭ অক্টোবর টিকটকে আচমকা জিফ্পমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। তার অনুরাগীরা জিফ্পমের স্মৃতিতে একাধিক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ফেলেন। পরে অবশ্য জানা যায়, এই খবর আদতে ভুয়ো। জিফ্পম বেঁচে রয়েছে দিব্য।
২০১০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জন্ম জিফ্পমের। চলতি বছরে ১৪-য় পা রাখল সে। ২০১৩ সালে জিফ্পমকে নিয়ে তার মালিক লস অ্যাঞ্জেলসে চলে যান।
২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কেটি পেরির একটি মিউজ়িক ভিডিয়োয় প্রথম দেখা যায় জিফ্পমকে। সেই বছরেই ‘অ্যাডভেঞ্চার্স অফ বেলি: আ নাইট ইন কাউটাউন’ ছবিতে দেখা যায় তাকে। এর পর একাধিক ছবিতে অভিনয় করে জিফ্পম।
২০১৬ সালে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায় জিফ্পমকে। ডিজ়নির ‘বিজ়ার্ডভার্ক’ নামের একটি সিরিজ়ে ছিল সে। নামী ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনেও দেখা যায় তাকে।
জিফ্পমের জনপ্রিয়তা এতটাই বেশি যে, ২০১৭ সালে ‘আই অ্যাম জিফ্পম’ নামে একটি বই প্রকাশ পায়। তিন বছর পর জিফ্পমের ছবি দিয়ে একটি ক্যালেন্ডারও প্রকাশিত হয়।
জিফ্পমের ছবি দিয়ে ‘জিফমোজি’ নামের একটি বিশেষ ইমোজি তৈরি করা হয়। ইনস্টাগ্রামের পাতায় বহু খ্যাতনামী তারকার সঙ্গে ছবি দেখা যায় জিফ্পমের।
স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, গত ১২ বছরে জিফ্পমের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২০৬ কোটি টাকা। বর্তমানে ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করে ২৬ লক্ষ টাকা উপার্জন করে সে। অন্য দিকে টিকটকে পোস্টপিছু প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা আয় তার।
ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটক ছাড়াও ইউটিউব মাধ্যমে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে দেখা যায় জিফ্পমকে। প্রতি বিজ্ঞাপনী প্রচারে ১২ লক্ষ টাকা আয় করে সে।