এক ভারতীয় কন্যাকে প্রাপ্তবয়স্কদের ওয়েবসাইট সামলানোর ভার দিল আন্তর্জাতিক সংস্থা ওনলি ফ্যানস। গুগল, মাইক্রোসফট, টুইটারের পর আবারও আন্তর্জাতিক সংস্থার সিইও পদে উত্তরণ হল এক ভারতীয় সন্তানের।
সুন্দর পিচাই, সত্য নাদেলা, পরাগ আগরওয়ালদের ক্লাবের নতুন সদস্যের নাম আম্রপালি গান। তিনি ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রাপ্তবয়স্কদের নেটমাধ্যম সংস্থা ওনলি ফ্যানস-এর চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন।
১০০ কোটি ডলারের সংস্থা। আম্রপালির আগে এই সংস্থার প্রধান ছিলেন টিম স্টোকলে। ইনিই ওনলি ফ্যানস-এর প্রতিষ্ঠাতা।
টিম পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে জানিয়েছেন, নতুন লক্ষ্য ছোঁওয়ার ইচ্ছে থেকেই পদ ছাড়ছেন। তবে একই সঙ্গে টিম তাঁর উত্তরসূরি আম্রপালির প্রশংসাও করেছেন। টিমের কথায়, ওনলি ফ্যানস নিয়ে তাঁর মতোই আবেগপ্রবণ আম্রপালি। তাঁর বিশ্বাস, ওয়েবসাইটের উন্নতিসাধনে আম্রপালি তাঁর থেকেও ভাল কাজ করবেন। তবে আম্রপালির ভাল কাজ ইতিমধ্যেই নজরে পড়েছে ওনলি ফ্যানসের বোর্ড সদস্যদের।
২০১৬ সালে শুরু হয় ওনলি ফ্যানস। তবে নাম-যশ হয় অতিমারির সময়ে। আম্রপালিও এই সময় থেকেই ওনলি ফ্যানস-এর সঙ্গে।
বয়স ৩৬। জন্ম মুম্বইয়ে। আম্রপালির এর বেশি আর কোনও ভারতীয় যোগের উল্লেখ তাঁর নেটমাধ্যমে বা অন্যত্র। তবে উচ্চশিক্ষা মূলত বিদেশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মার্চেন্ডাইজ মার্কেটিং নিয়ে স্নাতক হওয়ার পর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ এবং আন্তঃসংগঠন যোগাযোগ নিয়ে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন। পরে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে অন্তেপ্রেনিয়রশিপ নিয়ে পড়াশোনা করেন।
ওনলি ফ্যানস-এ আম্রপালির কাজ শুরু ২০২০ সালে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাদারেরা তখন অর্থের প্রয়োজনে ওনলি ফ্যানস-এর দ্বারস্থ হচ্ছেন, আম্রপালি তখন সেই সংস্থার বিপণন প্রধান। টিম জানিয়েছেন, বিপণন প্রধান হিসেবে আম্রপালি সংস্থাটিকে অনেকটাই এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন।
বৈশিষ্টের বিচারে ওনলি ফ্যানস একটি নেটমাধ্যম। তবে অন্য নেটমাধ্যমের থেকে এর নিয়ম কানুন একটু আলাদা। এখানে সদস্য পদ নিতে হয় চাঁদার বিনিময়ে। তবে একবার সদস্য হলে অবাধ স্বাধীনতা। সদস্যরা ইচ্ছেমতো বিষয়বস্তু আপলোড করতে পারেন। সেই সব বিষয় অন্য সদস্যদের পছন্দ হলে তা থেকে অর্থ উপার্জনও করতে পারেন এই ওয়েবসাইট থেকে। তবে ওয়েবসাইটে ঢুকতে হলে চাঁদা দিয়ে গ্রাহক হতে হবে।
ওনলি ফ্যানস-এ ফিটনেস প্রশিক্ষক থেকে শুরু করে অঙ্কের শিক্ষকেরও সদস্যপদ আছে। তাঁদের দেওয়া বিষয়বস্তুর আলাদা আলাদা ভক্তকুলও আছে। যদিও ২০২০ সালে ওনলি ফ্যানস পরিচিতি পায় মূলত প্রাপ্ত বয়স্কদের ভিডিয়ো এবং ছবির জন্য। পর্ন তারকা থেকে শুরু করে যৌনকর্মীরাও এই ওয়েবসাইটের সদস্যপদ নেন। প্রাপ্তবয়স্ক বিষয়বস্তুও দিতে শুরু করেন।
হলিউডের তারকারাও সদস্যপদ নেন ওনলি ফ্যানস-এ। এক এক জন সদস্য প্রতি মাসে কোটি কোটি ডলার উপার্জন করেন বলেও দাবি করেছেন অনেকে। ওনলি ফ্যানস এঁদের থেকে কমিশন হিসেবে ২০ শতাংশ অর্থ নেয়। বদলে সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। নিশ্চিত করে, সদস্য ছাড়া আর কেউ সদস্যদের দেওয়া ব্যক্তিগত বিষয়বস্তু দেখতে পাবেন না।
ওয়েবসাইটের দায়িত্ব নিয়ে আম্রপালি বলেছেন, ‘‘ওনলি ফ্যানস পৃথিবীর সুরক্ষিততম ওয়েবসাইট। সদস্যদের কাছে আমার প্রতিশ্রুতি, এই নিরাপত্তার বিন্দুমাত্র কমবে না। একইসঙ্গে যাতে তাঁরা এখান থেকে আরও অর্থ উপার্জন করতে পারেন তা আমরা দেখব।’’
ওনলি ফ্যানস-এ আম্রপালির উত্থান ঝড়ের গতিতে হয়েছে বলা চলে। ওয়েবসাইটে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা মাত্র এক বছরের। অবশ্য তার আগে অন্যান্য সংস্থাতেও গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব সামলেছেন।
এর আগে আরকেড এজেন্সির পরামর্শদাতা ছিলেন। আমেরিকার প্রথম গাঁজা সেবনের রেস্তরাঁ ক্যানাবি ক্যাফে-র দায়িত্বে ছিলেন। এমনকি বলবর্ধক পানীয় রেড বুলের বিপণনের দায়িত্বেও ছিলেন আম্রপালি।
তবে নেটমাধ্যমে তেমন সক্রিয় নন। বিয়েও করেননি এখনও। ওনলি ফ্যানস-এ তাঁর সদস্যপদ আছে। তবে সেখানেও নিজের ব্যক্তিগত কিছু মুহূর্ত ছাড়া বিশেষ কিছু ভাগ করে নেননি আম্রপালি।