ভারতীয় বায়ুসেনার পরবর্তী প্রধান হতে চলেছেন এয়ার মার্শাল অমরপ্রীত সিংহ। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন তিনি। এয়ার চিফ মার্শাল বিবেকরাম চৌধরির স্থলাভিষিক্ত হবেন তিনি।
এয়ার মার্শাল অমরপ্রীত দায়িত্ব নেওয়ার পর কর্মস্থলে এক হবেন তিন বন্ধু। বাকি দু’জন ভারতীয় সেনা ও ভারতীয় নৌবাহিনীর শীর্ষপদে রয়েছেন। অর্থাৎ তিন সহপাঠীর হাতে থাকবে তিন বাহিনীর দায়িত্ব।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের জেরে ফৌজের তিন বাহিনীর নেতৃত্বে উল্লেখ্যযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়েছে। গত পাঁচ মাসে আরও কাছাকাছি এসেছে স্থল, বায়ু ও নৌসেনা। যা যুদ্ধের সময়ে দ্রুত জয় পেতে সাহায্য করবে বলেই মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞেরা।
বর্তমানে ভারতীয় স্থলসেনার প্রধান হিসাবে দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি বা এনডিএতে এয়ার মার্শাল অমরপ্রীতের সহপাঠী ছিলেন তিনি। আবার নৌবাহিনীর প্রধান পদে রয়েছেন অ্যাডমিরাল দীনেশকুমার ত্রিপাঠী। মধ্যপ্রদেশের রেওয়ার সৈনিক স্কুলে জেনারেল দ্বিবেদীর সঙ্গে পড়তেন তিনি।
এয়ার মার্শাল অমরপ্রীত ও জেনারেল দ্বিবেদী এনডিএর ৬৫তম ব্যাচের ক্যাডেট ছিলেন। ১৯৮৩ সালে ঐতিহ্যবাহী ওই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করে বায়ু ও স্থল সেনায় যোগ দেন তাঁরা। এনডিএতে প্রশিক্ষণের সময়ে যুদ্ধের কৌশল সম্পর্কে দু’জনেরই চিন্তাভাবনা ছিল নজরকাড়া।
চলতি বছরের ৩১ জুলাই জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীকে সেনাপ্রধান হিসাবে নিযুক্ত করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। নর্দার্ন কম্যান্ডের দায়িত্বভার সামলাচ্ছিলেন তিনি। জেনারেল মনোজ পাণ্ডের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে ৩০ এপ্রিল নৌসেনা প্রধান হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন অ্যাডমিরাল দীনেশকুমার ত্রিপাঠী। তাঁর আগে এই পদে ছিলেন অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার। নৌবাহিনীর পশ্চিম কম্যান্ড ও নৌ অপারেশনের ডিরেক্টর জেনারেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘ দিন কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে অ্যাডমিরাল ত্রিপাঠীর।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বায়ুসেনার ৪৭তম সহকারী প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন অমরপ্রীত সিংহ। একটা সময়ে পূর্বাঞ্চলীয় এয়ার কম্যান্ডের সিনিয়র এয়ার স্টাফ অফিসার ছিলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, মিগ-২৭ স্কোয়াড্রনের কম্যান্ডিং অফিসার হিসাবেও কাজ করেছেন অমরপ্রীত। বায়ুসেনায় কর্মদক্ষতার জন্য পরম বিশিষ্ট সেবা পদক এবং অতি বিশিষ্ট সেবা পদক পেয়েছেন তিনি।
বায়ুসেনার নতুন প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিতে চলা এয়ার মার্শাল অমরপ্রীতের ছোটবেলা কেটেছে রাজধানী দিল্লিতে। সেখানকার এসবিএম স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। এনডিএতে ভর্তি হওয়ার পর জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, এনডিতে প্রশিক্ষণ চলাকালীন জেনারেল দ্বিবেদী ও এয়ার মার্শাল অমরপ্রীতের মধ্যে ছিল গলায় গলায় বন্ধুত্ব। খেলাধূলোর প্রতি দারুণ আকর্ষণ ছিল দু’জনের। স্কোয়াশে অমরপ্রীতের জুড়ি মেলা ছিল ভার। আর জেনারেল দ্বিবেদী এতটাই পারদর্শী ছিলেন যে, শারীরিক প্রশিক্ষণ বিভাগে ব্লু পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরেই চিন ও পাকিস্তানের কথা মাথায় রেখে বাহিনীতে পরিবর্তন শুরু করেছে কেন্দ্র। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহানের নেতৃত্বে তৈরি হচ্ছে থিয়েটার কম্যান্ড। এই অবস্থায় তিন বাহিনীর শীর্ষ পদাধিকারিকদের মধ্যে ছোটবেলা থেকে বন্ধুত্ব থাকায় বড় সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
ফৌজের তিন বাহিনীতে কিছু ক্ষেত্রে একই ধরনের রসদ ও গোলাবারুদ ব্যবহার হয়। এগুলি আগে আলাদা আলাদা ভাবে ব্যবহার করত স্থল-নৌ-বায়ুসেনা। এতে এক দিকে যেমন সরকারের খরচ বাড়ছিল, অন্য দিকে তেমনই প্রয়োজনের সময়ে সেগুলি হাতে পেতে বাহিনীর সমস্যা হচ্ছিল। থিয়েটার কম্যান্ড তৈরি হলে এই সমস্যা মিটে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এয়ার মার্শাল অমরপ্রীত সিংহ এমন একটি সময়ে বায়ুসেনার দায়িত্বভার নিচ্ছেন, যখন যুদ্ধবিমানের সমস্যায় ভুগছে ভারত। বর্তমানে বায়ুসেনার হাতে লড়াকু বিমানের ৩২টি স্কোয়াড্রন রয়েছে। কিন্তু এই সংখ্যা বেড়ে ৪২ স্কোয়াড্রন হওয়া দরকার করে মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।
এয়ার চিফ মার্শাল বিবেকরাম চৌধরী তেজস, সুখোই-৩০, রাফালের মতো যুদ্ধবিমানকে ভারতীয় বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্ত করিয়েছিলেন। সেই ধারা এয়ার মার্শাল অমরপ্রীত সিংহ এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি বোমারু বিমান কেনার দিকেও জোর দিতে পারেন তিনি।
ভারতীয় বায়ুসেনা দীর্ঘ দিন ধরেই রাশিয়ার তৈরি মিগ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে। প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ে এই যুদ্ধবিমান। ফলে মিগকে সরিয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস যুদ্ধবিমানের অন্তর্ভুক্তিতে জোর দিয়েছে বায়ুসেনা।
বিদেশি যুদ্ধবিমানের মধ্যে আমেরিকার তৈরি এফ ৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে চাইছে নয়াদিল্লি। যদিও এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। রাশিয়ার তরফে সুখোই ৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার খবরও রয়েছে।
বায়ুসেনা প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে বিদেশি ও দেশি যুদ্ধবিমানকে বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এয়ার মার্শাল অমরপ্রীত সিংহ। তিনি নিজেও একজন যুদ্ধবিমানচালক। ফলে তিনি যে নিখুঁত বিমান নির্বাচন করতে পারবেন তা বলাই বাহুল্য।
পাশাপাশি, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম জোরদার করার দিকে নজর দিতে পারেন এয়ার মার্শাল অমরপ্রীত। বর্তমানে বায়ুসেনার হাতে রাশিয়ার তৈরি এস ৪০০ ট্রায়াম্ফের মতো এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে।