এক সময় তাঁর মাসিক বেতন ছিল ৬০০ টাকা। তার পর পরিশ্রম আর নিজের লক্ষ্যপূরণ করে তৈরি করেন ৩২ হাজার কোটি টাকার সংস্থা। তিনি অজয় চৌধরি। তাঁর আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি ‘ভারতের হার্ডঅয়্যারের জনক’।
দেশভাগের সময় অজয়ের বাবা-মা পাকিস্তান খেকে এ দেশে আসেন। সেই সময় দিল্লিতে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল অজয়ের পরিবার।
পরে কর্মসূত্রে মাউন্ট আবুতে যান অজয়ের বাবা। ১৯৫০ সালের ২৯ অগস্ট সেখানে জন্ম অজয়ের। তিনিই ছিলেন পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য।
১৯৫৫ সালে আইএএস অফিসার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন অজয়ের বাবা। জব্বলপুরে পড়াশোনার পাঠ শেষ করেন অজয়। জব্বলপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন তিনি।
১৯৭২ সালে কর্মজীবন শুরু অজয়ের। সেই বছর একটি সংস্থায় সেলসে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজে যোগ দেন।
ওই সংস্থায় শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজের সময় তাঁর বেতন ছিল মাসে ৬০০ টাকা। বেশি দিন ওই সংস্থায় কাজ করেননি অজয়। কাজ করেছেন তিন বছর।
তার পরই তৈরি করেন নিজের সংস্থা ‘মাইক্রোকম’। সেই সংস্থার হাত ধরে ধীরে ধীরে লক্ষ্মীলাভ হয় অজয়ের।
পরে ওই সংস্থার নাম বদল করে রাখা হয় ‘এইচসিএল’। তবে অজয় একা নন। ওই সংস্থার আরও পাঁচ জন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অর্জুন মলহোত্রা, শিব নাদার, ডিএস পুরি, সুভাষ অরোরারা।
মাত্র ১.৮ লক্ষ টাকায় শুরু হয়েছিল ওই সংস্থা। বর্তমানে ওই সংস্থার বাজারমূল্য ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে ওই সংস্থা।
সংস্থার যাত্রাপথের শুরুতে দক্ষিণ ভারতে সেলসের দিকটি দেখভাল করতেন অজয়। ওই সংস্থা শুরুর পর থেকে তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯৯৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থার চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্বভার সামলেছেন অজয়।
ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১১ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয় অজয়কে। এ ছাড়াও পেয়েছেন একাধিক সম্মান।
বর্তমানে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফাউন্ডারি অ্যান্ড ফর্জ টেকনোলজি (এনআইএফএফটি)-র চেয়ারম্যান বোর্ড অফ গভর্নর্স পদে রয়েছেন তিনি।
২০২৩ সালে নিজের জীবনকাহিনি নিয়ে একটি বই লিখেছেন অজয়। বইয়ের নাম ‘জাস্ট অ্যাসপায়ার’। নিজের জীবন, ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি, হার্ডওয়্যারের কথাও তুলে ধরেছেন ওই বইয়ে।
১৯৭৭ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন অজয়। তাঁর দুই সন্তান রয়েছে, কুণাল এবং অক্ষয়। ৬০০ টাকা দিয়ে রোজগার শুরু করেছিলেন অজয়। তার পর তৈরি করেন এমন এক সংস্থা, যার বাজারমূল্য ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তাঁর সাফল্যের এই কাহিনি অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা।