ভেনেজ়ুয়েলা থেকে আবার তেল আমদানি শুরু করছে ভারত। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ভারতকে এমনিতেই বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করতে হয়। তিন বছর বন্ধ থাকার পর দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি থেকে ফের তেল কেনা শুরু করতে চলেছে ভারত।
ভেনেজ়ুয়েলা থেকে ভারতের অশোধিত তেল কেনার রাস্তাটি অবশ্য প্রশস্ত করে দিয়েছে আমেরিকার একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। মূলত সেই সিদ্ধান্তের কারণেই ওই দেশ থেকে তেল আমদানি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল ভারত।
২০২০ সালের নভেম্বর মাসে শেষ বারের মতো ভেনেজ়ুয়েলার তেল এসেছিল ভারতে। তার পর দীর্ঘ তিন বছরের বিরতি। তেল কিনতে অন্য দেশগুলির মুখাপেক্ষী হতে হয়েছিল নয়াদিল্লিকে।
২০১৯ সালে ভারতে তেল রফতানির নিরিখে ভেনেজ়ুয়েলা পঞ্চম স্থানে ছিল। সেই সময় দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি থেকে এক কোটি ৬০ লক্ষ টন তেল আমদানি করা হত ভারতে।
কিন্তু কেন হঠাৎ ভেনেজ়ুয়েলা থেকে ভারত তেল আমদানি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়? ২০২০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজ়ুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পরিবেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন।
বিশ্বের তেল সরবরাহকারী দেশগুলির সংগঠন ওপেক-এর অন্যতম সদস্য ভেনেজ়ুয়েলার তেল রফতানির বিষয়ে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। অক্টোবর মাসে এই বিধিনিষেধই খানিক লাঘব করেছে জো বাইডেন প্রশাসন।
২০২৪ সালে ভেনেজ়ুয়েলায় সাধারণ নির্বাচন। তার আগে বিরোধীদের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ না করা, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া ইত্যাদি একাধিক শর্তে আপাতত নিষেধাজ্ঞা তুলেছে আমেরিকাও।
আমেরিকার তরফে বলা হয়েছে, আগামী ৬ মাস নিজেদের পছন্দমতো যে কোনও দেশকে তেল রফতানি করতে পারবে ভেনেজ়ুয়েলা। তেল রফতানির বিষয়ে কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন।
ভেনেজ়ুয়েলা থেকে তেল আমদানি শুরু হওয়ায় সবচেয়ে লাভবান হতে চলেছে দু’টি বেসরকারি সংস্থা— রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (আরআইএল) এবং নায়ারা এনার্জি (এনইএল)।
ওপেক-এর সদস্য দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় তেলের ভান্ডার রয়েছে ভেনেজ়ুয়েলাতেই। তাই জ্বালানি সঙ্কট মেটাতে এই দেশের উপর নজর কমবেশি সকল দেশেরই।
তবে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ যে, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শেষ তিন বছরে চিনের বেসরকারি তেল পরিশোধক সংস্থাগুলি ভেনেজ়ুয়েলা থেকে অশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রেখেছিল।
অন্য দিকে, অর্থনীতিকে সচল রাখতে চিনের সংস্থাগুলিকে বিশেষ ছাড় দিয়ে তেল সরবরাহ করে গিয়েছে ভেনেজ়ুয়েলাও। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত দু’সপ্তাহ ধরে ছাড়ের পরিমাণ কমাচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি।
কারণ ক্রমশ অশোধিত তেলের ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। শুধু ভারতই তিনটি ট্যাঙ্কার বোঝাই করে ভেনেজ়ুয়েলা থেকে তেল আমদানি করতে চলেছে। প্রতিটি ট্যাঙ্কারে ২৭০,০০০ টন তেল থাকবে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে তেল নিয়ে ভারতের বন্দরে ভিড়বে জাহাজগুলি।
ভেনেজ়ুয়েলা থেকে তেল কেনার বিষয়টি কিছু দিন আগেই প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারী দেশ হিসাবে ভারত নানা দেশের কাছ থেকে তেল কেনে। দেশের মধ্যে অন্তত ৮৫ শতাংশ জ্বালানি সঙ্কট মেটাতে ভরসা এই রফতানি করা তেলই।
ভারত অবশ্য তেল আমদানির ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরেই ‘জাতীয় স্বার্থ’কে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলছে। বিশ্ব রাজনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতেও এ ব্যাপারে ভারত নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থেকেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে আমেরিকা যখন মস্কোর কাছ থেকে তেল কেনার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেই সময়েও তুলনায় বেশি ছাড়ে অশোধিত তেল আমদানি করা অব্যাহত রেখেছে নয়াদিল্লি। এ বার তেল আমদানির জন্য ‘পুরনো বন্ধু’ ভেনেজ়ুয়েলাও সহায় হল ভারতের।