লাল ‘বহিখাতা’ নিয়ে চলতি অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আর সেই বাজেটে বেতনভোগীদের আয়কর ছাড় নিয়ে নয়া ঘোষণা করল কেন্দ্র। নয়া আয়কর কাঠামোয় বছরে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর মকুব করার ঘোষণা করা হয়েছে।
এখন থেকে বেতনভোগীরা নয়া কর কাঠামো মেনেই আয়কর জমা দিতে পারবেন। তবে কেউ চাইলে পুরনো কর কাঠামো অনুযায়ীও আয়কর জমা দিতে পারেন বলে কেন্দ্রের ঘোষণা। আর তা নিয়েই ধন্দে পড়েছেন মধ্যবিত্ত।
নয়া আয়কর কাঠামোয় সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর মকুবের ঘোষণা করা হলেও বেশ কিছু হিসাবও রয়েছে তার মধ্যে। আর সেই জটিল হিসাবের রহস্য এখনও ভেদ করতে পারেনি মধ্যবিত্ত। দোটানায় থাকা মধ্যবিত্ত এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না, কোন কর কাঠামো তাঁরা বেছে নেবেন।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক, কি বলছে নয়া পাঁচস্তরীয় কর কাঠামো। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ঘোষণা, ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বছরে আয় করলে কোনও কর দিতে হবে না। আগের কাঠামো অনুযায়ী আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হয় না। ৩ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাৎসরিক আয় হলে কর দিতে হবে ৫ শতাংশ। বাৎসরিক আয় ৬ লক্ষ থেকে ৯ লক্ষ হলে এক জন বেতনভোগীকে কর দিতে হবে ১০ শতাংশ। পুরনো কাঠামোতে এই পর্যন্ত হিসাব একই ছিল।
বাৎসরিক আয় ৯ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে হলে কর দিতে হবে ১৫ শতাংশ হারে। যা আগের কর কাঠামো অনুযায়ী ছিল ২০ শতাংশ। ১২ লক্ষ টাকা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে ২০ শতাংশ। যা আগে ছিল ২৫ শতাংশ।
বছরে আয় যদি ১৫ লক্ষ টাকার বেশি হয় তা হলে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে বলে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক বাজেট অধিবেশনে ঘোষণা করেছে। আগের কর কাঠামোতেও ১৫ লক্ষ টাকার বেশি আয়ে ৩০ শতাংশ হারেই কর দিতে হত।
নয়া কর কাঠামোর হিসাব বলছে, কর ধার্য থাকলেও ৭ লক্ষ পর্যন্ত আয়ে বেতনভোগীদের কোনও কর দিতে হবে না। বছরে ৯ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় হলে ৪৫ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। যা আগে ছিল ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, আগের তুলনায় কম ২৫ শতাংশ।
যে বেতনভোগীর বার্ষিক আয় ১৫ লক্ষ টাকা, তাঁকে দেড় লক্ষ টাকা কর দিতে হবে। আগে এই করের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা।
আগের আয়কর কাঠামো অনুযায়ী, ৫ লক্ষ পর্যন্ত আয়ে কোনও আয়কর দিতে হত না। এখন তা বেড়ে ৭ লক্ষ হয়েছে।
পাশাপাশি, ৯ থেকে ১২ লক্ষ এবং ১২ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ পর্যন্ত আয়েও কর কমেছে। সেই হিসাব বলছে নয়া আয়কর কাঠামোতে উপকারই হয়েছে মধ্যবিত্তের। কিন্তু তাতেও কেন অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে মধ্যবিত্তের মনে?
নয়া নিয়ম অনুযায়ী, কোনও বেতনভোগী মধ্যবিত্তের আয় ৭ লক্ষ পর্যন্ত হলে তাঁকে কোনও আয়কর দিতে হচ্ছে না। যদিও তাঁরা এর মধ্যেই জীবনবিমা এবং দীর্ঘমেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডের উপলব্ধ ছাড় পাবেন। কিন্তু সেই আয় ৭ লক্ষ ১ টাকা হলেও তাঁকে দ্বিস্তরীয় কর দিতে হবে।
অর্থাৎ, ৩ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষের হিসাবে ৫ শতাংশ অর্থাৎ, ১৫ হাজার টাকা এবং ৬ থেকে ৭ লক্ষের হিসাবে প্রায় ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ আয় ৭ লক্ষের থেকে এক টাকা বেশি হলেও সেখানে এক জন মধ্যবিত্তকে প্রায় ২৫ হাজার কর দিতে হচ্ছে।
আগের কর কাঠামোয় আয় ৫ লক্ষ টাকা পেরোলেই অর্থাৎ ৫ লক্ষ ১ টাকা হলে তাঁকে ৩ থেকে ৬ লক্ষের হিসাবে ৫ শতাংশ কর দিতে হত। পাশাপাশি বাড়ির ঋণ-সহ বিভিন্ন বিনিয়োগে মিলত ছাড়। কিন্তু নয়া আয়কর কাঠামোয় বিনিয়োগের জন্য আলাদা করে কোনও ছাড় মিলবে না।
অর্থাৎ, এক জন বেতনভোগী কোথায় কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন, তা নিয়ে সরকারের কোনও মাথাব্যথা থাকবে না। মোট আয় যত, তার উপরেই আয়কর দিতে হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগের জন্য আলাদা ভাবে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তরফে বেতনভোগীদের ইচ্ছামতো নতুন বা পুরনো আয়কর কাঠামো বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই হিসাবের মারপ্যাঁচই ভাবাচ্ছে মধ্যবিত্তকে। কোন আয়কর কাঠামো বেছে নিলে আর্থিক সুবিধা মিলবে তা ভেবেই হয়রান সাধারণ মানুষ।
এই বিষয়ে কী বলছেন বাজেট বিশেষজ্ঞরা? বাজেট বিশেষজ্ঞদের মতে, কারও আয় যদি ৭ লক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তা হলে তাঁদের নতুন কর কাঠামো বেছে নেওয়া উচিত। কিন্তু কারও আয় যদি ৭ লক্ষের বেশি হয় তা হলে পুরনো কর কাঠামো বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগের উপর ছাড়ের কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে।
এ বার ধরা যাক, কারও বর্তমান বেতন ৭ লক্ষের কম এবং আয়কর জমা দেওয়ার জন্য তিনি নতুন কর কাঠামো বেছে নিলেন। কিন্তু এমন হতেই পারে যে, কয়েক বছরের মধ্যে সেই বেতনভোগীর আয় ৭ লক্ষের বেশি হয়ে গেল। তখন তিনি আবার পুরনো কর কাঠামোয় ফিরবেন কী ভাবে?
সেই সুবিধাও দিয়েছে কেন্দ্র। কোনও আয়করদাতা চাইলেই প্রতি বছর আয়কর জমা দেওয়ার জন্য কাঠামোর পরিবর্তন করতেন পারেন। নিজেদের আর্থিক সুবিধার জন্য নতুন বা পুরনো কর কাঠামো বেছে নিতে পারেন।