হিন্দি ফিল্মজগতে পা রেখেছিলেন রাকেশ রোশনের পুত্রের হাত ধরে। কেরিয়ারের প্রথম হিন্দি ছবি হৃতিক রোশনের সঙ্গে। কিন্তু বক্স অফিসে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয় সে ছবি। ছবি ফ্লপ হলেও সহ-অভিনেতার সংসারে চিড় ধরার নেপথ্যে নাকি ছিলেন মেক্সিকান অভিনেত্রী বারবারা মোরি। বলিপাড়া থেকে সরে গিয়ে এখন কী করছেন তিনি?
২০১০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় অনুরাগ বসু পরিচালিত ‘কাইটস’ ছবিটি। এই ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন রাকেশ। ‘কাইটস’ ছবিতে হৃতিকের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পান বারবারা। তা ছাড়াও কবীর বেদী এবং কঙ্গনা রানাউতের মতো বলি তারকাদের এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়।
৮২ কোটি টাকা বাজেটে তৈরি ‘কাইটস’ ছবিটি মুক্তির পর বক্স অফিস থেকে ৪৮ কোটি টাকা আয় করে। প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকার লোকসান করে এই ছবি। বলিপাড়া সূত্রে খবর, হৃতিকের কেরিয়ারের সবচেয়ে ফ্লপ ছবি এটি।
বারবারার কেরিয়ারের প্রথম হিন্দি ছবি ‘কাইটস’। প্রথম ছবি ব্যবসা করতে ব্যর্থ হলে তার প্রভাব পড়ে অভিনেত্রীর কর্মজীবনে। কোনও হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি।
‘কাইটস’ ছবি ব্যর্থ হওয়ার পর বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, বারবারার সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন হৃতিক। হৃতিক এবং বারবারার সম্পর্কের কথা জানতে পেরে নাকি হৃতিকের স্ত্রী (বর্তমানে প্রাক্তন) সুজ়ান তাঁর দুই পুত্রকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘কাইটস’ ছবির শুটিং চলাকালীন নাকি বারবারাকে দু’কোটি টাকা মূল্যের একটি ভ্যানিটি ভ্যান উপহার দিয়েছিলেন হৃতিক। সেই বিলাসবহুল গাড়িতে স্নানঘরের পাশাপাশি আরাম করার আলাদা জায়গা ছিল। পোশাক রাখার জায়গা থেকে শুরু করে ছিল রান্নার ব্যবস্থাও।
বারবারার সঙ্গে হৃতিকের সম্পর্ক নিয়ে অভিনেতাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘বারবারা আমার খুব ভাল বন্ধু। ছবির শুটিং করতে নিজের দেশ ছেড়ে ভারতে এসেছে ও। নিজের বাড়িকে যেন মিস্ না করে, তাই এই উপহার দিয়েছি আমি।’’
হিন্দি ফিল্মজগৎ থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব না পাওয়ায় বলিপাড়া থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বারবারা। আবার নিজের দেশে ফিরে যান মেক্সিকান অভিনেত্রী।
বলিউড থেকে সরে যাওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বারবারা। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানা যায়, স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা পড়ার কারণে দ্রুত চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ সুস্থও হয়ে যান তিনি।
বর্তমানে মেক্সিকোয় রয়েছেন বারবারা। সেখানকার ছবিতেই অভিনয় করছেন। ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পার্দিদোস এন লা নোচে’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
অভিনয়ের পাশাপাশি ক্যানসার রোগ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতেও দেখা যায় বারবারাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হলে তার কী ভাবে নিরাময় সম্ভব, তা নিয়ে মহিলাদের সচেতন করেন তিনি।
১৯৭৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি উরুগুয়ের মন্টেভিডিয়ো এলাকায় জন্ম বারবারার। তাঁর আসল নাম বারবারা মোরি ওচোয়া। দুই ভাইবোন এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
বারবারার যখন মাত্র তিন বছর বয়স, তখন তাঁর বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। পড়াশোনার পাশাপাশি রোজগারের জন্য রেস্তরাঁয় খাবার পরিবেশন করতেন তিনি। সেই সময় বারবারার উপর নজর পড়ে এক খ্যাতনামী পোশাকশিল্পীর। তিনি মডেলিংয়ের প্রস্তাব দেন বারবারাকে।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে মডেলিং শুরু করেন বারবারা। মডেলিংয়ের দুনিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ধীরে ধীরে মেক্সিকোর ছোট পর্দায় নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন তিনি।
১৯৯৬ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে অভিনেতা সার্জিয়ো মায়েরের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন বারবারা। বিয়ের দু’বছর পর এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই সার্জিয়োর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় অভিনেত্রীর।
২০০১ সালে বড় পর্দায় অভিনয়ের প্রথম সুযোগ পান বারবারা। টেলিভিশনের পাশাপাশি বড় পর্দাতেও অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে বারবারার পুত্রের এক কন্যাসন্তান হয়। ৩৮ বছর বয়সেই ঠাকুরমা হয়ে যান অভিনেত্রী।
২০১৬ সালে কেনেথ রে সিগমনের সঙ্গে বিয়ে হয় বারবারার। পেশায় বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন কেনেথ। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই কেনেথের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় বারবারার।
মেক্সিকোয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালান বারবারা। সমাজমাধ্যমে তেমন সক্রিয় নন তিনি। তবে ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগী সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে অনুরাগীর সংখ্যা ২৭ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে হৃতিকের সহ-অভিনেত্রীর।