মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে গেল ৫জি স্পেকট্রাম নিলাম প্রক্রিয়া। শেষ পর্যন্ত ভারত পা রাখছে যোগাযোগ ব্যবস্থার নবতম পরিবর্তনের দুনিয়ায়। নিলামে অংশ নিয়েছে তিন পরিচিত সংস্থা, জিও, এয়ারটেল এবং ভিআই। পাশাপাশি অংশ নিয়েছে নতুন সংস্থা আদানি ডেটা নেটওয়ার্কও।
নিলাম শুরু হয়েছে মঙ্গলবার সকাল ১০টায়। চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। যদি প্রক্রিয়া শেষ না হয় বা চাহিদা বজায় থাকে, তা হলে বুধবার আবার সকাল ১০টায় নিলাম শুরু হবে।
৫জি অর্থাৎ পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিষেবা। এতে যে শুধু আরও দ্রুত গতির ইন্টারনেট পাওয়া যাবে তা-ই নয়, গ্রাহকদের ফোন করার পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং সংযোগ সংক্রান্ত সমস্যাও অতীতের পাতায় চলে যাবে।
কেন্দ্রীয় সরকার ২০ বছরের জন্য ৭২ গিগাহার্টজের এয়ারওয়েভসের ১০টি ব্যান্ডের জন্য নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বেস প্রাইস অর্থাৎ ভিত্তি বা প্রারম্ভিক মূল্য ৪.৩ লক্ষ কোটি টাকা।
কার কত বিনিয়োগ? রিলায়েন্স জিও নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা (আর্নেস্ট মানি ডিপোজিট বা ইএমডি) জমা রেখেছে। দ্বিতীয় স্থানে ভারতী এয়ারটেল, তারা ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা (আর্নেস্ট মানি ডিপোজিট বা ইএমডি) জমা করেছে। তৃতীয় ভোডাফোন-আইডিয়া ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা (আর্নেস্ট মানি ডিপোজিট বা ইএমডি) জমা করেছে। এবং আদানি ডেটা নেটওয়ার্ক ১০০ কোটি টাকা জমা করেছে।
টেলিকম ক্ষেত্রে এই প্রথম প্রবেশ করলেন গৌতম আদানি। তাঁর সংস্থা আদানি ডেটা নেটওয়ার্কও ৫জি নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে। আদানির সংস্থা প্রাথমিক ভাবে ১০০ কোটি টাকা জমা রেখেছে।
অম্বানী বনাম আদানি? এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা দৃশ্যত কম। আদানি গোষ্ঠীর সংস্থা যেখানে ১০০ কোটি টাকা জমা রেখে (আর্নেস্ট মানি ডিপোজিট বা ইএমডি) নিলামে অংশ নিচ্ছে, সেখানে মুকেশ অম্বানীর রিলায়েন্স জিও ১৪ হাজার কোটি টাকা জমা রেখে (আর্নেস্ট মানি ডিপোজিট বা ইএমডি) নিলামে যাচ্ছে।
বিমানবন্দর, বন্দর এবং লজিস্টিক্সে সাইবার সিকিউরিটি প্রদানের জন্যই আদানি ডেটা নেটওয়ার্ক নিলামে অংশ নিচ্ছে বলে সংস্থা সূত্রে খবর।
বিশ্বের এগিয়ে থাকা বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যেই ৫জি পরিষেবা চালু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ভারতের মতো বিপুল বপু অর্থনীতির পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল পরিষেবায় পা রাখাটা অবশ্যম্ভাবী ছিল।
৫জি নেটওয়ার্কের সবচেয়ে বড় দিক, তার ‘বিদ্যুৎ গতি’। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, ৪জি পরিষেবার তুলনায় ১০ গুণ বেশি গতিময় ৫জি। অর্থাৎ, ৪জি পরিষেবা যেখানে ১০০ এমবিপিএস গতি দিয়ে থাকে, সেখানে ৫জি-র গতি হতে পারে ১০ জিবিপিএস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫ জিবির একটি সিনেমা ডাউনলোড করতে ৪জি-র সময় লাগে ৪০ মিনিট। সেখানে ৫জি-তে সেই সিনেমা ডাউনলোড হতে পরে মাত্র ৩৫ সেকেন্ডে। একই কাজ করতে ৩জি পরিষেবার সময় লাগে ২ ঘণ্টা, ২জি-র ক্ষেত্রে তা ২.৮ দিন।
গতি বাড়লে পাল্লা দিয়ে খরচও কি বাড়বে? বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ক্ষেত্রে ডেটার দাম খুব সস্তা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। সংস্থাগুলোর দাবি, ৪জি-র মতোই ৫জি-র ক্ষেত্রেও একাধিক ডেটা প্ল্যান রাখা হবে। তবে সেগুলোর দাম কত হবে, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে। নিলাম প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের আবার দাবি, ৪জি পরিষেবা দুনিয়ায় সবচেয়ে সস্তা ভারতেই। ৫জি-র ক্ষেত্রেও তেমন না হওয়ার কোনও কারণ নেই।
কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব আগেই জানিয়েছিলেন, দেশের ২০ থেকে ২৫টি শহরে ২০২২-এর শেষ নাগাদ ৫জি পরিষেবা চালু হয়ে যাবে। বিশ্বের অন্যান্য জায়গার তুলনায় ভারতে ৫জি-র দামও যে কম হবে, তা-ও দাবি করেছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার নিলাম শুরু হওয়ার অর্থ, আগেই ঘোষিত অগস্টের দিনক্ষণ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এয়ারটেল, জিও বা ভিআই সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিক ভাবে পরীক্ষামূলক ৫জি পরিষেবা দেওয়া শুরু করতে পারে।
টেলিকম মন্ত্রকের প্রত্যাশা, ৫জি নিলাম প্রক্রিয়া থেকে তারা অন্তত ৭০ হাজার কোটি থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে আনতে পারবে কেন্দ্র।
৫জি পরিষেবা পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে ভারতের রাস্তায় অবলীলায় দৌড়তে পারবে চালকবিহীন গাড়ি। বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিতে বহুল ব্যবহার হবে ড্রোনের।
‘মেটাভার্স’ বা ‘অগমেন্টেড রিয়্যালিটি’র সঙ্গে আরও বেশি করে পরিচয় হবে মানুষের। যেখানে একজন ব্যক্তি তাঁর প্রয়াত কোনও পূর্বপুরুষের মডেল তৈরি করে তাঁর থ্রিডি অবতার হাজির করতে পারবেন। পারবেন তাঁর সঙ্গে কথা চালাতেও। এক কথায়, বদলে যাবে চারপাশের অনেক কিছুই।
এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, প্রযুক্তি যদি কর্মসংস্থান কেড়ে নেয়, তা হলে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার বিষয়ে সরকারের নীতি কী হবে?
প্রশ্ন থাকছে আরও। নতুন এই প্রযুক্তি পরিবেশের উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে? পাখি-সহ বন্যপ্রাণের উপরই বা এর প্রভাব কী হতে চলেছে, তা নিয়ে বহু গবেষণা হচ্ছে।