হোটেল লবিতে ছিল বিশাল অ্যাকোয়ারিয়াম। ছিল বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন অঞ্চলের রকমারি মাছ। হঠাৎই ভেঙে খানখান সেটি। হোটেলের মেঝে ভেসে গেল জলে। সেই জল ধুইয়ে নিয়ে গেল আসবাবপত্র। চূর্ণবিচূর্ণ জিনিসপত্র। গড়িয়ে গেল মাছের পর মাছ। আহত হলেন মানুষজন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, বার্লিনের রেডিসন ব্লু হোটেলের একটি ভবনের ভেতর অ্যাকোয়ারিয়ামটি সংরক্ষিত ছিল। এর পাশেই ছিল একাধিক ক্যাফে। অ্যাকোয়ারিয়ামটি ফেটে যাওয়ার পর জলে ভেসে যায় আশপাশের জায়গা। এ ছাড়া ভবনের ভেতর কাচের টুকরো ও অন্যান্য আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে।
বিশ্বের বৃহত্তম ‘সিলিন্ড্রিক্যাল অ্যাকোয়ারিয়াম’ এটি। অন্তত ১০০ রকম বিরল প্রজাতির মাছ থাকত এখানে। কোন কোন জায়গা থেকে যে সে সব আনা হত!
শুক্রবার জার্মানির রাজধানী শহর বার্লিনের নামী হোটেলে থাকা সেই অ্যাকোয়ারিয়াম ভেঙে জল গড়িয়ে গেল রাস্তায়। অ্যাকোয়ারিমের ‘বাসিন্দা’ মাছও ছড়িয়ে পড়ল শহরের রাজপথে। সব মিলিয়ে প্রায় ১,৬০০ প্রজাতির মাছ মারা গিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
কিন্তু ১৬ ফুটের এই অ্যাকোয়ারিয়াম কী ভাবে ভেঙে খানখান হয়ে গেল, তা নিয়ে সবাই বিস্মিত। অ্যাকোয়ারিয়ামে জল ছিল ১০ লক্ষ লিটারেরও বেশি। অ্যাকোয়ারিয়াম ভেঙে যাওয়ায় ভেসে গিয়েছে রঙিন সব মাছ! কী ভাবে এই কাণ্ড হল, জানেন না হোটেল কর্তৃপক্ষ।
অ্যাকোয়ারিয়াম ভেঙে যাওয়ার এই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। এই প্রতিবেদন লেখার সময় বার্লিনের দমকল বিভাগের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অ্যাকোয়ারিয়ামটি পুরোপুরি অকেজো হয়ে গিয়েছে। জলে ভেসে যাচ্ছে চারদিক।
বার্লিন পুলিশ জানিয়েছে, বিখ্যাত এই অ্যাকোয়ারিয়ামের তো ক্ষতি হয়েইছে, মারা গিয়েছে অ্যাকোয়ারিমের সব বাসিন্দা। তা ছাড়া এই অ্যাকোয়ারিয়াম ভেঙে কাচের টুকরোয় গুরুতর আহত হয়েছেন দুই পথচারী। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
অ্যাকোয়ারিয়ামের হাজার হাজার গ্যালন মাছভর্তি জলে কার্যত প্লাবিত হোটেলের আশপাশের রাস্তা। হুড়োহুড়ি পড়ে যায় রাস্তায়।
অ্যাকোয়ারিয়াম ভেঙে পড়ায় অসুবিধায় হোটেলে আসা অতিথিরাও। জলে ভাসছে পুরো হোটেল। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ অতিথিকে ওই হোটেল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের কাছাকাছি অন্য একটি হোটেলে জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
বিখ্যাত ‘বার্লিন সি লাইফ’ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না আপাতত। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকে মর্মাহত। হোটেল কর্তৃপক্ষ এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দিয়েছেন। বলা হয়েছে, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত হোটেল এখন বন্ধ থাকছে।’’
কী ভাবে যে ভেঙে পড়ল এই বিশাল অ্যাকোয়ারিয়াম, তা নিয়ে সকলেই ধন্দে। শহরের মেয়র বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস সকালে এই দুর্ঘটনা হয়েছে। না হলে হতাহত হতে পারতেন অনেকে। কারণ, জল আটকে রাখা যাচ্ছিল না। এ যেন সুনামি!’’
তিনি এ-ও জানান, ভাগ্য ভাল যে, এর চেয়ে বড় কোনও বিপদ ঘটেনি। দিনের অন্য কোনও সময়ে হলে সে আশঙ্কা থেকেই যেত।
তবে জলের স্রোতে হোটেলের আসবাবপত্র তছনছ হয়ে গিয়েছে। ভেসে গিয়েছে বেশ কিছু শৌখিন জিনিসপত্র। সে সব এখন গুছিয়ে রাখতে কাজে নেমেছেন কর্তৃপক্ষ।
অন্য দিকে, ৪০০-৫০০ মতো ছোট মাছকে আর একটি অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখা হয়েছে। তবে তারাও বাঁচবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ কর্তৃপক্ষের।
২০১৯ সাল থেকে এই অ্যাকোয়ারিয়াম-দর্শন বন্ধ ছিল। সংস্কারের কাজ হচ্ছিল ৩ বছরের বেশি সময় ধরে। কিন্তু ১৮ মাস পর অ্যাকোয়ারিয়াম খুলতেই বিপত্তি। সব ভেসে গেল। বিপুল ক্ষতির মুখে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ।
ঠিক কী কারণে এই অ্যাকোরিয়াম ভাঙল, তা জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ১০ ডিগ্রির নীচে নেমে যাওয়ার কারণে এতে ফাটল ধরে। তার পরই বিপত্তি।