মীরপুরে বাংলাদেশকে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতে নিয়েছে ভারত। শ্রেয়স আইয়ার এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ব্যাট তাদের টেনে তুলেছে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখ থেকে।
বড়দিনে বাংলাদেশের এই হারে মুষড়ে পড়েছেন সে দেশের সমর্থকরা। এই নিয়ে ভারতের কাছে মোট ১১টি টেস্ট ম্যাচে হারল বাংলাদেশ।
২০০০ সাল থেকে ভারতের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের ম্যাচ খেলছে বাংলাদেশ। এখনও পর্যন্ত একটিতেও জয়ের মুখ দেখতে পায়নি তারা। বড়দিনে সেই সুযোগ হাতের কাছে পেয়েও হারাল শাকিব আল হাসানের দল।
মীরপুর টেস্টে প্রথমে টসে জিতে বাংলাদেশ ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২২৭ রানে সব ক’টি উইকেট পড়ে যায় তাদের। জবাবে ভারত করে ৩১৪ রান। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ২৩১ রানে। রবিবার ছিল মীরপুর টেস্টের চতুর্থ দিন। ১৪৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে সকালেই ম্যাচ জিতে নিয়েছেন শ্রেয়স, অশ্বিনরা।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের টেস্ট ম্যাচের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম বার টেস্ট খেলতে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-বাংলাদেশ। সে ম্যাচে ভারত জিতেছিল ৯ উইকেটে।
এর পর ২০০৪ সালে আবার টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে যায় ভারতীয় ক্রিকেট দল। ২ ম্যাচের সেই টেস্ট সিরিজ বড় ব্যবধানে জিতেছিল ভারত। প্রথম ম্যাচে এক ইনিংস এবং ১৪০ রানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। পরের ম্যাচটিতে তারা হারে ৮৩ রানে।
ভারত, বাংলাদেশ এর পর আবার ৫ দিনের ম্যাচে মুখোমুখি হয় ৩ বছর পর। ২০০৭ সালে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের ফল হয়েছিল ১-০। একটি ম্যাচ ড্র করতে পেরেছিল বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচে ড্র হলেও দ্বিতীয় ম্যাচ ২৩৯ রানের ব্যবধানে জিতে সিরিজ পকেটে পুরে নেয় রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত।
ভারত বনাম বাংলাদেশ পরবর্তী টেস্ট সিরিজ হয় ২০০৯ সালে। এ ক্ষেত্রেও মোট ২টি ৫ দিনের ম্যাচ খেলা হয়। প্রথম ম্যাচে ১১৩ রানে জেতে ভারত।
দ্বিতীয় ম্যাচেও বড় ব্যবধানে জয় পায় ভারত। ১০ উইকেটের সেই জয়ে ভারতকে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রায় খেলতেই হয়নি। বাংলাদেশের ২৩৩ এবং ৩১২ রানের জবাবে ভারত ৫৪৪ রান করে। দ্বিতীয় ইনিংসে ২ রান করেই জিতে নেয় ম্যাচ।
২০১৫ সালে একটি টেস্ট ম্যাচ খেলা হয় দুই দেশের মধ্যে। সেই ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৬২ রান তুলে ডিক্লেয়ার করে ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২৫৬ রানে বাংলাদেশ অল আউট হয়ে যায়। এর পর ফলো-অন খেলতে নেমেছিলেন মুশফিকুর রহিমরা। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ড্র হয়।
এর পর ২০১৭ সালে আরও একটি টেস্ট ম্যাচের আয়োজন করা হয় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে। সে ম্যাচেও জেতে বিরাট কোহলির ভারত।
২০৮ রানের সেই জয়ের নেপথ্যে ছিল বিরাটের দ্বিশতরান। এ ছাড়া, মুরলি বিজয় এবং ঋদ্ধিমান সাহাও সেঞ্চুরি করেছিলেন সেই ম্যাচে।
২০১৯ সালে আবার ২টি টেস্ট ম্যাচে মুখোমুখি হয় ভারত-বাংলাদেশ। আইসিসি আয়োজিত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সেই ম্যাচের একটিতেও দাগ কাটতে পারেননি মোমিনুল হকরা।
ইনদওরের প্রথম ম্যাচটিতে ভারত জেতে ১৩০ রানে। সে ম্যাচে একাই ২৪৩ রান করে চমকে দিয়েছিলেন ময়াঙ্ক আগরওয়াল।
ভারত বনাম বাংলাদেশের পরের ম্যাচটি হয়েছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে। ৪৬ রানে সেই ম্যাচ জেতে ভারত। অধিনায়ক বিরাটের ১৩৬ রানের ইনিংস ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রেখেছে।
২০১৯ এর পর ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ৫ দিনের ম্যাচ হল আবার ২০২২-এ। ২ ম্যাচের সিরিজ এ ক্ষেত্রেও পকেটে পুরে নিয়েছে লোকেশ রাহুলের দল।
মীরপুরের আগে ভারত-বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচটি হয় চট্টগ্রামে। প্রথমে ব্যাট করে ৪০৪ রান তোলে ভারত। জবাবে বাংলাদেশের সব উইকেট পড়ে যায় মাত্র ১৫০ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৮ রান করে ডিক্লেয়ার করে দেয় ভারত।
মোট ৫১৩ রানের পাহাড় তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ থামে ৩২৪ রানে। ১৮৮ রানে চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে নেয় ভারত। তার পর মীরপুরে দ্বিতীয় টেস্টেও এল জয়।
২০০০ সাল থেকে এই নিয়ে মোট ১৩টি টেস্ট খেলল ভারত-বাংলাদেশ। তার মধ্যে ভারত জিতেছে ১১টিতে। এখনও পর্যন্ত ২টি টেস্ট ম্যাচে ভারতকে জয়ের মুখ দেখতে দেয়নি বাংলাদেশ। তবে বার দুয়েক ভারতের জয় ঠেকালেও নিজেদের হার আটকাতে পারেননি শাকিবরা।