অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান। গত কয়েক বছর ধরে এই দেশের রাজনীতি নানা পালাবদলের সাক্ষী থেকেছে। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতার অভাবই দেশটিকে সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
পাকিস্তানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এক লিটার দুধ বিকোচ্ছে ২১০ টাকায়। আটা, ময়দাও মহার্ঘ। প্রায় প্রতি দিনই অন্তত ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে বৃদ্ধি পাচ্ছে খাদ্যপণ্যের দাম।
ভারত এবং পাকিস্তান, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ ৭৫ বছরের বৈরিতা। আন্তর্জাতিক স্তরেও যা নিয়ে চর্চা চলতেই থাকে। শুধু খেলার মাঠে নয়, বহু বিতর্কও এই দুই প্রতিবেশী দেশকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে নামিয়েছে বার বার।
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ঘোষিত কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও একাধিক বিষয়ে একে অপরকে টক্কর দেয় দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী। অর্থনীতির মাপকাঠি বিচার করলে দেখা যায়, বেশ কিছু বিষয়ে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে ভারত।
পাকিস্তানি মুদ্রার দাম ভারতীয় মুদ্রার দামের চেয়ে অনেকটাই কম। বর্তমানে ভারতীয় মুদ্রায় ১ টাকা, পাকিস্তানি মুদ্রায় ৩.২১ টাকার সমান। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের মুদ্রার দাম আরও কমে গিয়েছে। কিছু দিন আগে পর্যন্তও ভারতের ১ টাকা ছিল পাকিস্তানের দেড় টাকার সমান।
মঙ্গলবারের পরিসংখ্যান বলছে, ১ আমেরিকান ডলারের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় মুদ্রার মূল্য ৮২.৭৭ টাকা। অন্য দিকে, ডলারের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের মুদ্রার মূল্য ২৬৫.৬৬ টাকা।
সঙ্কটের মুখে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার ক্রমশ কমে আসছে। রফতানিতেও মন্দা। এমনকি, প্রবাসী পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অর্থসাহায্যও তলানিতে ঠেকেছে। যে কারণে সে দেশের মুদ্রার দাম দিন দিন বাড়ছে।
ভারত এবং পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারের তুলনা করলে দেখা যায়, এ ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে ভারত। বর্তমানে ভারতে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রার মূল্য ৫৭ হাজার ৫২৭ কোটি ডলার।
পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার সম্প্রতি বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। গত সপ্তাহের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সে দেশে গচ্ছিত বিদেশি মুদ্রার মূল্য মাত্র ৩০০ কোটি ডলার। শেষ ৯ বছরে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার কখনও এত কম হয়নি।
জিডিপির তুল্যমূল্য বিচারে এগিয়ে ভারত। ভারতের জিডিপি মূল্য ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি ডলার। অন্য দিকে, পাকিস্তানের জিডিপি মূল্য বর্তমানে ৩৫০ কোটি ডলার।
ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। সম্প্রতি ব্রিটেনকেও ছাপিয়ে গিয়েছে ভারত। অর্থনীতিতে বর্তমানে ভারতের সামনে রয়েছে আমেরিকা, চিন, জাপান এবং জার্মানি।
অর্থনীতির এই র্যাঙ্কিংয়ে অনেক নীচে রয়েছে পাকিস্তানের নাম। তালিকায় পাকিস্তান ৪২তম দেশ। আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থসাহায্য না মিললে দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন, মত বিশেষজ্ঞদের।
শুধু অর্থনীতি নয়, সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও পাকিস্তান ভারতের চেয়ে পিছিয়ে। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাকিস্তানে স্বাক্ষরতার হার ৫৮ শতাংশ। ভারতে এই হার ২০২১ সাল পর্যন্ত ছিল ৭৪ শতাংশ।
২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে জনসংখ্যা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছেছে ৯৯ শতাংশ মানুষের কাছে। পাকিস্তানে এই হার ৭৫.৪ শতাংশ। বাকিদের ঘরে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারেনি পাকিস্তান সরকার।
ভারতের চেয়ে পাকিস্তান সামরিক ক্ষেত্রে অনেক বেশি টাকা বরাদ্দ করে। তাদের খরচও সেই অনুযায়ী বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামরিক খাতে পাকিস্তানের ব্যয় দেশের অন্য চাহিদাগুলিকে প্রভাবিত করে।
১৯৪৭ সালের পর থেকে এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন ২০ জন রাজনীতিক। স্বাধীন ভারতে প্রধানমন্ত্রীর সংখ্যা ১৪। একই ভাবে, ভারতে স্বাধীনতার পর থেকে ১৫ জন রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হয়েছেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির সংখ্যা ১৩।
এখনও পর্যন্ত ভারতের ৮ জন প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কুর্সিতে মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছেন। পাকিস্তানে এক জনও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে বরাবর টালমাটাল, তা এই পরিসংখ্যান থেকেই পরিষ্কার।