চলতি বছরের অগস্ট মাসে নেটফ্লিক্স ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেতে চলেছে টম হার্পার পরিচালিত ‘হার্ট অফ স্টোন’ নামের হলিউড ছবি। এই ছবিতে গ্যাল গ্যাডট, ডেভিড এলিসন, জেরন ভারসানোর মতো হলি তারকারা অভিনয় করেছেন। আলিয়া ভট্টকেও এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে। ছবির প্রথম ঝলক মুক্তির পরেই আলিয়া ভারতীয় দর্শকের নজর কেড়েছেন।
হলিউড ছবিতে অভিনয় করে যেন আলিয়ার কেরিয়ারের মুকুটে নতুন পালক যোগ হল। আলিয়ার আগেও হিন্দি ফিল্মজগতের একাধিক অভিনেত্রীকে হলিউডে পা রাখতে দেখা গিয়েছে।
‘ব্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’, ‘মিস্ট্রেস অফ স্পাইসেস’, ‘প্রোভোকড’, ‘দ্য লাস্ট লিজিয়ন’, ‘দ্য পিঙ্ক প্যান্থার ২’-এর মতো একাধিক ইংরেজি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনকে। ২০০৪ সালে হলিপাড়ায় অভিনয় শুরু করেছিলেন তিনি।
ঐশ্বর্যার পর ইংরেজি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় প্রিয়ঙ্কা চোপড়া জোনাসকে। ছবির পাশাপাশি একাধিক ওয়েব সিরিজ়েও অভিনয় করেছেন তিনি। মিউজ়িক ভিডিয়োতেও কাজ করেছেন প্রিয়ঙ্কা।
‘এক্সএক্সএক্স: রিটার্ন অফ জ়েন্ডার কেজ’ নামের হলিউড ছবিতে ভিন ডিজ়েলের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল দীপিকা পাড়ুকোনকে। বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, বলিপাড়ার অভিনেত্রীদের মধ্যে ঐশ্বর্যাই প্রথম যিনি ইংরেজি ছবিতে অভিনয় করেছেন।
তবে শুধুমাত্র ঐশ্বর্যা, প্রিয়ঙ্কা, দীপিকা, আলিয়াই নন, হিন্দি ফিল্মজগতে আরও এক অভিনেত্রী রয়েছেন যিনি হলিউডে পা রেখেছিলেন। এবং তিনি তা করেছিলেন ঐশ্বর্যারও আগে।
সত্তরের দশকের শেষের দিকে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘স্টার ট্রেক: দ্য মোশন পিকচার’। সেই ছবির লেফটেন্যান্ট ইলিয়াকে মনে পড়ে? তিনি আদতে হলিউডের অভিনেত্রী নন। ওই নায়িকার অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল বলিউডে।
১৯৪৮ সালে ২ অক্টোবর মুম্বইয়ের এক মধ্যবিত্ত পার্সি পরিবারে জন্ম পার্সিস খামবাত্তার। পার্সিসের দু’বছর বয়সে তাঁর বাবা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তার পর মায়ের কাছেই মানুষ হয়েছেন তিনি। শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল পার্সিসের।
১৩ বছর বয়স থেকে মডেলিং করতে শুরু করেন পার্সিস। এক জনপ্রিয় সাবানের সংস্থার প্রচারের জন্য ফোটোশুট করেন পার্সিস। মুম্বইয়ের এক আলোকচিত্রী ছবি তুলেছিলেন পার্সিসের। সেই ছবি নিয়ে সেই সময় মাতামাতি শুরু হয়ে যায়।
পার্সিসের যখন ১৬ বছর বয়স তখন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার পর বিভিন্ন নামী সংস্থার প্রচারের মুখ হয়ে ওঠেন পার্সিস। ১৯৬৮ সালে কে এ আব্বাস পরিচালিত ‘বাম্বাই রাত কি বাহোঁ মে’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
তার পর কেরিয়ার গড়তে হলিপাড়ায় পাড়ি দেন পার্সিস। ‘কন্ডাক্ট আনবিকামিং’, ‘দ্য উইলবি কন্সপিরেসি’র মতো ইংরেজি ছবিতে স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ১৯৭৯ সালে ‘স্টার ট্রেক: দ্য মোশন পিকচার’ ছবিতে লেফটেন্যান্ট ইলিয়ার চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
লেফটেন্যান্ট ইলিয়ার চরিত্রে দর্শক পার্সিসকে এতই পছন্দ করেছিলেন যে ছবি নির্মাতারা তাঁর সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তিতে সই করিয়ে নেন। ইলিয়ার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য মাথার সমস্ত চুল কামিয়ে ফেলেছিলেন পার্সিস।
‘নাইটহকস’, ‘মেগাফোর্স’, ‘ওয়ারিয়র অফ দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড’, ‘শি-উলভস অফ দ্য ওয়েস্টল্যান্ড’-এর মতো ছবিতে পার্সিসের অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
১৯৮৩ সালে জেমস বন্ডের ‘অক্টোপাসি’ ছবিতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পার্সিসকে প্রথমে পছন্দ করেছিলেন ছবি নির্মাতারা। তার পর মড অ্যাডামসকে ওই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
১৯৯৩ সালে ‘লুই অ্যান্ড ক্লার্ক: দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার্স অফ সুপারম্যান’ টেলিভিশন শোয়ে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় পার্সিসকে। তার পাঁচ বছর পর ‘নট অ্যা নাইস ম্যান টু নো’ টেলিভিশন শোয়ে অতিথিশিল্পী হিসাবে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
হলি অভিনেতা ক্লিফ টেলরকে প্রথমে বিয়ে করেন পার্সিস। কিন্তু তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ১৯৮৯ সালে রুই সালডানহা নামের হকি খেলোয়াড়কে বিয়ে করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ‘সামার অলিম্পিকস’-এ গ্রেট ব্রিটেন দলের হয়ে খেলেছিলেন রুই।
মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান করতেন পার্সিস। ১৯৯৮ সালে বুকে ব্যথার কারণে মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় অভিনেত্রীকে। ওই বছরের ১৮ অগস্ট ৪৯ বছর বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। মুম্বইয়েই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।