১০০ বছর আগে দ্বীপরাষ্ট্রে গিয়ে বাস করতে শুরু করেছিল এই ভারতীয় পরিবার। ক্রমে সেখানে থিতু হয়। তার পর এক সময় সেখানকার সব থেকে ধনী ব্যবসায়ীতে পরিণত হন তাঁরা। এক দশক আগে আস্ত একটি দ্বীপই কিনে নেন। শুরু করেন নতুন ব্যবসা।
একটা বাড়ি, হোটেল বা কলকারখানা অনেকেই কেনেন। তা বলে একটা আস্ত দ্বীপ! তা-ই করেছিলেন সুনীল শাহ।
গুজরাতের কচ্ছের মাণ্ডবিতে বাস ছিল শাহ পরিবারের। জীবন শাহ স্বপ্ন দেখেছিলেন জীবনে কিছু একটা করার।
১৮৯৪ সালে মাণ্ডবী থেকে জীবন পাড়ি দেন সেশেলসে। তখন সেটি ছিল ব্রিটিশদের উপনিবেশ। সেখানেই বাস করতে শুরু করেন। শুরু করেন ব্যবসা।
এমনিতে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবেই পরিচিত সেশেলস। ভারত মহাসাগরের বুকে ১৫০টি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে তৈরি হয়েছে এই দেশ। এর মধ্যে বহু দ্বীপ জনশূন্য।
সেশেলে মোট জনসংখ্যা এক লক্ষের আশপাশে। সেখানে যা জনসংখ্যা, তার থেকে বেশি মানুষ এখানে প্রতি বছর বেড়াতে আসেন। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে সেশেলসে বেড়াতে গিয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৫০ হাজার পর্যটক। ক্রমে আরও বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা।
শতাধিক বছর আগে এ হেন ছোট্ট দেশেই থিতু হয়েছিলেন জীবন শাহ। তখন সেখানে বাস করতেন হাতে গুনে কয়েক হাজার জন। ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন জীবন।
ছেলে অনন্ত জীবন শাহের নামে সংস্থার নাম রাখেন এজে শাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। সেশেলের রাজধানী ভিক্টোরিয়ায় রয়েছে সংস্থার দফতর।
২০১৩ সালে সুনীল ঠিক করেন আস্ত একটা দ্বীপ কিনবেন। সেখানে গড়ে তুলবেন বিলাসবহুল রিসর্ট। যেই ভাবা, সেই কাজ।
রাউন্ড আইল্যান্ড নামে আস্ত একটি দ্বীপ কেনেন সুনীল। ০.০১৮ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে সেই দ্বীপ। সুনীলের কেনার আগে এক জনও বাস করতেন না সেখানে।
মাহে শহর থেকে নৌকায় চেপে ১০ মিনিট সময় লাগে এখানে পৌঁছতে। সেন্ট অ্যান মেরিন জাতীয় উদ্যানের অন্তর্গত এই দ্বীপ।
পাঁচ বছর ধরে ওই নির্জন দ্বীপে রিসর্ট তৈরি করেছিলেন সুনীল। খরচ পড়েছিল ৯০ কোটি আমেরিকান ডলার।
রিসর্টের নকশা করেছিলেন ভারতীয় স্থাপত্যবিদ টোনি জোসেফ। ভারতে বেশ কিছু হোটেলের নকশা করেছিলেন। ছ’মাস ধরে সেশেলসে ঘুরে সেখানকার প্রাচীন স্থাপত্য রীতি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
এর পর রিসর্টের নকশা করেছিলেন টোনি। রিসর্টের বিভিন্ন অংশে রোপণ করা হয়েছিল ২০ হাজার স্থানীয় গাছ। পিছনে ছিল জঙ্গল। সেই জঙ্গলের থেকে কোনও ভাবেই যাতে রিসর্টটিকে আলাদা মনে না হয়, সে কারণে বসানো হয়েছিল হাজার হাজার গাছ।
রিসর্টে রয়েছে আটটি ভিলা। সেগুলি দেখতে অনেকটা সেশেলসের স্থানীয় বাংলোগুলির মতোই। দুবাইয়ের একটি হোটেল সংস্থা এই রিসর্ট দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে।
রিসর্ট সংলগ্ন তিনটি সৈকতে নিজের মতো সময় কাটাতে পারেন পর্যটকেরা। রয়েছে ইনফিনিটি সুইমিং পুল, একান্তে বসে সময় কাটানোর জন্য পানশালা।
গোটা রিসর্টে থাকতে পারেন সর্বোচ্চ ২৪ জন। এক রাতের জন্য আটটি ভিলা বুক করতে চাইলে খরচ পড়বে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে আট লক্ষ টাকা।
এক একটি ভিলায় এক রাত কাটাতে গেলে মাথাপিছু খরচ পড়বে ৪৫ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা।
সুনীলের শখ অ্যান্টিক সংগ্রহ। স্পেন, ফ্রান্সের বিভিন্ন নিলামে অংশ নিয়ে পোস্টার কেনেন তিনি। ব্যক্তিগত সংগ্রহের সে সব অ্যান্টিক তিনি সাজিয়ে রাখেন রিসর্টে। সেশেলের এই রিসর্টে ছুটি কাটাতে আসেন দেশ-বিদেশের শিল্পপতি থেকে সেলেবরা।