রুশ হামলার মোকাবিলায় চলতি বছরের গোড়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির বাহিনীর হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছিল আমেরিকা। ‘স্ট্রাইকার’ নামের সেই সাঁজোয়া গাড়ি এ বার ভারতীয় সেনাকে দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে ওয়াশিংটন থেকে।
সামরিক পরিভাষায় ‘ইনফ্রান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকল’ নামে পরিচিত এই অস্ত্রসজ্জিত সাঁজোয়া গাড়ি মূলত গোলা, বোমা, ল্যান্ডমাইন এড়িয়ে নিরাপদে যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাদের পাঠাতে কাজে লাগে। পাশাপাশি, ট্যাঙ্ক বাহিনীর সহযোগী হয়ে শত্রুর উপর প্রতিআক্রমণেও এই সাঁজোয়া যান দক্ষ।
প্রতিরক্ষা সচিব গিরিধর আরমানে জানিয়েছেন, শুধু রফতানি নয়, ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘স্ট্রাইকার’ নির্মাণেও আগ্রহ দেখিয়েছে আমেরিকা। সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনের বৈঠকে এ বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।
আমেরিকার সংস্থা ‘জেনারেল ডায়নামিক্স ল্যান্ড সিস্টেমস’-এর তৈরি এই সাঁজোয়া গাড়িয়ে অস্ত্রসম্ভারের মধ্যে রয়েছে ১২.৭ মিলিমিটার ব্রাউনিং মেশিনগান এবং এমকে৪৪ বুশমাস্টার ৩০ মিলিমিটার মেশিনগান সম্বলিত ‘প্রিডেটর রিমোট ওয়েপন সিস্টেম’।
এমকে১৯ গ্রেনেড লঞ্চার, ৭.৬২ মিলিমিটারের এম২৪০ হালকা মেশিনগান এবং এম৬৮এ২ কামানও রয়েছে স্ট্রাইকার সাঁজোয়া গাড়িতে। ১০৫ মিলিমিটারের এম৬৮ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পাল্লা পর্যন্ত শত্রুসেনার উপর প্রাণঘাতী হামলা চালাতে পারে।
‘স্ট্রাইকার’-এর নয়া সংস্করণে রয়েছে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও। প্রতিরক্ষা সচিব আরমানে জানিয়েছেন, স্বল্প এবং মাঝারি পাল্লার ‘ভূমি থেকে আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাঁজোয়া গাড়ির প্রতিই বেশি আগ্রহ রয়েছে নয়াদিল্লির।
দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যাতায়াতে সক্ষম আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা-যুক্ত ‘স্ট্রাইকার’ হাতে পেলে ভারতীয় সেনার পক্ষে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি)-য় পাক ও চিনা ফৌজের সম্ভাব্য ড্রোন ও বিমানহানার মোকাবিলা সহজ হয়ে যাবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, লাদাখের এলএসি লাগোয়া পার্বত্য এলাকায় ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকটি সাঁজোয়া গাড়ি মোতায়েন করা হয়েছে। ইউক্রেনের বরফঢাকা যুদ্ধক্ষেত্রের মতোই লাদাখেও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে ওই ‘ইনফ্রান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকল’গুলি।
যৌথ উদ্যোগে ‘স্ট্রাইকার’ নির্মাণের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিআরডিও (ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন)-র সহযোগী হিসাবে ভারত ফোর্জ এবং ‘টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস’-এর নামও আলোচনায় রয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই দুই সংস্থা ভারতীয় সেনার সহযোগী।
ভারতীয় সেনার হাতে বর্তমানে কয়েক ধরনের সাঁজোয়া গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার রুশ ‘বিএমপি-২ সারথ’। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ যৌথ উদ্যোগে তেলঙ্গানার মেডক অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিতে তৈরি। বাকিগুলি আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আনা।
৩০ মিলিমিটারের শিপুনভ ২এ৪২ অটোক্যানন এবং ৯এম১১৩ কোনকুর্স ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৭.৬২ মিলিমিটারের হালকা মেশিনগান থাকলেও বিএমপি-২ সাঁজোয়া গাড়িতে শত্রুকে প্রত্যাঘাতের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র নেই বলে সেনা সূত্রের খবর।
এ ছাড়া ভারতীয় সেনার হাতে রয়েছে দেশে তৈরি ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ‘নাগ’ বহনকারী ‘নামিকা’ সাঁজোয়া গাড়ি। যা ‘নামিস’ নামেও পরিচিত। ‘বিএমপি-২ সারথ’-এই ইঞ্জিনই ব্যবহার করা হয় মেডক অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিতে তৈরি ‘নামিকা’ সাঁজোয়া গাড়িতে।
নাগ ক্ষেপণাস্ত্রের আধুনিক সংস্করণ ‘সন্ত’ প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে শত্রুর ট্যাঙ্কের উপর নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে পারে। যদিও নাগ-বাহী সাঁজায়ো গাড়ি মূলত সমতল এলাকায় যুদ্ধের উপযোগী। এতে আকাশ প্রতিরক্ষার সুবিধাও নেই।
রুশ বিএমপি ইঞ্জিনের উপর ভিত্তি করে ডিআরডিও এবং ‘টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস’ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে সাঁজোয়া গাড়ি ‘কেস্ট্রেল’। ২০১৭ সালে ভারতীয় সেনায় ঠাঁই পেয়েছে ৩০ মিলিমিটারের অটোক্যানন এবং হালকা মেশিনগানযুক্ত ‘কেস্ট্রেল’।
বিএমপি-২-এক আর এক দেশীয় সংস্করণ ‘মোটর ট্র্যাকড ক্যারিয়র’ ট্যাঙ্কের মতোই চাকার বদলে ‘ট্র্যাকড চেইন’ নির্ভর। ফলে দুর্গম এলাকায় যাতায়াতের উপযোগী। কিন্তু মূলত সেনা পরিবহণের উপযোগী এই ‘আর্মড পার্সোলেন ক্যারিয়র’-এ উপযুক্ত অস্ত্রশস্ত্র নেই।