২০২৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের প্রাথমিক নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টক্কর দিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতি। সেই সময় জল্পনা তৈরি হয়েছিল, এ বার কি ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট পেতে চলেছে আমেরিকা? পরে অবশ্য সেই দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত উদ্যোগপতি বিবেক রামস্বামী। রিপাবলিকান দলের প্রাথমিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিবেক রাজনৈতিক মহলে ট্রাম্প-বিরোধী হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। রিপাবলিকান দলের সমর্থকদের মধ্যে যাঁরা উচ্চশিক্ষিত, তাঁদের অধিকাংশের সমর্থন পেয়েছিলেন বিবেক।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রাথমিক লড়াইয়ে তাঁর সামনে কেবল ট্রাম্পই ছিলেন। প্রচারে গিয়ে এফবিআই, শিক্ষা দফতর, নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি কমিশনের অস্তিত্ব মুছে ফেলার কথা শোনা গিয়েছিল বিবেকের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলিকে মুছে ফেলতে আইনি রদবদল ঘটিয়ে প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতা প্রদানের পক্ষে সওয়ালও করেছিলেন।
তার পরেই দুই সতীর্থের সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে যায়। নিজেকে প্রেসিডেন্ট পদের লড়াই থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন বিবেক। ভোটের মরসুমে তাঁর হয়েই গলা ফাটিয়েছেন বিবেক।
ট্রাম্পের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগেনি বিবেকের। ট্রাম্পের মতো বিবেকও অভিবাসন নীতি নিয়ে কড়া মনোভাব স্পষ্ট করেছেন। অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে নমনীয়তা না দেখানো নিয়ে ট্রাম্পের সুরেই সুর চড়াতে দেখা গিয়েছে বিবেককে।
২০২০ পর্যন্ত নিজেকে অরাজনৈতিক বলে দাবি করা বিবেক ভাবী ট্রাম্প মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ নামে নতুন মন্ত্রকের দায়িত্বে ইলনের পাশাপাশি থাকছেন বিবেক। তাঁরা যৌথ ভাবে দায়িত্ব সামলাবেন।
নতুন মন্ত্রক খাতায়কলমে সরকারি হলেও এটি সরকারের বাইরে থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করবে। সেপ্টেম্বর মাসে এই মন্ত্রক তৈরির প্রস্তাব পেশ করেছিলেন স্বয়ং ট্রাম্প। যদিও সেটি কী ভাবে কাজ করবে, তা এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।
এক তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা বিবেকের বাবা-মা কেরলের পালাক্কাড় জেলা থেকে চলে আসেন আমেরিকার সিনসিনাটিতে। সেখানে ওহায়োয় ১৯৮৫ সালে জন্ম ও বেড়ে ওঠা তাঁর।
বিবেকের বাবা ভি গণপতি রামস্বামী পেশায় ই়ঞ্জিনিয়ার ও ‘পেটেন্ট অ্যাটর্নি’ হিসাবে কাজ করতেন। তাঁর মা গীতা রামস্বামী মহীশূরের মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে জেরিয়াট্রিক সাইকিয়াট্রিস্ট হিসাবে কাজ করতেন।
ছোটবেলায় রোমান ক্যাথলিক স্কুলে পড়াশোনা করেছেন বিবেক। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। এর পরে তিনি ইয়েল ল স্কুল থেকে ‘জুরিস ডক্টর’ ডিগ্রি লাভ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে নিজের একটি বায়োটেক সংস্থা খুলে ফেলেন বিবেক। রয়ভ্যান্ট সায়েন্সেস নামের এই সংস্থার সিইওর পদ থেকে ২০২১ সালে ইস্তফা দেন তিনি। একাধিক রোগের চিকিৎসার জন্য সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও এফডিএ অনুমোদিত পণ্য তৈরির ক্ষেত্রেও সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে ৩৯ বছর বয়সি এই উদ্যোগপতির ২০২৩ সালে মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল আট হাজার কোটি টাকার বেশি।
২০১৫ সালে তাঁর বিয়ে হয় অপূর্বা তিওয়ারির সঙ্গে। অপূর্বা পেশায় চিকিৎসক। একটি পার্টিতে তাঁদের আলাপ হয়। পরে প্রেম ও বিয়ে। তাঁদের দু’টি সম্তান রয়েছে।
২০২৩ সালে রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন বিবেক। প্রচারে গিয়ে হিন্দুত্ব নিয়ে মন্তব্যের জন্য বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি।
বিবেক জানিয়েছিলেন, তিনি কোনও বিশেষ ধর্মের প্রচার করতে চান না। ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য লড়াই করার কথাও জানিয়েছিলেন ট্রাম্পের প্রিয়পাত্র।
নিরামিষভোজী ৩৮ বছরের বিবেককে নিয়ে ভারতীয়দের মধ্যেও আগ্রহ রয়েছে। তরুণ উদ্যোগপতি হিসাবে তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে আমেরিকার বুকেও।