মরাঠি রাজনীতির পরিচিত মুখ রাজ ঠাকরে। রাজনীতির পাশাপাশি সিনেমাজগতের প্রতিও আগ্রহ ছিল তাঁর। ১৯৯০ সালের ১১ ডিসেম্বর মরাঠি সিনেমাজগতের প্রযোজক-পরিচালক মোহন ওয়াঘের কন্যা শর্মিলাকে বিয়ে করেন তিনি।
কিন্তু বিয়ের পরে বলিপাড়ার এক অভিনেত্রীর প্রেমে পড়েন রাজ। নব্বইয়ের দশকে বলিউডের নায়িকাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সোনালি বেন্দ্রে। তাঁর অনুরাগীর সংখ্যাও ছিল প্রচুর।
সোনালির অভিনয় এবং রূপে মুগ্ধ হন রাজ। তিনি যে বিবাহিত, সে হুঁশও ছিল না রাজের। যে কোনও উপায়ে সোনালিকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তিনি।
রাজের এমন আচরণ দেখে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন বালাসাহেব ঠাকরে। রাজ সম্পর্কে বালাসাহেবের ভাইপো। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম জনসত্তার একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে রাজকে নাকি এই বিষয়ে বুঝিয়েছিলেন বালাসাহেব। বালাসাহেব বুঝিয়ে রাজকে বলেছিলেন, তিনি যদি বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও বলিউডের এক অভিনেত্রীকে বিয়ে করেন তবে তাতে ঠাকরে পরিবারের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে।
শুধু তাই নয়, পারিবারিক মর্যাদার পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতেও তার প্রভাব পড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাজকে জানান বালাসাহেব।
কিন্তু সোনালির প্রতি রাজের যে দুর্বলতা তৈরি হয়েছে, সে কথা ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, রাজের সঙ্গে সোনালির আগে থেকেই পরিচয় ছিল। রাজের জন্যই নাকি সোনালি অভিনয়জগতে তাঁর কেরিয়ার শুরু করেন।
অনেকে আবার মনে করেন, সোনালির পূর্বপরিচিত ছিলেন না রাজ। নব্বইয়ের দশকে যখন সোনালির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে, তখন রাজ অভিনেত্রীর ছবি দেখে তাঁর প্রেমে পড়েন।
বলিপাড়ার অধিকাংশের মতে, সোনালির সঙ্গে নাকি রাজ গোপনে আংটিবদল করে ফেলেছিলেন। দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক থাকলেও তা কখনও প্রকাশ্যে আনেননি তাঁরা। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ভাস্করের প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
কিন্তু সোনালির সঙ্গে রাজের সম্পর্ক নিয়ে কাঁটাছেড়া শুরু হয়, যখন হলিউডের গায়ক মাইকেল জ্যাকসন ভারত ভ্রমণে আসেন। ১৯৯৬ সালে ভারত ভ্রমণে এসে মুম্বই বিমানবন্দরে নেমেছিলেন মাইকেল। তাঁকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন রাজ।
রাজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল সোনালিকে। বলিপাড়ার অন্য কোনও তারকা ছিলেন রাজের সঙ্গে। হঠাৎ সোনালিকে কেন তিনি ডেকেছিলেন তা নিয়ে চর্চা শুরু হয় বলিপাড়ায়।
রাজের পরনে ছিল কুর্তা-পাজামা। তার সঙ্গে মানানসই নেহরু জ্যাকেট। কিন্তু সোনালিকে সচরাচর যে ধরনের পোশাকে দেখা যেত, তার থেকে ভিন্ন সাজে ধরা দিয়েছিলেন তিনি।
গয়নাগাটি থেকে শুরু করে শাড়ি— পুরোপুরি মরাঠি সাজে সেজেছিলেন সোনালি। অভিনেত্রীকে এমন সাজে দেখে চমকে গিয়েছিলেন পাপারাৎজিরা। মুহূর্তের মধ্যে তাঁদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। সোনালির সঙ্গে রাজের সম্পর্ক নিয়ে আবার চর্চা শুরু হয়।
সোনালিও নাকি রাজকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন বলে বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়। আংটিবদলের পর নাকি তাঁরা মাঝেমধ্যেই একসঙ্গে থাকতেন। এমনকি, রাজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবেই নাকি থাকতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
কিন্তু বালাসাহেবের নির্দেশ মেনেই সোনালির কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেন রাজ। রাজনীতি এবং পারিবারিক মর্যাদা রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
২০০২ সালে গোল্ডি বহেলকে বিয়ে করেন সোনালি। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নারাজ়’ ছবির শুটিং ফ্লোরে সোনালির সঙ্গে আলাপ হয় গোল্ডির।
বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, রাজের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরেই নাকি গোল্ডির সঙ্গে মেলামেশা বেড়ে গিয়েছিল সোনালির। তার পরেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন অভিনেত্রী। নব্বইয়ের দশকে চুটিয়ে অভিনয় করলেও পরে অভিনয় থেকে সাময়িক বিরতি নেন তিনি।
২০১৫ সালে ‘দ্য মডার্ন গুরুকুল: মাই এক্সপেরিমেন্ট উইথ পেরেন্টিং’ নামের একটি বই লেখেন সোনালি। ২০১৮ সালে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। বর্তমানে ক্যানসার থেকে সেরে উঠেছেন তিনি। এখনও বড় পর্দা থেকে অবশ্য দূরেই রয়েছেন সোনালি।