সালটা ২০০৪। সে বছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে আচমকাই উধাও হয়ে গিয়েছিল অ-পঞ্জাবি পরিযায়ী ২৩ জন শিশু। তাদের মধ্যে অনেকেই যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছিল। ১৭ জন শিশুকে হত্যা করা হয়।
খুন করার ধরন জানলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য! কিন্তু কে খুন করল এই নিষ্পাপ শিশুদের? উত্তর খুঁজতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়ল দরবরা সিংহ। যে পরে দেশের অন্যতম কুখ্যাত ‘সিরিয়াল কিলার’ হিসেবে পরিচিত হল।
জালন্ধরের পরিযায়ী শিশুদের বেছে বেছে অপহরণ করে গলার নলি কেটে খুন করত সে। শুধু কি তাই! খুনের পর শিশুদের নিথর দেহগুলিকে ধর্ষণ করত দরবরা।
তদন্তে নেমে পুলিশের কাছে আরও ভয় ধরানোর মতো তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, খুন-ধর্ষণের পর ভাল-মন্দ খাবার খেয়ে মদ্যপান করে রীতিমতো ‘ফুর্তি’ করত সে।
কিন্তু পরিযায়ী শিশুরা কী এমন দোষ করল যে, তাদের এমন ভয়ঙ্কর পরিণতি ঘটাল দরবরা। জানা যায়, পরিযায়ী শিশুদের ঘৃণার চোখে দেখত সে। তাই ক্রোধের বশে তাদের সঙ্গে এ হেন ‘বর্বরোচিত’ কাজ করত দরবরা।
দু’টি খুনের মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছিল ওই খুনিকে।
আরও দু’টি খুনের মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণের অভাবে হাই কোর্টে বেকসুর খালাস পেয়ে যায় সে।
একই কারণে আরও চারটি মামলায় মুক্তি পেয়েছিল দরবরা। ১৯৯৬ সালে কাপুরথালায় এক পরিযায়ী শ্রমিকের মেয়েকে ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
অমৃতসর জেলার জাল্লুপুর খেরা গ্রামের বাসিন্দা ছিল দরবরা। পরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল সে। পাঠানকোটে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে কর্মরত ছিল দরবরা।
১৯৭৫ সালে মেজর ভি কে শর্মার বাড়িতে গ্রেনেড ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। গ্রেফতারও করা হয়েছিল। যদিও পরে বেকসুর খালাস করা হয়।
বদ অভ্যাসের কারণে নিজেদের বাড়ি থেকে দরবরাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন স্ত্রী।
যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করতে করতেই ২০১৮ সালে তার মৃত্যু হয়। দরবরা যে অপরাধ করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। সে কারণে তার মৃতদেহ নিতে চায়নি পরিবার।