কথায় আছে কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়। ইউপিএসসি পরীক্ষার কৃতী পরীক্ষার্থী পরী বিষ্ণোইকেও অনেক কিছু ছাড়তে হয়েছিল।
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ইউপিএসসির অন্যতম শীর্ষ স্থানাধিকারী পরী। এখন দেশের আমলা। তবে এই উচ্চতায় পৌঁছতে তিনি এক সময় প্রা।য় সন্ন্যাসিনীর জীবন কাটিয়েছেন!
রাজস্থানের কন্যা। বিকানেরের কাকরা গ্রামে জন্ম। তিন বারের চেষ্টায় ইউপিএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন পরী। তবে তৃতীয়বারে দেশের লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ নম্বরে ছিল তাঁর নাম।
কী ভাবে এসেছিল এই সাফল্য? ছোট থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী পরী। দারুণ মেধাবী ছিলেন তা নয়। তবে পরিশ্রমী ছিলেন।
পরীক্ষার সময় নাওয়া-খাওয়া ভুলে পড়ায় ডুবে থাকতেন পরী। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তাঁর মা।
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের কন্যা। বাবা মনিরাম বিষ্ণোই ছিলেন পেশাদার আইনজীবী। মা সুশীল বিষ্ণোই জিআরপি-র কর্মী। কিন্তু পরী বাবা বা মায়ের পেশা বেছে নেওয়ার কথা ভাবেননি কখনও।
একটু বড় হতেই পরী ঠিক করেন, তিনি দেশের প্রশাসনের কাজ করতে চান। আমলা হয়ে ওঠার প্রস্তুতিও শুরু করেন পরী।
আজমেঢ়ের সেন্ট মেরি কনভেন্টে পড়াশোনা। পরে দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ কলেজ থেকে স্নাতক হন। স্নাতকোত্তর পর্বের পড়াশোনা করতে আজমেঢ়েই ফিরে যান পরী। পড়াশোনা করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে।
তখন থেকেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছিলেন পরী। আজমেঢ়ের এমডিএস বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে নেট-জেআরএফ পরীক্ষা দেন। পাশও করেন। কিন্তু পরীর লক্ষ্য তখন ইউপিএসসি।
শুরু হয় কঠিন পরিশ্রম। পরীর মা সুশীলা জানিয়েছেন, প্রথমবার পরীক্ষার ফল আশানুরূপ না হওয়ায় কিছুটা ভেঙে পড়েছিলেন পরী। তবু হল ছাড়েননি।
পরের বার দ্বিগুণ পরিশ্রম করেন। ইউপিএসসির মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নেন যাঁরা তাঁরা অনেকেই চাপ কমাতে পড়ার ফাঁকে সমাজমাধ্যমে বিচরণ করেন। পরী সমাজমাধ্যম থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিয়েছিলেন। এমনকি, মোবাইল ছুঁয়েও দেখেননি প্রস্তুতির কয়েক বছর।
পরীর মা সুশীলা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বারেও ইউপিএসসি পরীক্ষার ফল ভাল না হওয়ায় পরী একরকম সন্ন্যাসজীবন যাপন শুরু করেন!
একটি ঘরে নিজেকে প্রায় বন্দি করে ফেলেছিলেন পরী। বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে শুরু হয়েছিল আইএএস হওয়ার সাধনা। অবশেষে সাফল্য আসে।
২০২০ সালে দেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানাধিকারী হয়ে ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন পরী। গোটা দেশে তাঁর স্থান ছিল ৩০তম।
এখন পরী আইএএস কর্তা। সম্প্রতি আইএএস প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করে দায়িত্ব পেয়েছেন। আপাতত সিকিমের গ্যাংটকে প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি।
দিন কয়েক আগে ইনস্টাগ্রামে তাঁর পোস্ট করা একটি ছবি ভাইরাল হয়। ছবিটিতে দেখা গিয়েছে, পরী একটি প্রশাসনিক দফতরের ডেস্কে বসে রয়েছেন। পিছনের বোর্ডে লেখা কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক। দু’দিকে ভারতের জাতীয় পতাকা। দেওয়ালের এক দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, অন্য দিকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মুর। পরী ছবির বিবরণে লিখেছেন, ‘‘আমার কাজের প্রথম দিন।’’
এককালে পড়াশোনার জন্য সমাজমাধ্যমকে দূরে সরিয়ে রাখা পরী এখন ইনস্টাগ্রামেও জনপ্রিয়। সেখানে লক্ষাধিক অনুগামী রয়েছে তাঁর।